শেষ আপডেট: 15th December 2022 18:45
'বিয়ের ফুল' ফুটে ঝরে গেছে অনেক যুগ। দু'জনার দু'টি পথ ওগো দুটি দিকে গেছে বেঁকে… বহু যুগ পার করেও কিছু মুহূর্ত যেন ফিরিয়ে দেয় আগের ফেলে আসা দিনগুলি। কথা বলছি এক সময়ের মহাতারকা দম্পতি দেবশ্রী রায় আর প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের। বাল্যপ্রেম থেকে বিয়ে। নব্বইয়ের দশকের এই ঝটিকা বিয়ে সুখের হয়নি দেবশ্রী-প্রসেনজিতের। তাঁরা আর পরস্পরের কাছের মানুষ হয়ে ওঠেননি। কিন্তু পুরনো সব কথাই ফুরিয়ে যায় না। রয়ে যায় আগামীর আলোর মাঝেই।
আন্তর্জাতিক কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে (KIFF) আজকের প্রধান অতিথি ছিলেন অমিতাভ বচ্চন, জয়া বচ্চন, শাহরুখ খান ও রানি মুখোপাধ্যায় (Rani Mukherjee)। এ বছর রানি বলিউডে তাঁর অভিনয় জীবনের ২৫ বছর পূর্ণ করলেন।
কিন্তু ২৫ বছর আগের গল্পটা আলাদা ছিল। তখন টলিউডের এক নম্বর নায়িকা দেবশ্রী রায়। আর নায়ক হয়ে প্রসেনজিৎ (Prasenjit Chatterjee) রাজ করছেন। ফুরিয়ে আসছে তাপস পাল, চিরঞ্জিতদের যুগ। ততদিনে বহু আগেই বম্বেতেও বেশ কিছু কাজ করে ফেলেছেন দেবশ্রী। আবার দেবশ্রীর মেজো জামাইবাবু রাম মুখার্জী হলেন বম্বের মুখার্জী পরিবারের ছেলে। যার স্ত্রী কৃষ্ণা মুখার্জী দেবশ্রীর মেজদি। একসময় কৃষ্ণা রায় মহঃ রফির সঙ্গে ডুয়েট গেয়ে ওয়ার্ল্ড ট্যুর করতেন। কৃষ্ণা রায় রাম মুখার্জীকে বিয়ে করে হন কৃষ্ণা মুখার্জী। যাদের ছেলে রাজা আর মেয়ে রানি। কলকাতা যখন রানি আসতেন তখন তিনি নাবালিকা। সুন্দরী নায়িকা ছোট মাসি দেবশ্রীকে অবাক নয়নে দেখে রানি বলতেন "মাসি তোর মতো এত সুন্দর হতে পারব?"
সেসময় দেবশ্রী-প্রসেনজিৎ প্রেম তুঙ্গে। টলিউডে এই জুটির ছবি মানেই হিট। তাপস-দেবশ্রী জুটি থেকে আস্তে আস্তে আসছে প্রসেনজিৎ-দেবশ্রী জুটি। দেবশ্রীদের বাড়ি যাবার দৌলতে রানির সঙ্গে প্রসেনজিতের আলাপ। বম্বে যখন যেতেন প্রসেনজিৎ কতবার উঠেছেন রানিদের বাড়িতে। তখন রানি ফিল্মে আসেননি। দেবশ্রীকে বিয়ে করে প্রসেনজিৎ হন রানির মেসো। দেবশ্রী-প্রসেনজিৎ এর প্রেম থেকে বিয়ে সবটাই চোখের সামনে দেখেছেন রানি। মাসি-মেসোর বিয়ে ভাঙার যন্ত্রণা দেখে একসময় রানি ভেবেছিলেন বিয়েই করবেন না। পরে যদিও চোপড়া ঘরণী হন রানি।
যখন দেবশ্রী-প্রসেনজিতের সম্পর্ক ভাঙতে বসেছে তখন শ্যুটিং হচ্ছিল রাম মুখার্জীর 'বিয়ের ফুল' ছবির। যে ছবি দিয়েই ডেবিউ করান মেয়ে রানি মুখার্জীকে। দেবশ্রীর সৌজন্যেই জামাইবাবু প্রসেনজিৎকে রানির বিপরীতে কাস্ট করেছিলেন তিনি। কিন্তু সম্পর্কে তিক্ততা আসার কারণে এই ছবির ইউনিট থেকে সরে যান দেবশ্রী। যদিও রাম মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেবশ্রীর তিক্ততা আসেনি। প্রফেশনাল সম্পর্কের তাগিদেই প্রসেনজিৎ হিরো হন রানির বিপরীতে।
'মন আমার এক নতুন মস্তানি শিখেছে
আদরে আবদারে চোখে সে লিখেছে,
