শেষ আপডেট: 4th August 2024 13:44
দ্য ওয়াল ব্যুরো: 'মানুষই শেষ কথা। মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে হবে, পাশে থাকতে হবে। তৃণমূল করার প্রথম শর্ত এটাই।' ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ফের এ বার্তা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁরা মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করবেন, তৃণমূলে যে তাঁদের কোনও জায়গা নেই, সেটাও ঠারে ঠারে জানিয়েছিলেন তাঁরা।
দলীয় সূত্রের খবর, দলের পদে থেকে মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে তার পরিণাম কী হতে পারে, সম্ভবত তার বড় উদাহরণ হয়ে থেকে যেতে পারেন রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি।
শনিবার সকালে তাজপুরে বন দফতরের মহিলা অফিসারকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছেন প্রবীণ অখিল গিরি। টিভির পর্দায় সেই ছবি দেখে বাংলার আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন মমতা, অভিষেকও। সূত্রের খবর, খুব শীঘ্রই দলের কঠোর শাস্তি মুখে পড়তে পারেন অখিল।
দলীয় সূত্রের খবর, তাজপুরের ওই ঘটনা দেখার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিস থেকে দলের প্রত্যেক মুখপাত্রকে মোবাইলে এসএমএস করে স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়েছে, কেউ যেন অখিল গিরির পক্ষ নিয়ে কথা না বলেন অর্থাৎ অখিল যে কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন তাতে তাঁকে দলের কোনওস্তরের কোনও নেতা যেন প্রশ্রয় না দেন, সেটাই স্পষ্ট করা হয়েছে।
দলের প্রথমসারির এক নেতার কথায়, "এটাকে শাপে বরও বলা যেতে পারে! ২৬ এর ভোটের আগে দলে শুদ্ধিকরণ চাইছিলেন মমতা-অভিষেক। শনিবার অখিল যা বলেছেন, যে আচরণ দেখিয়েছেন, তাতে ওঁকে দিয়েই বোধহয় শুদ্ধিকরণের কাজটা শুরু হবে!"
শনিবার তাজপুরে কী ঘটেছিল? তাজপুরে সমুদ্র সৈকতে গাছ কেটে বেআইনি ভাবে দোকানপাট বসানো হয়েছিল। সেই দোকানপাটগুলোই ভেঙে দেন স্থানীয় রেঞ্জ অফিসার মনীষা সাউ। তারই জেরে শনিবার ওই মহিলা অফিসারকে যা নয় তাই বলছেন কারামন্ত্রী। মহিলা অফিসারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে অখিল বলছেন, ‘বেয়াদব’, জানোয়ার!..আপনি আমাকে চেনেন না! এসডিপিওকে সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলেছিলাম। এমন ডাং দিয়ে পেটাব না, বুঝবেন।"
কেউই এভাবে কোনও মহিলার সঙ্গে যে কথা বলতে পারেন না, সেটা দেখে চমকে উঠেছেন অভিষেকও। ঘটনায় যারপরনাই ক্ষুব্ধ দলনেত্রীও। প্রসঙ্গত, অখিল গিরির এমন আচরণে শনিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদাও।
শনিবার টেলিফোনে দ্য ওয়ালকে বীরবাহা বলেছিলেন, "কর্মরত অফিসারকে এভাবে কেউ বলতে পারেন না। তিনি যে পদেই থাকুন। যদি কিছু বলার থাকত আমি দফতরের মন্ত্রী, আমাকে উনি বলতে পারতেন। তিনি তা না করে যেটা করলেন সেটা অনভিপ্রেত। আমি এর কড়া নিন্দা করছি।" মুুখ্যমন্ত্রীকেও জানিয়েছেন বীরবাহা।
সম্প্রতি রাজ্যের ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপ নির্বাচন হয়েছে। ফলে মন্ত্রিসভায় রদবদল হতে চলেছে শীগ্রই। সূত্রের খবর, মন্ত্রিসভার আসন্ন রদবদলে অখিলকে মন্ত্রিপদ থেকে সরানোর সম্ভাবনা আগে থেকেই ছিল। শনিবারের ঘটনা তাতে আরও ইন্ধন জোগাবে।
প্রসঙ্গত এর আগে দেশের মহিলা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে উদ্দেশ্য করে কুকথা বলার অভিযোগ উঠেছিল অখিল গিরির বিরুদ্ধে। সে সময় তৃণমূলের তরফে অখিলের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করার পাশাপাশি অখিলকে ডেকে সতর্কও করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরও তাঁর আচরণে বদল না আসায় কড়া শাস্তি এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করা হচ্ছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনীতিতে অখিল গিরি বরাবরই শুভেন্দু অধিকারী বিরোধী নেতা বলে পরিচিত। বস্তুত শুভেন্দুকে বাগে রাখতেই কৌশলগত ভাবে অখিলের রাজনৈতিক ওজন বাড়ানো হয়েছিল। তাঁকে রাজ্য মন্ত্রিসভায় স্থান দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয় অখিলের ছেলে সুপ্রকাশ গিরিকে সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁকে কাথি পুরসভার চেয়ারম্যানও করা হয়। সূত্রের খবর, শনিবারের ঘটনার পর দলের পূর্ব মেদিনীপুরের নেতারাও বলতে শুরু করেছেন, "এনাফ ইজ এনাফ।"