শেষ আপডেট: 29th July 2024 12:06
শঙ্খদীপ দাস
রাজ্য বিজেপির সভাপতি পদ থেকে তিনি সরে যাওয়ার পর ৯ বছর কেটে গেছে। তার পর প্রথমে দিলীপ ঘোষ ও পরে সুকান্ত মজুমদারের মেয়াদে রাহুল সিনহা নামটি ক্রমশই যেন গুরুত্ব হারিয়েছে বাংলায় গেরুয়া সংগঠনে। মাঝে মধ্যে সংবাদমাধ্যমে বাইট দেওয়া ছাড়া তাঁকে ইদানীং খুব একটা প্রাসঙ্গিক ভূমিকায় দেখা যায় না তাঁকে। এ হেন রাহুলের কপালে যেন এবার রাজযোগ দেখা যাচ্ছে!
২০১২ সালে জাতীয় স্তরে যখন নরেন্দ্র মোদীর উত্থান হচ্ছে, তখন বাংলায় রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছিলেন রাহুল সিনহা। সম্ভবত মাথায় রোজ তেল মাখেন রাহুল। তৈলাক্ত চুল পরিপাটি করে আঁচড়ানোর তাঁর নিজস্ব কেতা রয়েছে। তবে তাঁর কথা বরাবরই ঝাঁঝালো। তথাগত রায় পরবর্তী অধ্যায়ে রাজ্য বিজেপির সংগঠনকে যেন নতুন ভাবে উজ্জীবিত করতে পেরেছিলেন তিনি। রাজ্য সভাপতি পদে থাকাকালীন গোটা বাংলা ঘুরতেন। উত্তরবঙ্গে লেগে থেকে সংগঠনের কাজ করতেন। বাংলায় শাসক দল তৃণমূল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর আক্রমণের ভাষাও ছিল বেশ চোখা। তবে ব্যক্তিগত ভাবে নির্বাচনী সাফল্য কখনও পাননি তিনি। বাংলায় বিজেপির সুদিনেও না।
বিজেপির শীর্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, অনেক দিন পর শেষমেশ রাহুলের কপালে এবার শিঁকে ছিড়তে পারে। রাজ্য বিজেপির সংগঠন ঢেলে সাজতে চাইছেন জগৎপ্রকাশ নাড্ডা- অমিত শাহরা। রাজ্য সভাপতি পদে বদলও অনিবার্য। সেই সঙ্গে নতুন করে রাজ্য কমিটি গঠন করা হবে। এই অবস্থায় রাজ্য বিজেপির উল্লেখযোগ্য মুখদের কাকে কোথায়, কোন পদে বসানো যায় তা নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। যেমন, রবিবারই আধ ডজন রাজ্যে রাজ্যপাল বদল করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের কোনও নেতাকে রাজ্যপাল করা যায় কিনা সে ব্যাপারেও জানতে চাওয়া হয়েছিল বাংলার নেতাদের কাছে। কিন্তু বাংলা বিজেপির দুর্ভাগ্য যে তেমন কোনও নাম তাঁরা পাঠাতে পারেননি যিনি মোদী জমানায় রাজভবনের জন্য উপযুক্ত।
সূত্রের খবর, রাহুল সিনহার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে রাজ্যসভার সদস্য করার জন্য। পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার আসন ফের খালি হবে ২০২৬ সালের ২ এপ্রিল। তখন সুব্রত বক্সী, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, জহর সরকার ও মৌসম নূরের মেয়াদ শেষ হবে। সিপিএম আর তখন কোনও আসন পাবে না। বরং সেটা বিজেপিই পাবে। তবে রাহুলকে সম্ভবত ততদিন অপেক্ষা করাবে না বিজেপি। রাজ্যসভায় রাহুলকে সিনহাকে রাষ্ট্রপতির মনোনীত সদস্য করা হতে পারে। ঠিক যেমন, একদা অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে রাজ্যসভায় মনোনীত সদস্য করা হয়েছিল।
রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতির মনোনীত ১২ জন সদস্য থাকতে পারেন। বর্তমানে রাজ্যসভায় এমন মনোনীত সদস্য রয়েছেন ৮ জন। অর্থাৎ ৪টি আসন শূন্য রয়েছে। বর্তমানে রাজ্যসভার মনোনীত সদস্যরা হলেন, সুরকার ইল্লাইয়া রাজা, সুধা মূর্তি, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, পিটি উষা, ধর্মস্থল বীরেন্দ্র হেগড়ে, বিজয়েন্দ্র প্রসাদ এবং বিজেপির দুই নেতা সতনাম সিং সান্ধু ও গুলাম আলি।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে বর্তমানে রাজ্যসভায় বিজেপির দু’জন সাংসদ রয়েছেন। গত বছর অগস্ট মাসে কোচবিহারের নেতা অনন্ত মহারাজ তথা নগেন্দ্র রায়কে রাজ্যসভায় নির্বাচিত করেছিল বিজেপি। আর এ বছর বিজেপি রাজ্যসভায় পাঠিয়েছে দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যকে। তবে অনন্তকে রাজ্যসভা নির্বাচনে প্রার্থী করায় দলের মধ্যেই অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছিল, রাজ্য বিজেপির পুরনো নেতাদের কেন বেছে নেওয়া হল না। যাঁরা দুর্দিনে দলের কাজ করেছেন, তাঁদেরই সেই সুযোগ পাওনা ছিল। সম্ভবত সেই ভুল শুধরে নিতে পারেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। রাহুলের ভাগ্যে জুটতে পারে রাজ্যসভার আসন। তবে হ্যাঁ, রাজনীতিতে না আঁচানো পর্যন্ত বিশ্বাস নেই। শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলের আশঙ্কা সর্বদাই থেকে যায়।