কোটা সংস্কার প্রতিবাদে জমায়েত ঢাকায়।
শেষ আপডেট: 19th July 2024 14:24
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পরিস্থিতি সম্পূর্ণ হাতের বাইরে। সারা বাংলাদেশ জুড়ে দাউ-দাউ করে জ্বলছে কোটা-সংস্কার আন্দোলনের আগুন। বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যম গতকাল রাত অবধি ২৭ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে। মর্মান্তিকভাবে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারালেন নিরীহ, নিরপরাধ ছাত্রছাত্রীরা। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে সে দৃশ্য! ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বেগ জানিয়েছে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই অবস্থায় ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশ জানিয়ে দিল, পরবর্তী নির্দেশ না আসা অবধি ঢাকা-সহ রাজধানী এলাকায় সমস্ত ধরণের মিটিং মিছিল নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।
গত আটচল্লিশ ঘন্টায় কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে ঢাকা। রামপুরা এলাকায় বাংলাদেশ টিভি বা বিটিভির সদর দফতরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার অভিঘাত এমনই যে, সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় বিটিভি। বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইট হ্যাক করে নেওয়া হয়। কুমিল্লা এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় সড়কের ওপর প্রায় পাঁচ ঘন্টা ধরে সংঘর্ষ চলে। যাতে পঞ্চাশজনেরও বেশি আহত হ'ন। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের কর্তারা জানিয়েছেন, অন্তত ৫৩ জনের বেশি আহত ভর্তি রয়েছেন। বেশিরভাগই অল্পবয়সী ছাত্রছাত্রী।
পুলিশ-র্যাব-বিজিবি এই তিন মিলিত নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগের দুই শাখা-সংগঠন, ছাত্রলিগ ও যুবলিগ। যার ফলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুত ছড়িয়ে যায় বিক্ষোভ। একের পর এক নামী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান ছাত্রলিগ সমর্থকরা। এই পরিস্থিতিতে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
এবার পুলিশের তরফেও রাজধানীতে প্রায় অলিখিত কার্ফু জারি হয়ে গেল। ঘটনাচক্রে, আজই বিএনপি এবং আওয়ামি, দুই দলেরই জমায়েত হওয়ার কথা ছিল। বেলা তিনটে নাগাদ ঢাকা প্রেস ক্লাবের সামনে সভা ডেকেছিল বিএনপি। উল্টোদিকে, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে সভা হওয়ার কথা আওয়ামি লিগের। কিন্তু ঢাকা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ফারুক হোসেন জানিয়ে দিলেন, আপাতত এসবের কিছুই করার অনুমতি তাঁরা দেবেন না। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া অবধি সভাসমিতি বন্ধ রাখা হবে।
এই পরিস্থিতিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু সেটা এত দেরিতে কেন? আগে কি দেওয়া যেত না? প্রশ্ন তুলছেন আন্দোলনকারীরা। একদিন আগেও জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন কোনও আলোচনার প্রস্তাব আসেনি। এইবার বেগতিক দেখে একে একে আওয়ামি লিগের উচ্চপদস্থ মন্ত্রীরা আলোচনার কথা বলতে কার্যত জনরোষ আরও বাড়ছে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, এই আলোচনা ক'টাদিন আগে হলে এতগুলো প্রাণ বেঘোরে ঝরে যেত না। উলটে সরাসরি পুলিশ-ছাত্রলিগ-যুবলিগ মিলিত হয়ে বলপ্রয়োগ করাতে সরকারের প্রতি আদতে মানুষের আস্থাটাই টলে গিয়েছে।