শেষ আপডেট: 27th November 2020 10:52
দ্য ওয়াল ব্যুরো: লকডাউনে দীর্ঘদিন বন্ধ থেকেছে রেল, বাস, মেট্রো। শহরের মানুষের যেমন হয়েছে ভোগান্তি, অন্যদিকে গ্রামের মানুষেরও নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল। যাতায়াতের জন্য সময়মতো যানবাহন না পাওয়ায় প্রতিটা মানুষই তীব্র অসুবিধার মধ্যে পড়েছিলেন। এই জন্য সময়মতো পৌঁছতে পারছিলেন না ডাক্তারের কাছে। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের নিয়ে ছিল সবথেকে বড় চিন্তা। এই বছরে যেমন দুর্ভোগের অন্ত নেই, তেমনই এই কঠিন সময়ে মানুষের জন্য নিজে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। নাসিকের রেলু বাসাবি। নর্মদা নদীর তীরে এক গ্রামে বেড়ে উঠেছেন তিনি। এখন মহারাষ্ট্রের চিমলখাড়ি অঞ্চলে একটি অঙ্গনওয়ারিতে কাজ করেন। লকডাউনের পর সেই এপ্রিল মাস থেকে এখনও পর্যন্ত নিজে একা দায়িত্ব নিয়ে মহারাষ্ট্রের আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের ও শিশুদের জন্য খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। লকডাউনের পর দীর্ঘদিন ধরেই আদিবাসী অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ ছিল। তখন রেলু স্থানীয় এক মৎস্যজীবীর থেকে একটি নৌকা ভাড়া নেন। সেখান থেকে রোজ নদীতে ১৮ কিলোমিটার পথ নিজে নৌকা চালিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌছান। সেখান থেকে আরও খানিকটা পথ পায়ে হেঁটে তারপর পৌঁছান গ্রামে। সঙ্গে থাকে ছ'বছরের কম বয়সি শিশুদের ও অন্তঃস্বত্তা মহিলাদের জন্য থাকে প্রয়োজনীয় খাবার, ফল, ওষুধ। আসলে এত প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্য পরিষেবা নেই বললেই চলে। কোনও ডাক্তাররা যান না এখানে। এতগুলো মাস ধরে ওখানকার মানুষগুলো কী খাবেন, কীভাবে আছেন, কেমন আছেন, এই প্রশ্নগুলোই রেলুর মনের মধ্যে জেগেছিল। তাঁদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করেই নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নেন রেলু। তাই একা একাই রোজ পৌঁছে যান দাদার, আলিগাটের প্রত্যন্ত গ্রামে। রেলু নিজে মুখে বলেন, "প্রতিদিন নৌকা বেয়ে এতটা পথ যাওয়াটা সহজ নয়। বাড়ি ফেরার সময় হাতে খুব যন্ত্রণা করে। কিন্তু তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। আমার চিন্তা হয় ওই মানুষগুলোর জন্য। তাঁরা যাতে সুস্থ থাকে, অপুষ্টিতে না ভোগে তার জন্যই তো যাওয়া। যতদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হচ্ছে, আমি ততদিন এভাবেই যাতায়াত করব।" রেলুর কাজকে বহু মানুষ প্রশংসা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকেও তাঁকে শুভেচ্ছা জানান হয়েছে। ননদারবার জেলা পরিষদ থেকেও এই কাজের জন্য রেলুকে বাহবা জানিয়েছেন। নিঃসন্দেহে এমন দুঃসময়ে এক মানবিক মুখ এখন রেলু বাসাবি।