শেষ আপডেট: 26th January 2024 22:57
অমল সরকার
বিহারের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন? মাস চার-পাঁচ আগেও এই প্রসঙ্গে অনেকেই বলতেন, নীতীশ কুমার নামেই মুখ্যমন্ত্রী, আসল ক্ষমতা লালুপ্রসাদের হাতে। রাজ্যে তাই লালু-রাবড়ির জঙ্গলরাজ ফিরে এসেছে। বিহারে লালু-প্রসাদ যাদব ও তাঁর স্ত্রী রাবড়িদেবীর পনেরো বছরের শাসনকে শুধু বিরোধী দলগুলিই নয়, সাধারণ মানুষেরও অনেকেই ‘জঙ্গলরাজ’ বলে থাকেন।
নীতীশ কুমার যখন ফের লালুপ্রসাদের সঙ্গ ছেড়ে বিজেপির হাত ধরার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন বলে খবর তখন রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন? পরিসংখ্যান বলছে, চার মাসের আগের মতো নেই। তুলনামূলকভাবে অনেকটাই ভাল।
অন্যদিকে, লালুপ্রসাদ ও তাঁর পরিবারের মাথার উপর ঝুলছে একাধিক অপরাধে যুক্ত থাকার চার্জশিট। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত এই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাঁচির আদালত ষষ্ঠ মামলার রায় ঘোষণা করতে পারে অচিরেই। অন্যদিকে, পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির পাঁচ মামলায় দোষী সাব্যস্ত লালুপ্রসাদের জামিন বাতিল করে তাঁকে ফের জেলে পাঠাতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছে সিবিআই।
এ তো গেল শুধু লালুপ্রসাদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ। তিনি রেলমন্ত্রী থাকা কালে জমির বিনিময়ে মন্ত্রী কোটার চাকরি বিক্রির অভিযোগ নিয়ে সিবিআই এবং ইডির জোড়া চার্জশিট ইতিমধ্যে আদালতে জমা পড়েছে। যদিও তা পূর্ণাঙ্গ নয় বলে মামলার চার্জ গঠন হয়নি। ওই দুর্নীতিতে নাম জড়িয়ে স্ত্রী রাবড়ি দেবী, ছোট ছেলে তথা উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী এবং বড় মেয়ে মিসা ভারতীর। মিসা রাজ্যসভার সদস্য। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়িদেবী এখন বিহার বিধান পরিষদের আরজেডির পরিষদীয় দলের নেত্রী।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, লালুপ্রসাদকে ঘায়েল করতে বিজেপি এবং নীতীশের কাছে এখন অস্ত্রের অভাব নেই। লালুর সপরিবারে জেলে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না রাজনৈতিক মহল। সেটা লোকসভা ভোটের আগে না পরে তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে বিরোধী শিবিরে।
যদিও শুক্রবার রাতে জেডিইউ-র বিহার রাজ্য সভাপতি উমেশ সিং নীতীশের বিজেপি বা এনডিএ জোটের হাত ধরার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। নীতীশ কুমারকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেছেন, জেডিইউ ইন্ডিয়া জোটে আছে এবং থাকবে। তবে কংগ্রেসের আত্মসমীক্ষা করা প্রয়োজন। যদিও এই বিবৃতিকে সব মহল সমান আমল দিচ্ছে না। অনেকেই মনে করছেন, নীতীশ সময়ের খেলা শুরু করেছেন। তিনি ইন্ডিয়া জোটের জবাবের অপেক্ষা করছেন। যদিও তাঁকে প্রধানমন্ত্রী মুখ করাটা শুধু কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে না।
রাজনৈতিক মহলের খবর, লালুপ্রসাদের এই দুর্দিনে নিজেকে বেশ গুছিয়ে নিয়েছেন নীতীশ। ফলে জোট বদলে তাঁর আশু ক্ষতির সম্ভাবনা কম। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির পাশাপাশি তাঁর ঝুলিতে আছে আড়াই লাখ শিক্ষক ও ৭৫ হাজার সরকারি কর্মী নিয়োগের কৃতিত্ব। মাস কয়েক হল প্রার্থী বাছাই শেষ করে এখন নিয়োগপত্র দেওয়ার কাজ চলছে।
ভোটের বাক্সে জাতের অঙ্কেও নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছেন জেডিইউ নেতা। কাস্ট সেন্সাস করেই খান্ত হননি তিনি, বিধানসভায় আইন সংশোধন করে পিছড়ে বর্গের জন্য সরকারি চাকরি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬৫ শতাংশ পদ-আসন সংরক্ষণ করেছেন। কাস্ট সেন্সাসে জানা যায়, বিহারের ৬৫ শতাংশ মানুষ আর্থিকভাবে পশ্চাৎপদ অর্থাৎ অন্যান্য অনুন্নত শ্রেণি। এই ৬৫ শতাংশের অর্ধেকের বেশি অতি পিছড়া বা এক্সট্রিম ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস, বিহারে যে অংশটি নীতীশের ভোট ব্যাঙ্ক হিসাবে স্বীকৃত।
এই পরিস্থিতিতে কী করতে পারেন লালুপ্রসাদ? বিহারের রাজনীতির চাণক্য বলে খ্যাত লালুপ্রসাদের রাজনীতির প্যাঁচের কাছে অনেকবারই নীতীশকে মাথা নোয়াতে হয়েছে। নীতীশ বিজেপির হাত ধরলে যাদব ও মুসলিম ভোটের অঙ্কে বাজিমাৎ করতে পারেন লালু। কারণ, বিজেপি রাম মন্দিরকে হাতিয়ার করবে জানাই আছে। বিজেপির হিন্দুত্বের ধ্বজাকে একাধিকবার ভূপাতিত করা লালু প্রসাদ বিনা লড়াইয়ে মাঠ ছাড়ার পাত্র নন।
তাছাড়া বিহার বিধানসভায় তাঁর পার্টি আরজেডি সবচেয়ে বড় দল। নীতীশ সঙ্গ ছাড়লে মহাজোটের বিধায়ক সংখ্যা কমে হবে ১১৪, যা সরকার টিকিয়ে রাখার ম্যাজিক সংখ্যা থেকে আটটি কম। বিধানসভার স্পিকার আরজেডি’র। লালুপ্রসাদও চেষ্টা চালাবেন নীতীশের দল ভাঙিয়ে পুত্র তেজস্বীকে মুখ্যমন্ত্রী করে সরকার গড়ার।
তবে সবটাই নির্ভর করছে জোট সত্যিই ভেঙে গেলে নীতীশ কুমার এবং নরেন্দ্র মোদী কী পদক্ষেপ করেন তার উপর। নীতীশ বিজেপির সমর্থনে নতুন করে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়ে একমাস পর বিধানসভা ভেঙে দিয়ে লোকসভার সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের সুপারিশ করতে পারেন। অন্যদিকে, দুর্নীতির মামলায় লালুপ্রসাদকে লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের জেলে যেতে হলে তা হবে আরজেডি’র জন্য বড় ধাক্কা।