শেষ আপডেট: 12th August 2023 10:53
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ন্যাশনাল ক্যাপিটাল সিভিল সার্ভিস অথরিটি আইনে (National Capital Civil Service Authority Act) শনিবার সায় দিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (President Draupadi Murmu)। সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় বিজ্ঞপ্তিও জারি করে দিয়েছে অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র দফতর। গত সপ্তাতে সংসদের দুই কক্ষে তুমুল তর্ক-বিতর্কের পর বিলটি পাশ করে সরকার। ওই বিলে ২৬টি দলের বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ ঐক্যবদ্ধভাবে বিরোধিতা করে। কিন্তু সংখ্যার জোরে সরকার সেটি পাশ করিয়ে নেয়।
অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকার গত ২০ মে মাঝরাতে অর্ডিন্যান্স জারি করে আইনের বিধানগুলি কার্যকর করে নিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, দিল্লি সরকারের অধীনে কর্মরত আমলাদের ট্রান্সফার, পোস্টিংয়ের ভার আর রাজ্য প্রশাসনের হাতে থাকবে না। একটি কমিটি এই ব্যাপারে আমলাদের বদলি সংক্রান্ত বিষয়ে সুপারিশ করবে। সেই কমিটির চেয়ারম্যান থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়া, মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিব হবেন কমিটির সদস্য। সেই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন উপরাজ্যপাল। ফলে মুখ্যমন্ত্রীকে কমিটির চেয়ারম্যান করা হলেও তাঁর সুপারিশ গৃহীত হবে কি হবে না ঠিক করবেন উপরাজ্যপাল।
অর্থাৎ অফিসারদের ট্রান্সফার, পোস্টিংয়ে রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীর মতামত আর চূড়ান্ত নয়। শেষ কথা বলবেন উপরাজ্যপালের বকলমে কেন্দ্রীয় সরকার। এমন নজিরবিহীন ঘটনা দেশের আর কোনও রাজ্যে নেই। সংসদে বিতর্কে একাধিক বিরোধী দল এই ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, এরপর একইভাবে রাজ্যে রাজ্যে রাজ্যপালদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া হবে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে সংবিধানের বিপরীত মুখে চলা বলেও মন্তব্য করেছেন অনেক সাংসদ।
কেন্দ্রের তরফে গোড়ায় তড়িঘড়ি অর্ডিন্যান্স জারি এবং শেষ পর্যন্ত সংসদে আইন পাশ করানোর পিছনে ছিল সুপ্রিম কোর্টের গত মে মাসের একটি ঐতিহাসিক রায়। দিল্লির মতো আধা রাজ্যে অফিসারদের ট্রান্সফার-বদলিতে বারে বারেই নাক গলাচ্ছিল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। সেই বাধা টপকাতে আম আদমি পার্টির সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্ত হয়েছিল। শীর্ষ আদালত মে মাসে রায় ঘোষণা করে অফিসার-পোস্টিংয়ের ক্ষমতা রাজ্য সরকারের বলে রায় দেয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের ওই রায় খর্ব করতেই গভীর রাতে অর্ডিন্যান্স জারি করে কেন্দ্র।
প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য, দিল্লি এমনীতেই আধা রাজ্য। পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের অনেক দায়িত্ব এবং ক্ষমতা রাজধানীর সরকারের হাতে নেই। যেমন পুলিশ এবং পৌর পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়ে শেষ কথা কেন্দ্র। দিল্লি পুর নিগম সরাসরি কেন্দ্রের নগরোন্নয়ম নিগমের অধীনে কাজ করে।
এখন অফিসারদের বদলি সংক্রান্ত বিষয়ে উপরাজ্যপাল শেষ কথা হলে প্রশাসনের উপর মুখ্যমন্ত্রীর কোনও নিয়ন্ত্রণ, প্রভাব থাকবে না। আমলারা বস্তুত উপরাজ্যপালের মুখ চেয়ে কাজ করবেন। কোনও অফিসার কাজে গাফিলতি করলে সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রেও চূড়ান্ত ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়েছে উপরাজ্যপালের বকলমে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের হাতে। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলের মতে, এরফলে অরবিন্দ কেজরিওয়ার আধা রাজ্য দিল্লির হাফ মুখ্যমন্ত্রী বনে গেলেন। কারণ, নয়া আইনে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, প্রস্তাব খারিজ করে অফিসারদের পাল্টা মত দেওয়ার ঘটনা বেড়ে যাওয়া অসম্ভব নয়। দিল্লি সরকারের হাতে অফিসার নিয়োগেরও ক্ষমতা দেয়নি কেন্দ্র। কেন্দ্রকে তুষ্ট রাখার প্রতিযোগিতায় নেমে আমলাদের রাজ্য সরকারকে উপেক্ষা, বিরোধে জড়ানো অসম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: ভোট কারচুপি ধরা পড়ে যাবে, তাই প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিলেন, মোদীর বিলের বিরোধিতায় মমতা