আর জি কর কাণ্ড নিয়ে রাজ্যের দুই বিরোধী দল সিপিএম-বিজেপি তেড়েফুঁড়ে আন্দোলনে নামায় সোজাসুজি ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
শেষ আপডেট: 9th September 2024 17:21
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সিপিএম আমাকে শারীরিক নির্যাতন করেছে, আর বিজেপি আমাকে মানসিক নির্যাতন করছে। সোমবার নবান্ন সভাঘরে প্রশাসনিক বৈঠকে বিরোধী দলগুলিকে এই ভাষাতেই তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর জি কর কাণ্ড নিয়ে রাজ্যের দুই বিরোধী দল সিপিএম-বিজেপি তেড়েফুঁড়ে আন্দোলনে নামায় সোজাসুজি ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি-শাসিত ও এনডিএ শরিক রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে প্রকারান্তরে অর্থনৈতিক অবরোধ জারি করলেন মমতা। বার্ড ফ্লু নিয়ে ওড়িশা-অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ডিম-মুরগি আমদানি বন্ধ, উৎসবের মরশুমে ভিন রাজ্যে আলু পাঠানোর বিষয়টি ভেবে দেখা, বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ভিন্নধর্মী বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে সিপিএম সম্পর্কে বললেন, আমরা বামফ্রন্ট সরকার নয়। তাপসী মালিককে ধর্ষণ করে খুন, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম সহ তাঁকে খুনের চক্রান্তের প্রসঙ্গও এদিন ফের টেনে আনেন তৃণমূল নেত্রী।
বার্ড ফ্লু প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ওড়িশা থেকে আমাদের কাছে খবর এসেছে, সেখানে এই অসুখ ছড়িয়েছে। আমাকে এআরডি দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি বিবেক কুমার এটা বলেছেন। আমরা অলরেডি বর্ডার সিল করতে বলেছি। বিশেষ করে মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া এই বর্ডারগুলো দিয়ে যাঁরা ব্যবসা করতে চান, আপনি তো পচা জিনিস ছড়িয়ে অসুখ বাড়াতে পারবেন না। আমাদের বাংলায় প্রবলেমটা নেই। কিন্তু, রোগটা যদি অন্য রাজ্যে হয়, তাহলে আমাকে দেখতে হবে সেটা যাতে এরাজ্যে না ছড়ায়। এবং রেলেও যাতে ওড়িশা থেকে এ ধরনের জিনিস ঢুকতে না পারে তা দেখতে হবে।
মমতা জানান, মুখ্যসচিবকে আমি বলছি পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব এমনকী উত্তর রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলোচনা করতে। যখন ওদের অসুখ সেরে যাবে, তখন আমরা আবার ওদের জিনিস নেব। আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কারণ সাধারণ মানুষ তো ডিমটা খায়, চিকেনটা খায়। কারণ ইদানীং আবার মাঙ্কি পক্স ছড়াচ্ছে। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, বার্ড ফ্লু যতদিন চলবে ততদিন যেন কোনওভাবেই এগুলো না ঢোকে তা দেখার দায়িত্ব দেন সকলকে। এর অমান্য হলে সরকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে বলে হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী।
পুজোর আগে বাজারদর বৃদ্ধি রুখতেও প্রশাসনিক বৈঠকে সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন, আগে রাজ্যের চাহিদা মেটাতে হবে, তারপর উদ্বৃত্ত হলে বাইরে পাঠানোর কথা ভেবে দেখা যাবে। টাস্ক ফোর্সকে কার্যকর করার নির্দেশ দেন তিনি। বলেন, আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ভিন রাজ্যে আলু পাঠানোর আগে রাজ্যকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। উল্লেখ্য, সামনেই রয়েছে উৎসবের মরশুম। বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অসম, ত্রিপুরায় রাজ্য থেকে প্রচুর পরিমাণে আলু রফতানি করা হয়। কিন্তু, মমতার কথামতো যদি অধিকাংশ বিজেপি শাসিত রাজ্যে আলু পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে পুজো-দেওয়ালির আগে ব্যাপক ব্যবসা মার খাবে সংশ্লিষ্ট সরকারগুলির।
বিজেপি শাসিত রাজ্যের সমালোচনায় মমতা আরও বলেন, আমরা আন্দোলনের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিইনি। এটা উত্তরপ্রদেশে হয় না। এটা বিহারে হয় না। রাজস্থানে হয় না। দিল্লিতে হয় না। আর এখানে যত আন্দোলন হয়েছে তা অনুমতি ছাড়া। পুলিশকে অ্যাকশন নিতে বারণ করেছি।
সিপিএমকে দুষে বলেন, আমাদের সরকার বাম সরকার নয়। সিঙ্গুর নিয়ে আমি ২৬ দিন অনশনে বসেছিলাম। একবারও তারা কেউ আমার সঙ্গে কথা বলেনি। জেনে রাখুন তাপসী মালিককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল লক্ষ্মী ঠাকুরের ভোগ করার উনুনে। তারও কিন্তু উপযুক্ত সাজা হয়নি। কেসটা সিবিআইয়ের কাছে ছিল। নন্দীগ্রামে ১৪ জনের সাজা এখনও জানি না। ১০ জন এখনও নিখোঁজ। তারা এখনও ফিরে আসেনি। যাঁরা আজকে বড়বড় কথা বলছেন, স্বাস্থ্য দফতরে ঘুঘুর বাসা ঢুকিয়ে রেখে গিয়েছিলেন তাঁরাই। সেই ঘুঘুর বাসাটা আমরাটা ভাঙতে পারিনি, কারণ ওখানে বামফ্রন্টের লোক বসে আছে বলে দাবি করেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারকে একহাত নিয়ে বলেন, ওরা চূড়ান্ত অসহযোগিতা করছে। নির্যাতন চালাচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, এই আন্দোলনে কেন্দ্রীয় সরকারের চক্রান্ত আছে। কুৎসা চলছে। বদনাম হচ্ছে। মনে রাখবেন এখানে বাংলাদেশ হবে না। পরিযায়ী শ্রমিক নিয়েও ওড়িশার বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মমতা। বলেন, শুনছি ওখানে বাংলায় কথা বললেই মারধর করা হচ্ছে। বাংলার সবথেকে বেশি পরিযায়ী শ্রমিক তো ওড়িশায় কাজ করেন। এরপরেই তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আপনারা মনে রাখবেন বিভিন্ন রাজ্যের দেড় কোটি শ্রমিক এখানে আছে। আমরা কারও ক্ষতি করি না। কিন্তু, ওড়িশায় আমাদের শ্রমিকদের মারা হচ্ছে।