শেষ আপডেট: 11th September 2024 11:12
দ্য ওয়াল ব্যুরো: খেলার মোড় ঘোরানোর খেলার আগে দুই কাপ্তানের করমর্দন। অবিশ্বাস্য হলেও এই দৃশ্যকে সত্যি করে তুললেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও এবারের ভোটে দ্বিতীয়বারের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস। দুই মহারথীর বিতর্ককে ঘিরে যখন বিশ্বের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের চোখ টিভির পর্দায় আটকে ছিল, তখন হঠাৎই কমলা হ্যারিস বিস্ময়ের দৃষ্টি কপালে তুলে এগিয়ে আসলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের দিকে। বাড়িয়ে দিলেন সৌজন্য বিনিময়ের হাত। ২০১৬ সালের পর এই প্রথম দুই মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জাতীয় বিতর্কসভায় করমর্দন করলেন।
এই বিতর্কের আরও একটি তাৎপর্য ছিল যে, এবারেই প্রথম মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নিলেন দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। দেখা গেল ট্রাম্প বিতর্ক মঞ্চে উঠেই বাঁদিকে নিজের পোডিয়ামের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় কমলা হ্যারিস ডানদিক থেকে এগিয়ে এসে ট্রাম্পের দিকে হাসিমুখে তাঁর বাড়িয়ে দিলেন। দুজনে মহাসংগ্রামে নামার আগে বিরল দৃশ্যকে ক্যামেরাবন্দি করলেন।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্টকে ভাইস প্রেসিডেন্ট নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, আমি কমলা হ্যারিস। আসুন একটি সুন্দর বিতর্কে অংশ নেওয়া যাক। রসিক ট্রাম্পের সহাস্য উত্তর, আপনাকে দেখে খুবই ভালো লাগছে, আসুন আনন্দের সঙ্গে তর্ক শুরু করি। হ্যারিস বলেন, ধন্যবাদ। এরপরেই শুরু হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কমলা হ্যারিসের অন্যতম বড় দ্বৈরথ।
বিতর্কের শুরুতে যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সৌজন্যের বাতাস বইছিল, মুহূর্তে তা উবে গিয়ে ক্রোধ, একে অপরকে আক্রমণ এবং সম্ভ্রমের আবরণ ছিঁড়ে বেরিয়ে এল অন্য মুখ। এই টিভি বিতর্ককে বলা হচ্ছে ‘ফায়ারি ডিবেট’। ফিলাডেলফিয়ায় কমলা ও ট্রাম্প এবিসি টিভি চ্যানেল আয়োজিত বিতর্কে মুখোমুখি হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে সমানে অভিযোগ করলেন। যুক্তি-পাল্টা যুক্তি, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্য উঠে এল অর্থনীতি, গর্ভপাত, অভিবাসন, হামাস–ইসরায়েল যুদ্ধ, ক্যাপিটলের হিলে হামলা ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ, কর ব্যবস্থার মতো বিষয়গুলো। দুজনেই দুজনকে ‘মিথ্যাবাদী’ও বললেন।
মার্কসবাদী বলে প্রচারিত কমলা বলেন, ট্রাম্পের কোনো পরিকল্পনা নেই। ট্রাম্প শুধু ধনীদের জন্য কর ছাড় দেওয়া নিয়ে চিন্তিত। তিনি সুবিধাবাদী অর্থনীতির পক্ষে। জবাবে ট্রাম্প বলেন, হ্যারিস হলেন খালি কলসি, যার ঢক্কানিনাদ বেশি। হ্যারিসের কোনও পরিকল্পনা নেই। তিনি বাইডেনের পরিকল্পনা হাতে করে চলেছেন।
হ্যারিসের অভিযোগ, ট্রাম্প চীন ও অন্য দেশ থেকে আসা জিনিসের উপর কর বাড়াতে চান। এটা আসলে দেশের মানুষের উপর বিক্রয় কর বসানো। এর ফলে জিনিসের দাম বাড়বে। প্রতি মাসে সাধারণ মানুষের উপর কতটা বোঝা চাপবে সেটাও জানিয়েছেন তিনি। ট্রাম্প উত্তরে বলেন, ওই করের অর্থ দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের কর কমাবেন।
কমলা ও ট্রাম্প দুজনের কাছ থেকেই বিতর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তারা কীভাবে ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ থামাবেন? আগের অবস্থানের কথা আবার জানিয়ে কমলা হ্যারিস বলেন, ইজরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। তিনি বলেন, এখন যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। গাজায় সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। সেই সঙ্গে যাদের যুদ্ধবন্দি করা হয়েছে, তাঁদের মুক্তি দিতে হবে। ট্রাম্পের দাবি, তিনি প্রেসিডেন্ট থাকলে এ যুদ্ধ হতোই না। ট্রাম্পের আরও অভিযোগ, কমলা আরবদেরও ঘৃণা করেন। আমি প্রেসিডেন্ট হলে দ্রুত এর সমাধান করে ফেলব।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্প দাবি করেন, আমি এ যুদ্ধ বন্ধ করতে চাই। আমি মানুষের জীবন বাঁচাতে চাই। বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন হতে দিয়েছে। কমলার অভিযোগ, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে তিনি পুতিনকে ইউক্রেন দখল করে নিতে দেবেন। কমলা বলেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে পুতিন এতক্ষণে কিয়েভে বসে থাকতেন। তাঁর নজর থাকত বাকি ইউরোপের দিকে। কমলা বলেন, ইউরোপীয় নেতারাও চান না, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হোন।
ক্যাপিটল হিল নিয়ে ট্রাম্প বলেন, ক্যাপিটলের ঘটনার সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। আমাকে ওরা একটা ভাষণ দিতে বলেছিল, এইটুকুই। তার সমর্থকেরা ক্যাপিটলে ঢোকার আগে ট্রাম্প ভাষণ দিয়েছিলেন। ট্রাম্পকে গর্ভপাত নিয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়। ট্রাম্প বলেন, ডেমোক্র্যাটরা চায় গর্ভধারণের নয় মাস পরেও গর্ভপাত করার অধিকার দিতে। তিনি চান, গর্ভপাতের বিষয়টি রাজ্যগুলো ঠিক করুক। তারা আইন করুক। ধর্ষণ বা কিছু ক্ষেত্রে তিনি গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে। ট্রাম্পের অভিযোগ, কিছু রাজ্যে শিশু জন্মানোর পরেও তাদের মারার ব্যবস্থা আছে।
কমলা বলেন, ট্রাম্পের আমলে যে তিনজন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ করা হয়, তাঁরাই দুই বছর আগে গর্ভপাত নিয়ে কেন্দ্রীয় স্তরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার বাতিল করেছেন। কমলা বিতর্ক শেষ করেন এভাবে, আমরা আর পেছনে ফিরে যেতে চাই না। আমরা সামনের দিকে তাকাতে চাই। আমরা নতুন পথে হাঁটতে চাই। ট্রাম্প বলেন, হ্যারিস ছিলেন বাইডেন প্রশাসনের অঙ্গ। তিনি মানুষকে চাকরি দিতে পারেননি, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। তার উচিত, এখনই সরে দাঁড়ানো।