শেষ আপডেট: 28th July 2024 20:41
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ধীরে ধীরে পড়শি বাংলাদেশের অবস্থা স্বাভাবিক হচ্ছে। দীর্ঘ হিংসার পরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে ঢাকা-চট্টগ্রাম। কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে তীব্র উত্তেজনার পরে অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ছাত্রছাত্রীদের দাবিও মেনে নিয়েছে সরকার। কিন্তু হিংসার ঘটনায় ইতিমধ্যেই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে গিয়েছে বাংলাদেশের খবর। নানা দেশ থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগ সরকারের কাছে শান্তি ফেরানোর আর্জি এসেছে। এই প্রেক্ষাপটে এবার রবিবার গোটা ঘটনা নিয়ে লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করল বাংলাদেশ সরকারের বিদেশমন্ত্রক। প্রত্যাশিতভাবেই তীব্র সমালোচনা করা হল বিরোধী বিএনপি ও জামাত জোটের।
রবিবার অবধি সরকারিভাবে জানানো হয়েছে, মৃতের সংখ্যা ১৪৭ জন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'সরকারের তরফে পুরো পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যারা হিংসায় প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের সম্পূর্ণ সুবিচার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আহত ও ক্ষতিগ্রস্থদের অবস্থা প্রধানমন্ত্রী নিজে সরেজমিনে খতিয়ে দেখছেন। মৃতদের পরিবারের জীবন-জীবিকার প্রতিও লক্ষ্য রাখা হবে। যাতে তাঁদের অন্তত কিছুটা আর্থিক সুরক্ষা দেওয়া যায়।
গোটা ঘটনার জন্য প্রত্যাশিতভাবেই বিরোধী বিএনপি ও জামাতের ওপর দোষ চাপিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, "কোটা-সংস্কার আন্দোলন শান্তিপূর্ণই ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি ও বাংলাদেশ জামাত-এ-ইসলামি এবং তাঁদের ছাত্রশাখা ইসলামি ছাত্র শিবিরের মদতে আন্দোলনকে সম্পূর্ণভাবে সন্ত্রাস ও অরাজকতায় বদলে দেওয়া হয়েছিল। কিছু হিংস্র উগ্রবাদী গোষ্ঠীর মদতে ছাত্রদের আন্দোলনকে হাতিয়ার করে একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার চক্রান্ত করেছিল। এখনও তারা ভুয়ো খবর ছড়িয়ে চলেছে। আন্তর্জাতিকভাবেও তারা প্রচার করে চলেছে, যাতে আইনসম্মতভাবে নেওয়া পুলিশি পদক্ষেপকে 'ছাত্রদের ওপর নেমে আসা নিপীড়ন' বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। যেখানে ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব জনসমক্ষে ঘোষণা করেছেন, তাঁদের সঙ্গে বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কোনও সম্পর্ক নেই।" এই আবহে বিদেশমন্ত্রকের অনুরোধ, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যেন বিএনপি-জামাতের এইরকম বক্তব্যে প্রভাবিত না হ'ন।
কোটা-সংস্কার আন্দোলনেও আগাগোড়া ছাত্রসমাজের পাশেই থাকতে চেয়েছেন বলে বার্তা দিলেন শেখ হাসিনা। বিদেশমন্ত্রকের বক্তব্যে স্পষ্টভাবে লেখা, "শুরু থেকেই আমরা স্পষ্ট করে দিতে চাই, সরকারের অবস্থান এই আন্দোলনে আগাগোড়া প্রতিবাদী ছাত্রদের পাশেই থেকেছে। সরকার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনও করেছিল। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে ছাত্রদের দাবি শুনতে চেয়েছিলেন। সেইমত, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ২১ জুলাইয়ের নির্দেশ অনুসারে, সরকারি গেজেটে সংস্কার করা কোটা ব্যবস্থার নির্দেশিকা জারি করে। এই নতুন কোটা ব্যবস্থা কিন্তু ছাত্রসমাজের দাবিকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। সম্পূর্ণভাবে তাঁদের দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া হয়েছে।"
"অথচ তারপরেও, দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, প্রধানমন্ত্রীর নিরন্তর আশ্বাস সত্ত্বেও বিএনপি-জামাত মিলিতভাবে হিংসায় ইন্ধন দেয়। তারা প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনে করা একটি মন্তব্যকে বিকৃত করে। পরিস্থিতি দ্রুত প্রতিবাদী ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে যায়। যার ফলে সারা দেশে নজিরবিহীন হিংসা, অরাজকতা ও ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হয়। যাকে শুধুমাত্র 'সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ' বলেই চিহ্নিত করা যায়।"
পাশাপাশি, নানা বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছে বাংলাদেশ বিদেশমন্ত্রক। বার্তায় জানানো হয়েছে, "এও জানা যাচ্ছে, সন্ত্রাসবাদী হামলার চক্রান্তকারীরা নিরাপত্তাবাহিনীর আধিকারিক ও শাসক দলের নেতাদের খুন করতে পুরস্কারের (বাউন্টি) ব্যবস্থা করেছিল। অত্যন্ত হিসেব কষেই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় হামলা চালানো হয়েছিল। যার ফলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে ঢাকা মেট্রো, উড়ালপুল, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সদর দফতর, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর দফতর। জাতীয় তথ্যকেন্দ্র ও ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ককেও বিকল করে দেওয়া হয়। টার্গেট করে করে উচ্চ নিরাপত্তার কারাগারে হামলা চালানো হয়। যার ফলে অন্তত নয়জন উগ্রপন্থী জঙ্গি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।"
গোটা ঘটনার যথাযথ তদন্ত হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, প্রত্যেকটি ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে দেখা হবে। প্রত্যেকটি মৃত্যুর ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে। ইতিমধ্যেই এর জন্য একজন হাইকোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে ঘটিত অনুসন্ধান কমিশন গঠন করা হয়েছে। সরকারের তরফে কোনও গাফিলতি ছিল কিনা, সেও খতিয়ে দেখা হবে। প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে কি এবার প্রতিবাদী ছাত্রদের ওপর দমনপীড়ন শুরু হবে? কিন্তু বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, এর জন্য প্রতিবাদী ছাত্রদের কোনওরকম হেনস্থা করা হবে না। জানানো হয়েছে, "প্রশাসনিক সংস্থাকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যুক্ত প্রত্যেককে গ্রেফতার করতে হবে, কিন্তু নিরীহ সাধারণ মানুষ বা প্রতিবাদী ছাত্রদের কোনও রকম হেনস্থা করা চলবে না।"
গত কয়েকদিন ধরে সমাজমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে কার্যত একের পর এক ভিডিও ফুটেজ ছেয়ে গিয়েছে। নানাবিধ ফুটেজে অজস্র হিংসাত্মক কার্যকলাপ ও পুলিশের গুলিচালনার ঘটনা দেখা গিয়েছে। সেই সম্পর্কে বিবৃতির শেষে কয়েকটি জরুরি বিষয় জানিয়েছে বিদেশমন্ত্রক। যেমন, স্পষ্ট জানানো হয়েছে, একটিও 'দেখামাত্র গুলি' বা শ্যুট অ্যাট সাইট-এর ঘটনা ঘটেনি। হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর যে ঘটনার কথা বলা হয়েছে, সেরকম কিছুও ঘটেনি। ব্রডব্যান্ড এবং মোবাইল সংযোগ সম্পূর্ণভাবে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষাতেও সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।