শেষ আপডেট: 22nd August 2024 19:02
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আর জি কর হাসপাতালের ডাক্তার-ছাত্রীকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় রাজ্যে সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ারের এক্তিয়ার নিয়ে নানান প্রশ্ন দানা বেঁধেছে। আর এক্ষেত্রে আর জি কর হাসপাতালের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় কোনও ব্যতিক্রম নন, রাজ্যজুড়ে এই না-পুলিশ, না-সাধারণ উরদিধারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। বিশেষ করে রাস্তার গাড়িচালকদের উপর নিয়মরক্ষার নামে নিরন্তর অত্যাচার চালানো নিয়ে তিতিবিরক্ত সকলেই। তাই সঞ্জয় রায়ের ঘটনার পর সিভিক ভলান্টিয়ারের ভূমিকা ও কর্তব্য নিয়ে ফের একবার প্রশ্ন উঠেছে।
ইংরেজি সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্থান টাইমস কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের বেশ কয়েকজন পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে একটি প্রতিবেদন ছেপেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, সুপ্রিম কোর্ট যে ঘটনার স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছে, তাতে সিভিক ভলান্টিয়ারের জড়িত থাকার সন্দেহের বিষয়টি কিছুমাত্র অমূলক নয়।
জানা গিয়েছে, সিভিক ভলান্টিয়ার পদের জন্য অষ্টম শ্রেণি পাশ হলেই হয়। বিরোধী দলগুলি যাদের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের ক্যাডার বলে ব্যাখ্যা করে থাকে। এক পদস্থ পুলিশ আধিকারিক নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, পূর্বতন বাম সরকার ট্রাফিক সামলাতে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করেছিল। কিন্তু, তৃণমূল কংগ্রেস সরকার এদের থানাতেও নিয়োগ করছে। কারণ পুলিশ বিভাগে দিন দিন কর্মীর সংখ্যা কমছে, নতুন নিয়োগও প্রায় হচ্ছে না।
রাজ্যে আনুমানিক ৭০ হাজার সিভিক ভলান্টিয়ার কাজ করেন। যাঁদের মাসিক বেতন ৯ হাজার টাকা। পদের দিক থেকে এরা হোমগার্ডের নীচে। ওই আধিকারিক আরও বলেন, বাংলার সাধারণ মানুষ সিভিক ভলান্টিয়ারদের সম্পর্কে খারাপ ধারণা পুষে রেখেছেন। কেউ কেউ সিভিক ভলান্টিয়ারদের একাংশকে দুর্বৃত্ত বলেও মনে করেন। এঁদের অনেকেই সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় গ্রেফতার হতেও দেখা গিয়েছে।
আর জি কর কাণ্ডের পরদিন, ১০ অগস্ট, পূর্ব বর্ধমান জেলার সুশান্ত রায় নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে দাদাগিরির অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, তিনি ভারত স্টেট জেনারেল হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে এক মহিলা ডাক্তারকে হুমকি দেন। এক রোগীর ঠিকমতো চিকিৎসা না হলে তাঁকে দেখে নেওয়ার ভয় দেখানোর অভিযোগ করেন ওই মহিলা ডাক্তার। তার ভিত্তিতে ওই ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গত ১৮ অগস্ট। ৩৫ বছরের মহম্মদ হাসান গাজি নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ার গ্রেফতার করা হয়। মগরাহাট থানা এলাকার ওই কর্মীর বিরুদ্ধে একজন অবসরপ্রাপ্ত দায়রা বিচারকের অ্যাকাউন্ট থেকে ৪০ হাজার টাকা চুরির অভিযোগ ওঠে। বিচারকের এটিএম কার্ড ব্যবহার করে টাকা হাতিয়েছিল ওই সিভিক ভলান্টিয়ার, এমনই অভিযোগ দায়ের হয়।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলকাতার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আনিস খানের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় হাওড়ার বাসিন্দা ওই ছাত্রকে অবৈধভাবে আটক করার অভিযোগ ওঠে দুই পুলিশ অফিসার, একজন হোমগার্ড ও দুজন সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, উরদিধারীদের ভয়ে পালাতে গিয়ে আনিস ছাদ থেকে ঝাঁপ দেওয়ায় পড়ে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।
২০২৩ সালে ২১ মার্চ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা সরকারকে নির্দেশ দেন, সিভিক ভলান্টিয়ারদের জন্য কাজের নির্দিষ্ট রূপরেখা প্রস্তুত করতে। সেই নির্দেশের পিছনেও ছিল দুই পুলিশ কর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ। ২০২৩ সালে ২৪ মে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এক নির্দেশিকায় জানায়, সিভিক ভলান্টিয়াররা পুলিশকে কেবলমাত্র সাহায্য করবে। এবং সেটাও যান নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ পার্কিং ও উৎসবকালীন ভিড় সামলাতে। কোনও ভলান্টিয়ারকে আইন প্রয়োগের কাজে ব্যবহার করা চলবে না।
ওই পুলিশ অফিসার বলেন, আর জি কর হাসপাতালে সঞ্জয় রায়ের এরকম কোনও ডিউটি ছিল না। সিবিআইয়ের তদন্ত অনুসারে সঞ্জয় কলকাতা পুলিশ ওয়েলফেয়ার কমিটির সঙ্গে যুক্ত ছিল। এবং হাসপাতালে কোনও পুলিশ কর্মী বা পুলিশের আত্মীয় ভর্তি হলে তাঁদের দেখাশোনার কাজ করত। আর তা থেকেই এই হাসপাতালের আনাচেকানাচে তার অবাধ গতিবিধি ছিল, যা নিয়ে প্রশ্ন করার সাহস করতেন না কেউ।