ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর থেকে ফ্রি কিক ছিনিয়ে নিলেন ব্রুনো ফেরনান্দেজ।
শেষ আপডেট: 6th July 2024 17:49
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ছয় বছর পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও ২০১৮ বিশ্বকাপের সেই অবিস্মরণীয় স্পেন-পর্তুগাল ম্যাচের ভিডিও ক্লিপগুলো ঘোরাফেরা করে ইন্টারনেটে। গ্রুপ বি-তে একইসঙ্গে পড়েছিল স্পেন, পর্তুগাল, মরক্কো ও ইরান। রাশিয়ার সোচির অলিম্পিক স্টেডিয়ামে মুখোমুখি সের্হিও র্যামোসের স্পেন ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগাল। শুরুতেই পেনাল্টিতে পর্তুগালকে এগিয়ে দেন রোনাল্ডো। ২৪ মিনিটে সমতা ফেরান দিয়েগো কোস্তা। ৪৪ মিনিটে ফের গোল করেন সিআর সেভেন। দ্বিতীয়ার্ধে তিন মিনিটের মধ্যে পর পর দুই গোল দিয়ে ৩-২ এগিয়ে যায় স্পেন। শেষে, ম্যাচ শেষের আগে ৮৮ মিনিটে বক্সের বাইরে ফাউল করেন জেরার পিকে। বাকিটা ইতিহাস। সরাসরি ফ্রি কিকে বল জালে জড়িয়ে হ্যাটট্রিক করেন রোনাল্ডো।
কার্যত একাই সেদিন ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন সিআর সেভেন। তারপর ছয় বছর পেরিয়ে গিয়েছে। সিআর সেভেনের ফর্মেও খরা এসেছে। তবু রোনাল্ডো-ভক্তরা সেই ফ্রি কিকের মোহ থেকে বেরোতে পারেননি। এখনও সমাজমাধ্যমে ঘোরাফেরা করে দাভিদ দি-হিয়াকে প্রায় দাঁড় করিয়ে জালে জড়ানো রোনাল্ডোর সেই শট। ফুটবল ইতিহাসে রবের্তো কার্লোসের সেই ফ্রি কিকের মতোই অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন সিআর সেভেন।
সমস্যা একটাই, রোনাল্ডো নিজেও সেই মোহ থেকে বেরোতে পারেননি।
এবারের ইউরোতে শুরু থেকেই দেখা যাচ্ছে, ফ্রি-কিক পেলেই প্রায় একচ্ছত্র শাসন চলছে পর্তুগাল অধিনায়কের। দলে একঝাঁক অভিজ্ঞ, সুদক্ষ সেট পিস বিশেষজ্ঞ আছেন। ফ্রি কিক মারায় ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড অধিনায়ক ব্রুনো ফেরনান্দেজও যথেষ্ট দক্ষ। কিন্তু ইউরোর মাঠে পর্তুগাল বক্সের মোটামুটি কাছাকাছি ফ্রি কিক পেলেই অবধারিত ভাবেই সেটি মারছেন রোনাল্ডো। কেউ আর 'আমি মারছি' বলে এগিয়ে যাওয়ার নেই। টিভি ক্যামেরা, দর্শক সকলেই রোনাল্ডো ফ্রি কিক মারতে গেলে চেগে যাচ্ছেন। সকলেই আশায় আশায় রয়েছেন, বুঝি সোচির মাঠের সেই গোলের ঝলক আবার দেখা যাবে।
কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা। ফ্রি কিক পেলেই রোনাল্ডো দাঁড়িয়ে পড়ছেন। তাঁর সেই 'আইকনিক' ধাঁচে, পা ছড়িয়ে, প্যান্ট গুটিয়ে। গ্যালারিও উদগ্রীব হয়ে উঠছে। মাঠে পেরে উঠছেন না রোনাল্ডো। দাঁড়িয়ে থাকছেন অ্যাটাকিং থার্ডে। সামান্য মার্ক করেও তাঁকে চেপে দেওয়া যাচ্ছে। বল পেলেও গোলে রাখতে পারছেন না। এই অবস্থায় পেনাল্টি বা ফ্রি কিক ছাড়া একটা সিআর সেভেন-গোলের আশা মিটছে না ভক্তদের। ফলে ফ্রি কিক পেলে অন্যরাও আর কেউ মারতে এগোচ্ছেন না। সামনে 'দেওয়াল' করে দাঁড়ানো বিপক্ষের ফুটবলাররাও দাঁত চেপে থাকছেন। কিন্তু শেষ অবধি রোনাল্ডোর একটি শটও ঠিকমত গোলে পৌঁছয়নি।
রোনাল্ডো অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়। শোনা যায়, পর্তুগাল জাতীয় দলে তাঁর কথাই শেষ কথা। হতশ্রী খেলার পরেও রোনাল্ডোকে বসানো দূরে থাক, নব্বই মিনিটের আগে তুলে নেওয়ার ঝুঁকিও নিচ্ছেন না কোচ রবের্তো মার্তিনেজ। রাফায়েল লিয়াও, ব্রুনো ফেরনান্দেজের মত ফুটবলারদের বদলি নামানো হচ্ছে। শুধু সামনে অনড় রোনাল্ডো। মাঠে থেকেই বা কী করছেন, কেউ জানে না। অবশেষে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে দেখা গেল, আইন নিজের হাতেই নিয়ে নিলেন ব্রুনো ফেরনান্দেজ।
ম্যাচ তখন ৪১ মিনিটে। মোটামুটি ২৫ গজের মাথায় ভিতিনহাকে ফাউল করে বসলেন কোলো মুয়ানি। ফ্রি কিক। যথারীতি, রোনাল্ডো প্যান্ট গুটিয়ে প্রস্তুত। দাঁড়িয়েও পড়লেন নিজের জায়গায়। রেফারি সামনে ফরাসি 'দেওয়াল' সাজাচ্ছেন। দেখা গেল, ব্রুনো ও রোনাল্ডো নিজেদের মধ্যে কিছু কথা বলছেন। তারপর ব্রুনোও দাঁড়ালেন পজিশন নিয়ে। ফ্রি-কিক দুনিয়ায় অতি পরিচিত ছবি। একজন শট নেওয়ার অভিনয় করেন, ঝটিতি প্রতিক্রিয়ায় অকস্মাৎ নড়ে যায় মানব-প্রাচীর, ওই ফাঁকে দ্বিতীয় শটে বল জালের দিকে রাখেন অপরজন। এখানে অবশ্য অভিনয়ের দরকার নেই। সবাই জানেন, সিআর সেভেনই মারবেন! কিন্তু সবাইকে অবাক করে শট নিলেন ব্রুনো। যদিও পোস্টের অনেক বাইরে দিয়েই গেল।
টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ল, অবাক হয়ে গিয়েছেন রোনাল্ডো। মারার জন্য দৌড় শুরুও করেছিলেন। কিন্তু ব্রুনো মেরে দিলেন। এটা কি পরিকল্পিত ছিল? নাকি রোনাল্ডোকে মারতে দিলেন না ব্রুনো? পর্তুগাল শিবিরে অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ থেকেই রটেছিল, রোনাল্ডোর সঙ্গে দলের অনেকের বনিবনা ভাল নেই। বিশেষ করে ব্রুনো বা হোয়াও ফেলিক্স মোটেই তাঁকে পছন্দ করেন না। আবার উল্টো কথাও আছে। তুরস্ক ম্যাচে রোনাল্ডো নিজের প্রায় মুঠোয় আসা গোল ছেড়ে দিয়েছিলেন ব্রুনোর জন্য। তাহলে কি ফ্রি কিক বারবার তিনি নেওয়ায় প্রেডিক্টেবিলিটি ভাঙতে চেয়েছিলেন ব্রুনো? জানার উপায় নেই। ছিটকে যাওয়ায় আপাতত মুখে কুলুপ এঁটেছে পর্তুগাল ম্যানেজমেন্ট।