শেষ আপডেট: 6th March 2024 16:02
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সেকেন্ডে ১২ কিলোগ্রাম অক্সিজেন তৈরি হয়। সূর্য থেকে ছিটকে আসা তড়িদাহত কণা বরফে মোড়া গ্রহকেও উষ্ণ রাখে। স্তরে স্তরে জমে থাকা বরফের নীচ দিয়ে বয়ে যায় অতলান্ত সাগর। এই সাগরের জলও উষ্ণ। সব মিলিয়েই প্রাণ থাকার সম্ভাবনা দিনে দিনে বাড়ছে বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপায়। নাসার জুনো মিশন দেখিয়েছে, সারাদিনে টন টন অক্সিজেন তৈরি করছে ইউরোপা। একদিনে ১০ লক্ষ বা তার বেশি মানুষকে শ্বাসের অক্সিজেন দিতে পারবে এই উপগ্রহ।
‘নেচার অ্যাস্ট্রোনমি’ জার্নালে বিজ্ঞানীরা লিখেছেন, প্রতি সেকেন্ডে ১২ কিলোগ্রাম বা তার বেশি অক্সিজেন তৈরি হয় ইউরোপায়। সূর্য থেকে ছিটকে আসা তড়িদাহত কণায় হাইড্রডেন ও অক্সিজেন অনুর ভাঙাগড়ার খেলা চলে। তাই ইউরোপায় যেমন জলের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে, তেমনই বাতাসে আছে অক্সিজেন। বিজ্ঞানীদের অনুমান, ২৪ ঘণ্টায় ১০০০ টন বা তার বেশি অক্সিজেন তৈরি হয় ইউরোপায়। অর্থাৎ একটা গোটা দিনে ১০ লক্ষ বা তার বেশি মানুষ ইউরোপার বাতাস থেকে শ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে। তাহলে কি বৃহস্পতির উপগ্রহে প্রাণ থাকা সম্ভব? সে নিয়ে জোর গবেষণা চলছে।
প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জেমি স্যালে জানিয়েছেন, ইউরোপার পৃষ্ঠদেশ পুরু বরফ দিয়ে তৈরি। নাসার হাবল টেলিস্কোপ দেখিয়েছে, ইউরোপার পিঠে জমে আছে চাপ চাপ বরফ। প্রায় ১৫ থেকে ২৫ কিলোমিটার পুরু। সেই বরফের চাদরের তলায় ঢাকা পড়ে আছে জলের স্তর। সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে নানা মুনির নানা মত আছে। মনে করা হয় বরফের স্তরের নীচে ৬০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার গভীরে জলের স্তর আছে। গবেষণায় এও দেখা গিয়েছিল, ইউরোপায় নাকি এত বড় জলের ভাণ্ডার আছে যা পৃথিবীর সমুদ্রের চেয়েও বড়।
বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, প্রাণের সৃষ্টি ও বিকাশের জন্য যে রাসায়নিক উপাদানগুলির প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি সেগুলিও রয়েছে ইউরোপার অতলান্ত মহাসাগরে। প্রতিদিন যে পরিমাণ অক্সিজেন তৈরি হচ্ছে তাকে বরফের নীচে নিয়ে গিয়ে তরল জলের মহাসাগরে মেশাচ্ছে ইউরোপাই। তার অভিনব কলাকৌশলে। যার ফলে পুরু বরফে মোড়া পিঠের উপরে জমা অক্সিজেনের ৮৬ শতাংশই পৌঁছে যাচ্ছে ইউরোপার অন্তরে থাকা মহাসাগরগুলিতে।
চাঁদের টানে যেমন পৃথিবীতে জোয়ার ভাটা হয় তেমনই বৃহস্পতির আকর্ষণে তার উপগ্রহে তড়িদাহত কণাগুলো খেলে বেড়ায়। সূর্যালোক আর বৃহস্পতি থেকে ছিটকে আসা আধানযুক্ত কণা ইউরোপার পিঠে আছড়ে পড়ার ফলেই হাইড্রজেন-অক্সিজেনের মধ্যে ভাঙাগড়ার খেলা চলে। অক্সিজেন মুক্ত হয় বাতাসে। এই অক্সিজেন আবার সঞ্চিত হয় মহাসাগরেও। ফলে প্রাণ তৈরির সম্ভাবনাও জোরালো হয়। আধানযুক্ত কণাগুলোর জন্যই ইউরোপার বরফের নীচে অবস্থি সাগরের জলও উষ্ণ।
বিজ্ঞানীদের অনুমান, জলসমৃদ্ধ একাধিক খনিজ রয়েছে এই উপগ্রহে। তার থেকেই জলের সৃষ্টি। উপগ্রহের পিঠে তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলির বিকিরণে যে উত্তাপ তৈরি হয়েছিল, তাতে হয়তো ওই জলসমৃদ্ধ খনিজগুলো থেকে জল বেরিয়ে আসে। এ ভাবেই হয়তো কোটি কোটি বছর আগে তৈরি হয়েছিল সমুদ্র। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যে সব মাইক্রোবসের জীবনধারণের জন্য কার্বন ডাই-অক্সাইড দরকার, তাদের জন্ম হতেই পারে সেইসব মহাসাগরে। তবে ইউরোপা মানুষের বাসযোগ্য হবে কিনা সে উত্তর সময়েই দিতে পারবে।