শেষ আপডেট: 6th July 2024 13:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তৃতীয় নরেন্দ্র মোদী সরকারের পূর্ণাঙ্গ বাজেট সম্ভবত এমাসেই বাদল অধিবেশনে পেশ হতে চলেছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এখন দেশের অর্থনীতিকে আন্তর্জাতিক মাঠে অশ্বমেধের ঘোড়া করে ছোটাতে ব্যস্ত। কিন্তু, এই দিগ্বিজয়ের পথে সরকারের লাগাম টেনে ধরতে চলেছে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে চাকরির সংস্থান। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী আগামী এক দশক ধরে ফিবছর ভারতকে ১ কোটি ২০ লক্ষ চাকরির সংস্থান করা জরুরি। অন্তত অর্থনীতিবিদদের মত এরকমই।
কংগ্রেসসহ বিরোধীদের অনেকেই যখন জাতিভিত্তিক জনগণনার পক্ষে গলা চড়াচ্ছে, তখন চাকরিক্ষেত্রের ছবিটি অত্যন্ত করুণ। ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির পরিমাণ ৭ শতাংশে ঠেকলেও তাতে আহ্লাদিত হওয়ার কারণ দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। এই অবস্থায় 'কত চাকরি সৃষ্টি' করার সমস্যার থেকেও গুরুতর বিষয় হচ্ছে 'কী ধরনের চাকরি' তৈরি করা যাবে? যাকে বিশেষজ্ঞরা সমস্যার অন্দরের সমস্যা বলে বর্ণনা করেছেন।
অর্থনীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সংস্থার অর্থনীতিবিদ সমীরণ চক্রবর্তী এবং বকর জাইদি একটি রিপোর্টে বলেছেন, আগামী ১০ বছর ধরে ভারতকে প্রতিবছর ১ কোটি ২০ লক্ষ কর্মসৃষ্টি করতে হবে। ৭ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধির হিসাব ধরলেও বছরে ৮০-৯০ লক্ষ চাকরির লক্ষ্যমাত্রা হতে পারে। কিন্তু তাতে ক্রমবর্ধমান বেকারিতে রাশ টানা অসম্ভব। এবারের বাজেটে সেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে নির্মলাকে।
শুধু তাই নয়, কী ধরনের কর্মক্ষেত্র তৈরি করা যাবে তার উপরও নির্ভর করছে অনেক কিছু। যেমন, সরকারি তথ্য বলছে, আনুমানিক ৪৬ শতাংশ মানবসম্পদ এখনও কৃষিক্ষেত্রে নিয়োজিত। যা থেকে জাতীয় গড় উৎপাদনের ২০ শতাংশ আসে। উৎপাদন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান হয় মাত্র ১১.৪ শতাংশ। কোভিডের পর থেকে যার পরিমাণ গতবছর পর্যন্ত কমছে।
অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান অরবিন্দ পনাগরিয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, চাকরি সৃষ্টির থেকেও ভারতের প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ হল মূলধনকে শ্রমমুখী ক্ষেত্রে পুনর্বরাদ্দ করা। শিল্পক্ষেত্রে প্রচুর মূলধন জমা হয়ে রয়েছে যার ফলে কর্মী নিয়োগ সেভাবে হচ্ছে না। তিনি এনডিটিভিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, কলকারখানা, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং পেট্রলিয়াম শোধনাগারে প্রচুর মূলধন জমা হয়েছে। কিন্তু এই ক্ষেত্রগুলিতে সেভাবে কর্মসংস্থান হচ্ছে না।
তিনিও উল্লেখ করেন যে আসন্ন বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের কাছে কর্মসৃষ্টিই জটিল চ্যালেঞ্জ। এই অবস্থায় রাস্তা কী? অনেক অর্থনীতিবিদের মতে, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর রাজ্যস্তরীয় নীতি এক্ষেত্রে তৃতীয় মোদী সরকারের খেলার গতিমুখ বদলে দিতে পারে। আর তা হল কর্মদক্ষতার জনগণনা। অর্থাৎ, কে, কী রকম, কতটা উপযোগী, কী ধরনের কাজ করতে দক্ষ, তার মানচিত্র তৈরি করা।
ইন্ডিয়া ব্লকের নেতারা যখন জাতিভিত্তিক জনগণনায় জোর দিচ্ছেন তখন মুখ্যমন্ত্রী নাইডু রাজ্যে প্রতিজন ধরে কর্মদক্ষতার একটি রূপরেখা তৈরিতে মন দিচ্ছেন। এতে করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিরও সুবিধা হবে কী ধরনের পড়াশোনার উপর জোর দিতে হবে এবং কীভাবে পড়ুয়াদের তালিম দিতে হবে সে ব্যাপারেও।