শেষ আপডেট: 30th July 2024 12:21
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সুহানা সফর...! নাকি মৃত্যুপথযাত্রী! সপরিবারে ভ্রমণ কিংবা চাকরি অথবা শিক্ষা, চিকিৎসা সূত্রে যে কারণেই ট্রেনে ওঠা যাক না কেন, তা যেন যমপুরীর ঠিকানায় রওনা দিচ্ছে। ফেরা না ফেরা সবই বরাতের উপর নির্ভরশীল। ঝাড়খণ্ডের ছত্রধরপুর ডিভিশনে হাওড়া-মুম্বই প্যাসেঞ্জার বেলাইন হয়ে যাওয়ায় আবার সেই প্রশ্নই ঘুরেফিরে উঠছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের রেল সুরক্ষা নতুন করে কাঠগড়ায়। ইন্ডিয়া জোট সহ বিরোধী দলগুলি সমস্বরে মোদীর রেল-নীতিকে দুষতে থাকায় এবং উল্টোদিকে সরকার পক্ষ এ নিয়ে রাজনীতি করার পাল্টা অভিযোগ তুলতে শুরু করেছে।
নতুন সকাল, নতুন নতুন ট্রেন দুর্ঘটনা যেন দেশবাসীর অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। গতবছর ওড়িশার বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় ২৯০ জনের মৃত্যুর পর থেকেও টনক নড়েনি রেল কর্তৃপক্ষের। এই অভিযোগের আঙুল তোলা কোনও রাজনৈতিক অভিসন্ধির বিষয় নয়। কারণ, গত ৬ সপ্তাহে একের পর এক ট্রেন দুর্ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যু এবং শতাধিকের জখম হওয়ার তথ্য সেই সত্যকেই বেআব্রু করে দিয়েছে।
মঙ্গলবার ভোরের এই ট্রেন দুর্ঘটনা রেল নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্ক তৈরি করছে যাত্রীদের মনে। জুন এবং জুলাই মাসে তিনটি বড় দুর্ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যু এবং ১০০ জনেরও বেশি জখম হয়েছেন। গত ১৭ জুন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুটি কোচ লাইনচ্যুত হয়। তাতে ১১ জনের মৃত্যু ও ৬০-এর বেশি যাত্রী আহত হয়েছিলেন।
১৮ জুলাই উত্তরপ্রদেশের গোন্ডা স্টেশনের কাছে একটি ট্রেনের আটটি কোচ ছিটকে পড়ে। সেই ঘটনায় চারজনের মৃত্যু ও ৩৫ জনের বেশি জখম হয়েছিলেন। এরপর ৩০ জুলাই হাওড়া-মুম্বই মেলের সঙ্গে মালগাড়ির সংঘর্ষে এই ঘটনা ঘটল। এইসব ট্রেন দুর্ঘটনা যে প্রশ্নগুলি খাড়া করেছে, তা হল হয় সিগন্যালিং ব্যবস্থা নয়তো রেলট্রাকে গড়বড়। কিন্তু, সাধারণ মানুষের প্রশ্ন এভাবে আর কতদিন মৃত্যুশকটে প্রাণ হাতে করে চলতে হবে? যে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দলগুলিও।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও তৃণমূল কংগ্রেস এবং দলের অন্য এমপিরাও দুর্ঘটনার তীব্র নিন্দা করে কেন্দ্রকে দুষেছেন। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে এক্সবার্তায় বলা হয়েছে, ভারতের ঘুম ভাঙল ফের একটি ভয়ঙ্কর ট্রেন দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়ে। ডি-রেলমন্ত্রীর ব্যর্থতার জন্য দেশের নিরীহ মানুষের প্রাণ চলে যাচ্ছে। বাজেটে রেল সুরক্ষা নিয়ে একটি কথা না বলার ফলেই এই দুর্ঘটনাগুলি ঘটেই চলেছে। যাত্রীদের সুরক্ষার দিকে নজর দেওয়ার আগে বিজেপি এরকম মানুষের প্রাণ নিতে চায়, প্রশ্ন তুলেছে ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম শরিক তৃণমূল।
সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবও সরকারকে রেল নিরাপত্তায় নজর না দেওয়া নিয়ে আক্রমণ করেন। তাঁর কথায়, এই সরকার ট্রেন দুর্ঘটনায় রেকর্ড গড়তে চায়। ওদের আমলেই রেকর্ড সংখ্যায় প্রশ্নফাঁস হয়েছে। এখন রেল দুর্ঘটনায় রেকর্ড গড়বে বিজেপি।
শিবসেনা উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠীর এমপি প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে রিল মিনিস্টার বলে উপহাস করে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন। তৃণমূল এমপি সুস্মিতা দেব এবং সাগরিকা ঘোষও এই দুর্ঘটনার জন্য বিজেপি সরকারকে গিলোটিনে চাপিয়েছেন। ট্রেন দুর্ঘটনা এখনকার দিনে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং ভারত সরকারের এ ব্যাপারে কোনও হেলদোল নেই, বলেছেন তাঁরা।