শেষ আপডেট: 14th July 2024 11:16
দ্য ওয়াল ব্যুরো: 'ভয়' এবং 'ভক্তি'। সাপ নিয়ে কথা হলে এই দু'টো শব্দ একেবারে আক্ষরিক অর্থেই পাশাপাশি বসে। বাঙালি যেমন সাপে ভয় পায়, তেমনই মানুষের বিশ্বাসে ভগবানের সঙ্গে সাক্ষাৎ সহাবস্থান করেন মা মনসার সন্তানরা। ঈশ্বরের ধনভাণ্ডার পাহারা দিচ্ছে বিষধর সাপের দল--এমন একটা গল্প বহু জায়গায় শোনা যায়। এবার, একেবারে বাঙালির একান্ত আপন শ্রীক্ষেত্রে, প্রভু জগন্নাথদেবের বিখ্যাত রত্নভাণ্ডার খোলায় নাগদেবতাদের আশঙ্কায় তটস্থ হয়ে পড়েছেন পুরীর মন্দিরের সেবায়েতরা।
পুরীর ঐতিহাসিক জগন্নাথদেবের মন্দির কলিঙ্গ ধাঁচের স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। দশম শতকে বানানো এই মন্দিরের গর্ভগৃহের ওপরে রয়েছে 'দেউল'। তার সামনে প্রার্থনাকক্ষ, যাকে বলে 'জগমোহন'। মন্দিরের উত্তরে জগমোহনের পাশেই রয়েছে সেই রত্নভাণ্ডার। ২০১৮ সালে ওড়িশার তৎকালীন আইনমন্ত্রী প্রতাপ জেনা বিধানসভায় জানিয়েছিলেন, রত্নভাণ্ডারে প্রায় বারো হাজার আটশো ভরির ওপর সোনার গয়না আছে। সঙ্গে আছে মণিমাণিক্য ও দামি পাথর।
১৯৭৮ সালে শেষ বার খোলা হয়েছিল রত্নভাণ্ডার। তারপর থেকে তার দরজায় তালাই থেকেছে। কিন্তু এবারে মন্দিরের মেরামতির কাজে পুনরায় খুলতে হবে এই ভাণ্ডার। ওড়িশা হাইকোর্টের বিস্তারিত নির্দেশিকা মেনেই মন্দির প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করবে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এএসআই)। পুরীর জেলাশাসক সিদ্ধার্থশঙ্কর স্বেন জানিয়েছেন, 'আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত হয়েই রবিবার রত্নভাণ্ডার খুলব। সরকারের বেঁধে দেওয়া স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রোটোকল অক্ষরে অক্ষরে মেনে কাজ হবে।' ওড়িশা হাইকোর্টের তৈরি করে দেওয়া বিচারপতি বিশ্বনাথ রথ কমিটির ষোলো সদস্যরা সকলে প্রথমে লোকনাথ মন্দিরে পুজো দেবেন। তারপর যথাযথ নিয়ম মেনে রত্নভাণ্ডারের দরজা খোলা হবে।
কিন্তু শোনা যায় যে, রত্নভাণ্ডারের চারদিকে সজাগ পাহারা দিচ্ছে সাপ?
মন্দিরের প্রধান সেবায়েত হলধর দাস মহাপাত্র পাত্তাই দিলেন না। বললেন, এরকম কিছুই নেই, এগুলো গুজব। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে, নিয়মকানুন মেনেই কাজ করবে মন্দির প্রশাসন ও এএসআই। কিন্তু তাতেও সাপের ভয় উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এএসআই কর্তারা অতএব সব রকম সম্ভাবনার জন্য আঁটঘাঁট বেঁধেই নামতে চাইছেন। আনা হয়েছে একাধিক অভিজ্ঞ সাপুড়ে। শুরুতে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সাপুড়েরাই ঢুকবেন অন্দরে। খতিয়ে দেখা হবে রত্নভাণ্ডারের অন্দরমহল। একদল চিকিৎসককেও সাপের বিষ মোকাবিলার যাবতীয় ওষুধ ও ইঞ্জেকশন-সহ হাজির থাকতে বলা হয়েছে। হলধর অবশ্য বললেন, 'সাপ থাকাটা আশ্চর্যের কিছু নয়। এত পুরনো মন্দির। কালক্রমে এর গাত্রে প্রচুর গর্ত হয়ে গিয়েছে। ফলে পাথরের ফাঁক গলে সাপ আসা অস্বাভাবিক নয়।' তবে সাপের দল রত্ন পাহারা দিচ্ছে, এমন দাবি নেহাতই অমূলক।
কিন্তু তাতে আমজনতার ভয় কমছে না। অনেকেই বলাবলি করছেন, প্রভুর রত্নভাণ্ডার থেকে রাতবিরেতে হিসহিসে শব্দ ভেসে আসে। কিছুদিন আগেই খবর এসেছিল, ইঁদুরের দাপটে অতিষ্ঠ মন্দিরের সেবায়েতরা। মূষিক বাহিনীর উপদ্রব থাকলে তাদের লোভে সর্পকূলও আসবে। সেটাই স্বাভাবিক। অতএব সতর্কতা মেনেই কাজে নামতে চাইছেন প্রশাসনের কর্তারা।