শেষ আপডেট: 27th July 2024 18:07
দ্য ওয়াল ব্যুরো: শনিবার নাটকীয় ভাবে নীতি আয়োগের বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে ওই বৈঠকে বলতে দেওয়া হয়নি। মমতার সেই অভিযোগ যখন খণ্ডন করতে নেমে পড়েছেন নির্মলা সীতারামনরা, তখন দৃশ্যত ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় পৌঁছে আরও ব্যাখ্যা দিলেন। বললেন, “ওরা অপমান করেছে। আমি একজন প্রবীণ রাজনীতিক। গোটা বৈঠকে বিরোধীদের একমাত্র কণ্ঠস্বর। সেই কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা হয়েছে। তাই বয়কট করে বেশ করেছি”।
এদিন বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ কলকাতায় এসে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ছিলেন। বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমার আগে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু বলেছেন। উনি ২০ মিনিট ধরে ওঁর কথা বলেছেন। আমি ৫ মিনিট বলতে না বলতেই রাজনাথ সিং বেল বাজাতে শুরু করেছেন।”
মমতার কথায়, "রাজনাথ সিং বৈঠকের পৌরোহিত্য করছিলেন। তাঁর এক পাশে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অন্য পাশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। নিশ্চয়ই রাজনাথ সিংকে বলে দিয়েছিলেন, পাঁচ মিনিট বাজতে না বাজতেই বেল টিপতে শুরু করতে। বলেছিলেন, ৬-৭ মিনিট বলতে দেবে। তাও দেয়নি। ৭ মিনিট দিলেও না হয় আমার সবকথা বলে আসতে পারতাম। কিন্তু যেভাবে বেল বাজাতে শুরু করলেন, তা বিরক্তিকর। অপমানজনক। মানে বলছে, এবার বন্ধ করো। স্টপ স্টপ। তাই বললাম, তোমরা যখন আমাকে বলতেই দেবে না, তাহলে থেকে লাভ কী! আমি চললাম।"
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ছোট রাজ্য হলেও অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে ১৫ মিনিট ধরে বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অরুণাচল, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রীও অনেক বেশি সময় ধরে বলেছেন। তাঁদের বক্তৃতার সময়ে বেল বাজানো হয়নি।
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন তাঁর এহেন অসন্তোষের কথা বলছিলেন, তখন স্লেট কালারের বড় চেক শার্ট পরে অভিষেক কঠিন মুখ করে তফাতে দাঁড়িয়েছিলেন। গালে দুদিনের শেভ না করা দাড়ি।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, অবিজেপি শাসিত রাজ্যের কোনও মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে যোগ দেয়নি। শুধু আমি ছিলাম বিরোধীদের মধ্যে থেকে। আমি সবার প্রতি বঞ্চনার কথা বলছিলাম। বাংলার বঞ্চনার কথাও বলছিলাম। ১ লক্ষ ৭১ হাজার কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে কেন্দ্রের থেকে। এ বছর সেই সংখ্যাটা আরও বেড়ে যাবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, কোনও রাজ্য বেশি টাকা পেলে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু ওদের কৌশল হল বিজেপি আর তাদের বন্ধুরাই টাকা পাবে। বাকিরা পাবে না। এরকম ভাবে রাজ্যগুলোকে পঙ্গু করে দিলেন দেশটাই যে পঙ্গু হয়ে যাবে ওরা বোঝে না।
এদিনের বৈঠকে যেটুকু সময় পেয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তার মধ্যেই বাংলাদেশ প্রসঙ্গও তুলেছেন। তাঁর কথায়, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে জল চুক্তির ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ একটা পক্ষ। আমি বললাম, রাজ্যকে না জানিয়ে তোমরা কিছু করতে পারো না। ফারাক্কা চুক্তির পুনর্নবীকরণ করছ, কিন্তু বাংলা জানতে পারছে না। ফারাক্কা চুক্তির একটা শর্ত ছিল উত্তরবঙ্গে বন্যা নিয়ন্ত্রণে রাজ্যকে ৭০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। সেটার কী হল!
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, যেহেতু ভুটান ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন নদী রয়েছে, তাই ভুটানের সঙ্গেও একটা জল চুক্তি হওয়া দরকার। তাঁর কথায়, এটা আমার লিখিত বক্তৃতায় ছিল না। তবে বৈঠকে বলেছি।
মমতা বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার অভিযোগ তুলতেই কেন্দ্রের মন্ত্রীরা তা খণ্ডন করতে নেমে পড়েন। সেই নিয়ে আবার সাংবাদিকরা মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন। জবাবে মমতা, তোমরা তো বৈঠকে ছিল না। শুধু বিজেপি ছিল। তারা যা খাওয়াতে চাইছে তোমরাই তাই খাচ্ছ। ওঁরা আমাকে বলতে দেয়নি। ওঁরা বিরোধীদের কথা শুনতে চায় না। তাই বলছি, বেরিয়ে এসে বেশ করেছি।