শেষ আপডেট: 14th August 2024 14:38
দ্য ওয়াল ব্যুরো: অসমের শিলচর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সর্বস্তরের চাপ ও নিন্দার মুখে প্রত্যাহার করল তাদের পূর্ববর্তী উপদেশের ঝুলি। অসমের মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে এক ট্যুইটে বলা হল, পূর্ববর্তী বিজ্ঞপ্তি বাতিল করা হচ্ছে। শীঘ্রই একটি নতুন নির্দেশিকা দেওয়া হবে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন এবং সরকারি নির্দেশিকা অনুসরণ করে নয়া পরামর্শবিধি জারি হবে।
প্রসঙ্গত, আর জি কর হাসপাতালের ডাক্তার-ছাত্রীকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদীদের অন্যতম দাবি হাসপাতাল চত্বরে মহিলা ডাক্তারদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। সেই প্রেক্ষিতে বিজেপি শাসিত অসম সরকার মহিলা ডাক্তারদের জন্য অভিনব নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। এক নির্দেশিকায় অসমের শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মহিলা ডাক্তার ও অন্য মহিলা কর্মীদের পরামর্শ দিয়েছিল, তাঁরা যেন রাতে একলা ঘোরাফেরা না করেন। নারী নিরাপত্তা নিয়ে এহেন পরামর্শে ডাক্তারদের মধ্যে বিশেষ করে মহিলা হাসপাতাল কর্মীদের ভিতরে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়।
শিলচর হাসপাতালের প্রিন্সিপাল তথা মুখ্য সুপার ডাঃ ভাস্কর গুপ্ত কলকাতার আর জি কর হাসপাতালের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই পরামর্শ দেন। কর্তৃপক্ষ ছাত্রী, মহিলা ডাক্তার, নার্স ও অন্য আবাসিক মহিলা কর্মীদের জানায়, একলা ঘোরাফেরা করবেন না। বিশেষত রাতে নির্জন স্থানে একলা যাবেন না। গুপ্ত লিখেছিলেন, মহিলা ডাক্তার, ছাত্রী এবং অন্য মহিলা কর্মীদের উদ্দেশে জানাচ্ছি, যতটা সম্ভব অনভিপ্রেত পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া এড়িয়ে চলুন। একলা থাকলে বিশেষ করে লোকজনহীন এলাকায় যাবেন না। অত্যাবশ্যক জরুরি কারণ ছাড়া কেউ হস্টেল বা লজিং রুম ছেড়ে রাতে বাইরে বেরবেন না। যদি রাতে বেরনোর প্রয়োজন হয়, তাহলে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আগাম অনুমতি নিয়ে রাখতে হবে।
তিনি আরও উপদেশ দিয়ে লিখেছিলেন, বেশি রাতে অথবা অসময়ে হাসপাতাল চত্বর ছেড়ে বাইরে যাবেন না। হস্টেলে বসবাসকারী সব আবাসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিয়মবিধি মেনে চলতে বাধ্য থাকবেন। সন্দেহজনক অথবা অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে বেশি মেলামেশা করবেন না, এ ব্যাপারে সজাগ থাকবেন। জরুরি বা বিপদে পড়লে এমার্জেন্সি নম্বরে ফোন করবেন। ডিউটিতে থাকার সময় সজাগ থেকে কাজ করবেন। চারপাশের পরিস্থিতির উপর নজর রাখবেন। এ পর্যন্ত লিখেই ক্ষান্ত হননি ভাস্কর গুপ্ত। মহিলা ডাক্তারদের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে জনসাধারণের সঙ্গে মিষ্টিমুখে, অমায়িক ব্যবহার করার প্রচ্ছন্ন নির্দেশ দেন। কারণ হিসেবে লিখেছেন, এর ফলে নিষ্ঠুর কোনও ব্যক্তির অবাঞ্ছিত নজর এড়িয়ে চলা সহজ হবে।
গুপ্তা এই পরামর্শের সাফাই দিয়ে বলেছেন, এই বিজ্ঞপ্তি ডাক্তার, পড়ুয়া এবং অন্য কর্মীদের বৃহত্তর স্বার্থে দেওয়া হচ্ছে। বিশেষত মহিলাদের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এই বিজ্ঞপ্তি নজরে আনা হচ্ছে। কোনও সমস্যা হলে অভিযোগ সেলের বিভিন্ন মহলে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রখ্যাত সংবাদ মাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসে গুপ্ত বলেন, তাঁরা যে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে চান। সতর্ক থাকাটাই প্রাথমিক কর্তব্য। আমরা মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেই এটা করেছি। যদিও শিলচর হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স থেকে কর্মীরা এ ধরনের বিজ্ঞপ্তির তীব্র নিন্দা করেছেন।
তাঁদের দাবি, ঘরবন্দি করে রাখার পরামর্শ দেওয়ার চেয়ে সকলের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হোক। এক মহিলা ডাক্তার বলেন, আমরা বাইরের লোক কেন, হাসপাতালের ভিতরেই পুরুষ কর্মীদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত উত্ত্যক্ত হই। নোংরা ভাষা শুনতে হয়। আমরা এর আগেও বহুবার এনিয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু কিছু হয়নি। হাসপাতাল চত্বরে আমাদের নিরাপত্তা দিতে না পেরে ঘরে বসে থাকার পরামর্শ দিচ্ছে ওরা। এতে আমরা দুঃখ পাওয়ার থেকেও লজ্জাবোধ করছি।