শেষ আপডেট: 3rd August 2024 22:05
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশে ছাত্রদের আন্দোলন শনিবার সন্ধ্যায় নয়া মো়ড় নিল। সরকারি চাকরিতে কোটা বিলোপের দাবি পূরণের পর আন্দোলনকারীরা মামলা প্রত্যাহার, দোষী পুলিশ ও আওয়ামী লিগ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ-সহ নয় দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল। শনিবার সন্ধ্যায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকার শহিদ মিনারের জমায়েতে ঘোষণা করেন, আন্দোলন এখন থেকে এক দফার। সেই এক দফা দাবি হল, শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের অপসারণ।
ঘটনাচক্রে শনিবারই হাসিনা এক অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে আন্দোলনকারী ছাত্রদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমি নিজেই আলোচনায় বসতে রাজি। আমার দুয়ার সর্বদা খোলা। আন্দোলনকারী ছাত্ররা অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে গণভবনে (প্রধানমন্ত্রী অফিস ও বাড়ি) আসতে পারেন।’
সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীরা এক দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করার সময়ই আশঙ্কা করা হয়েছিল বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হতে পারে। ওই ঘোষণার অল্প সময়ের মধ্যেই চট্টগ্রামে সে দেশের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর পৈত্রিক বাড়িতে হামলা চালানো হয়। আন্দোলনকারীরা অবশ্য এই হামলার দায় নেয়নি। চট্টগ্রামেই আওয়ামী লিগের সাংসদ মহম্মদ মহিউদ্দীনের অফিসে হামলা হয়। এ ছাড়াও দেশের ওই বন্দর তথা বাণিজ্য শহরের একাধিক জায়গায় পুলিশের উপর চড়াও হয় আন্দোলনকারীরা। শুক্রবার খুলনায় এক পুলিশ কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করে আন্দোলনকারী ছাত্ররা।
শনিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের তরফে বলা হয়, নয় দফা নয়, তারা এক দফা দাবি আদায়ে রাজপথে থাকবেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতন নিশ্চিত করার ডাক দিয়ে সমাজের সব অংশের মানুষকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানানো হয় ছাত্রদের তরফে। তাঁদের বক্তব্য, এক দফা পূরণ হলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। শেখ হাসিনার পাশাপাশি আওয়ামী লিগের তরফেও ছাত্রদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানানো হয়েছিল। শাসক দল তিন নেতাকে এজন্য বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের দিক থেকে সাড়া মেলেনি।
এদিকে আওয়ামী লিগ নেতৃত্ব শনিবার ঘোষণা করেছে, তারা ছাত্রদের সঙ্গে কোনও ধরনের সংঘাত চায় না। সেই কারণে শনিবারের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি স্থগিত করে দিয়েছিল দল। প্রসঙ্গত, শনিবার ঢাকা-সহ বড় শহরগুলিতে সমাবেশ করার কথা ছিল শাসক দলের। আওয়ামী লিগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াবদুল কাদের ঢাকায় দলীয় দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, ছাত্রদের আন্দোলন তৃতীয় পক্ষের হাতে চলে গিয়েছে। এই পরিস্থিতি চলতে দেওয়া যায় না। ছাত্ররা ক্যাম্পাসে ফিরে যাক। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লিগের কোনও বিরোধ নেই।
আন্দোলনকারীরা আগেই রবিবার থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে রেখেছে। সেই আন্দোলন এখন চলবে এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের সহযোগীরা প্রথম থেকেই ছাত্রদের আন্দোলনের পাশে আছে। এ বছর দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিরোধী দলও হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিকে সামনে রেখে ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিল। তারা দাবি করেছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। শাসক দলের পাল্টা বক্তব্য ছিল নির্বাচিত সরকারের পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না। এবার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা নির্বাচিত সরকারের পদত্যাগের দাবিতে পথে থাকার ডাক দিল।