শেষ আপডেট: 3rd May 2024 14:30
'দেবদাস', 'সাওয়ারিয়া' এবং 'গাঙ্গুবাই কাথিয়াওয়াড়ি'-র মতো ছবির মাধ্যমে পরিচালক সঞ্জয় লীলা বনশালী পর্দায় বারবার তুলে ধরেছেন সমাজের যৌনকর্মীদের জীবন সংগ্রাম, তাদের বেদনা এবং অসম্পূর্ণ প্রেমের কাহিনি। একই ভাবে, তাঁর প্রথম ওয়েব সিরিজ 'হিরামান্ডি (Heeramandi): দ্য ডায়মন্ড বাজার'-এর মাধ্যমে, বনশালী সমাজের এই প্রান্তিক মানুষগুলোকে সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। কোটি টাকার সেট, জাঁকজমকপূর্ণ সাজের মাঝেও কোথাও পতিতাদের মন পড়তে পেরেছেন সঞ্জয়। প্রাক-স্বাধীনতা যুগে রচিত গল্পটি মূলত স্বাধীনতা সংগ্রামে নিষিদ্ধপল্লীর বিরাট অবদান নিয়ে। যেখানে প্রেম, প্রতিশোধ এবং বিদ্রোহের কথা রয়েছে।
বনশালীর ছবিতে (Heeramandi) বহুদিন পর প্রোটাগনিস্ট চরিত্রে অভিনয় করলেন মনীষা কৈরালা। এছাড়াও রয়েছেন সোনাক্ষী সিনহা, অদিতি রাও হায়দারি, রিচা চাড্ডা, শারমিন সেহগাল, ফারদিন খান প্রমুখ। কিন্তু হীরামান্ডি প্রথমে চলচ্চিত্র করতে চেয়েছিলেন বনশালী। তখন তাঁর প্রথম চয়েস ছিলেন রেখা, রানি মুখোপাধ্যায় এবং করিনা কাপুর।
বনশালী নিজেই ভাগ করে নিয়েছেন ১৮ বছর আগের কথা। তখন 'হীরামান্ডি' (Heeramandi)চলচ্চিত্র করতে চেয়েছিলেন তিনি। আর সেইসময় রেখা, রানি ও করিনাকে ভেবেই বানাতে চলেছিলেন এই ছবি। কিন্তু যা হয়, সে কাজ আর বাস্তবায়িত হয়নি। আসলে ১৮ বছর আগে ঐ মাপের কাস্ট সহ ছবির সেট থেকে শ্যুটিং সবকিছু করার বিপুল ব্যয়ভার। প্রযোজক পাওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। তাই বড়পর্দার জন্য আর তৈরি করতে পারেননি 'হীরামান্ডি'(Heeramandi)। তবে শুধু এই কাস্টেই থেমে থাকেনি সঞ্জয়ের স্বপ্নের প্রোজেক্ট। বারবার কাস্ট পরিবর্তন হয়ে শেষমেষ এটি সিরিজে রিলিজ হল। পরিচালক বলেন, "আমার মনে একাধিক অভিনেতার নাম ছিল। আমি প্রথমে রেখাজি, করিনা কাপুর, রানি মুখোপাধ্যায়ের কথা ভেবেছিলাম। যদিও তখন সিরিজ হবে ভাবিনি। ছবি তৈরি করব ভেবেছিলাম। এরপরে পাকিস্তানি নায়িকা মাহিরা খান, নায়ক ইমরান আব্বাস ও ফাওয়াদ খানের কথা মাথায় আসে। যেহেতু গল্পের প্লটে রয়েছে স্বাধীনতা পূর্বযুগের লাহোর।" ইমরান আব্বাস বনশালীর প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ছবিটাই হল না। শুধু তাই নয়, ইমরান আরো জানান তাঁকে 'গুজারিশ' ছবিতে আদিত্য রায় কাপুরের ভূমিকাটিরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
বর্তমান কাস্টে (Heeramandi) দীর্ঘদিন পর চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে দেখা গিয়েছে মনীষা কৈরালাকে। তাঁর অভিনয়ে ধরা পড়েছে কঠোর পরিশ্রম। সিরিজে (Heeramandi) মনীষা ছাড়াও রয়েছেন সোনাক্ষি সিনহা, রিচা চাড্ডা, শরমিন সেহগাল, অদিতি রাও এবং সঞ্জিদা শেখ। এই সিরিজের হাত ধরেই বলিউডে ফিরলেন অভিনেতা ফারদিন খান।
তবে এ কথা বলাই যায়, যে 'হীরামান্ডি' (Heeramandi) ছবির কথা বনশালী ভেবেছিলেন আর যে সিরিজ হল, তাতে আকাশ পাতাল তফাত। সিরিজটির কাস্টিং দর্শকের সেভাবে পছন্দ হয়নি এবং গল্পের প্লটও মুখ থুবড়ে পড়েছে। মনীষা, সোনাক্ষী এরা কেউই সেরকম দাগ কাটতে পারেননি। দর্শক মনীষার জায়গায় বারবার মাধুরী দীক্ষিতের নাম ভেবেছে এই ধরনের চরিত্রে। নাচের দিক থেকেও মাধুরী বা রেখার মতো অভিনেত্রী পর্দায় এলে তা ইতিহাস সৃষ্টি করত। রেখার বিকল্প মনীষা হতে পারেননা। তা সিরিজে স্পস্ট।
অন্যদিকে ১৮ বছর আগে রানি ও করিনা এক ছবিতে কাজ করলে তা দর্শক আনুকূল্য প্রচুর পেত। যদিও সেইসময় ওঁদের 'মুঝসে দোস্তি কারোগি' গানে হিট হলেও ছবিটি ফ্লপ করেছিল। তবে বনশালীর কেরিয়ারে রানি অভিনীত 'ব্ল্যাক' ইতিহাস সৃষ্টি করে।
১৮ বছর আগে বলিউডে সঙ্গীত পরিচালকের আকাল ছিল না। 'হীরামান্ডি' (Heeramandi) মিউজিকাল হিটের তালিকায় নাম লেখাতে পারত। সঞ্জয় লীলা বনশালীর ১৮ বছরের স্বপ্ন কোনো ঐতিহাসিক মাইলফলক তৈরি করতে পারল না। সবথেকে বড় কথা এইরকম বিগ বাজেট পিরিয়ড ছবি বড় পর্দাতে দেখে যতটা মজা, তার ছিঁটেফোটাও মেলে না মোবাইল ল্যাপটপে দেখা সিরিজে। বড় পর্দার ম্যাজিক, সুপারহিট গান যেন ক্রমশ বিলীন হয়ে যাচ্ছে আধুনিক চলচ্চিত্র যুগে।
হীরামান্ডির (Heeramandi) পর, বনশালী তার পরবর্তী ছবি 'লাভ অ্যান্ড ওয়ার'-এর জন্য অপেক্ষা করছেন, যেখানে আলিয়া ভাট , রণবীর কাপুর এবং ভিকি কৌশল অভিনয় করেছেন।