তুমি যে আমার তুমি আর তো কারও না
আমায় ভুলবে না... এই কথা ভুলবে না।'
১৯৯৬ সালে সুপার ডুপার হিট ছবি হয় 'বিয়ের ফুল'। সফল বাংলা ছবি করেই রানিকে বম্বেতে লঞ্চ করেন বাবা রাম মুখার্জী। ১৯৯৭ সালে 'রাজা কী আয়েগি বরাত', ছবি দিয়ে হিন্দি ছবিতে ডেবিউ করেন রানি। কিন্তু ছবি সুপার ফ্লপ। এরপর বিক্রম ভট্টর 'গুলাম' ছবিতে আমির খানের নায়িকা হয়ে খ্যাতির চূড়ায় ওঠেন খান্ডালা গার্ল রানি মুখার্জী।
দেবশ্রী-প্রসেনজিতের বিচ্ছেদ রানির সঙ্গেও প্রসেনজিতের সম্পর্কে দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়। রানিও টলিউডে ছবি করেননি আর। তবে প্রসেনজিৎ বলেছিলেন রানির প্রতিভা আছে এই মেয়ে স্টার হবেই। সে কথা বিফলে যাইনি।
২৫ বছর পর, ১৫ ডিসেম্বর ২০২২, আজ ২৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে চাঁদের হাট। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে হাজির সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, অমিতাভ বচ্চন, জয়া বচ্চন, শাহরুখ খান, রানি মুখোপাধ্যায়, শত্রুঘ্ন সিনহা, মহেশ ভাট, অরিজিৎ সিং, কুমার শানু প্রমুখ।
কালো শাড়িতে ধরা দিলেন রানি মুখার্জি শাহরুখ খানের সঙ্গে। শাহরুখ বললেন, "আজ আমি বাংলায় বক্তব্য রাখব। যেই স্ক্রিপ্ট আমায় রানি লিখে দিয়েছে। আমি ভাল বাংলা বললে আমার গুণ। আর যদি বাজে বলি সেটা রানির দোষ ধরবেন।"
তবে আজ মঞ্চে ঘটল এক অভাবনীয় ঘটনা। রানির পেছনের আসনেই বসে ছিলেন ইন্ডাস্ট্রি প্রসেনজিৎ। প্রথম দেখাতেই রানিকে আলিঙ্গন করলেন প্রসেনজিৎ। মাঝেমধ্যে চলল ভাব বিনিময়। বহু বছর পর প্রাক্তন মেসোর সঙ্গে দেখা গেল দেবশ্রীর বোনঝি রানিকে। সবচেয়ে বড় কথা তাঁরা তো 'বিয়ের ফুল' ছবির কো আর্টিস্ট। রানির প্রথম নায়ক প্রসেনজিৎ-ই। বক্তব্য রাখার আগে তাঁকে সম্মানিত করেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। রানি খুব খুশি তাঁর 'মমতা দিদি' তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তাঁর ২৫ বছরের অভিনয় জীবনকে সম্মান জানিয়েছেন।
কিন্তু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সারা টলিউড উপস্থিত থাকলেও দেখা মেলেনি ডিভা দেবশ্রী রায়ের। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দূরত্বের কারণেই কী রায়দিঘির প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ককে ব্রাত্যই রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী? তবে হাজির ছিলেন সমসাময়িক নায়িকা শতাব্দী রায়।
রানিকে উত্তরীয় দিয়ে স্নেহাশিস জানালেন প্রসেনজিৎ। যা অনুষ্ঠানে এক নতুন অধ্যায় তৈরি করল। রানির চোখেই কি প্রসেনজিৎ খুঁজে পেলেন ফেলে আসা দেবশ্রী রায়ের মুখ? প্রসেনজিৎ সম্পর্ক সহজ করতে চাইলেও রহস্যময়ী দেবশ্রী রায় আজও চুপ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থেকেও খবরের শিরোনামে রইলেন তিনি। এটাই তো দেবশ্রী রায়ের মহিমা।