শেষ আপডেট: 24th June 2024 22:28
দ্য ওয়াল ব্যুরো: অবশেষে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি বা এনটিএ-র তরফে স্বীকার করা হয়েছে, যে নিট-ইউজির প্রশ্নপত্রগুলিও বিকৃত করা হয়েছিল। এবার এ বিষয়ে এক প্রত্যক্ষদর্শীকেও পাওয়া গেল। তিনি এনটিএ-র এক ডিস্ট্রিক্ট কোঅর্ডিনেটর ডক্টর আহসানুল হক, হাজারিবাগের ওয়েসিস স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তিনি জানিয়েছেন, ৫ মে তাঁর স্কুলে নিট পরীক্ষা হয়েছিল। সেখানেই বিহার পুলিশের তরফে ধরা পড়েছিল প্রশ্নপত্রের এই অসঙ্গতি। তারা তদন্তও শুরু করেছিল, তবে তার পরে গোটা দেশজুড়ে অভিযোগ ওঠার পরে এই তদন্তভার চলে গেছে সিবিআই-এর হাতে।
আহসানুল হক সোমবার একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, 'নিট নিয়ে তদন্ত শুরু হওয়ার পরে ২১ জুন আমার স্কুলে এসে কাগজপত্র পরীক্ষা করেন তদন্তকারীরা। তখনই দেখা যায়, যে সাতটি সুরক্ষার স্তরে মোড়া ছিল প্রশ্নপত্র, তার সবচেয়ে বাইরের এবং সবচেয়ে ভিতরের স্তরে হাত দেওয়া হয়েছিল। বাকি স্তরগুলিতে হাত পড়েনি।'
মাঝের স্তরগুলি অক্ষত রেখে ভিতরের স্তর কীভাবে বিকৃত করা হয়েছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয় তদন্তে। জানা গেছে, এই বাইরের স্তরগুলির মধ্যে একটি হল, শক্তপোক্ত ধাতব বাক্স। তাতে আবার দু'সেট তালা রয়েছে। তালাগুলির মধ্যে একটি ডিজিটাল লক, যা পরীক্ষার দু'ঘন্টা আগে নিজে থেকেই খুলে যাওয়ার মতো করে প্রোগ্রাম করা থাকে। অন্যটি আবার এমনই একটি যান্ত্রিক তালা, যা নির্দিষ্ট একটি ফাইল দিয়ে কাটতে হবে, তবে বাক্স খুলবে। এই স্তরটি অবিকৃত ছিল বলেই জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
ডক্টর আহসানুল হক বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, প্রশ্নপত্র যখন আনা হয়েছে, অর্থাৎ ট্রান্সফারের সময়ে, তখনই কিছু একটা কাণ্ড ঘটিয়েছে অপরাধীরা। জানা গেছে, ব্লু ডার্ট কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে রাঁচি থেকে হাজারিবাগ এসেছিল প্রশ্নপত্র, তারপরে তা সংরক্ষিত ছিল স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার লকারে। এইখানেই ভুল হয়ে গেছে বলে আন্দাজ করছেন পরীক্ষার কর্মকর্তারা। কারণ এভাবে প্রশ্নপত্র আসারই কথা নয়।
সাধারণত দিল্লি থেকে ফ্লাইটে করে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজধানীতে আনা হয় প্রশ্নপত্র। তারপরে সেগুলিকে স্টেট ব্যাঙ্কের লকারে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পরে প্রশ্নপত্রের সিল করা বাক্সগুলি পরীক্ষার দু'ঘণ্টা আগে খোলা হয় ব্যাঙ্কের ভিতরেই। তবে স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেট এবং কেন্দ্র প্রধানদের উপস্থিতিতে তা খোলা হয় এবং পুরো প্রক্রিয়াটি ভিডিও করা হয়। এর পরে সিল করা খামগুলি পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে সেগুলি ইনভিজিলেটরের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এবার সেই পদ্ধতিতে অনেক গন্ডগোল হয়েছে। এমনকি সিল করা বাক্সগুলি খোলার সময়ে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুই পরীক্ষার্থী!
নিট দুর্নীতির তদন্ত যত এগোচ্ছে, বিহার ও ঝাড়খণ্ড জুড়ে গ্রেফতারিও ততই বাড়ছে। দিন তিনেক আগেই ঝাড়খণ্ডের দেওঘর থেকে ছ'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সকলেই বিহারের নালন্দার বাসিন্দা, দেওঘরের একটি ভাড়া বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। বিহার থেকে এখনও পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে 'সলভার গ্যাং'-এর তিন জন ইতিমধ্যেই পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, যে তারা প্রতিটি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে উত্তরপত্র বাবদ ৩০-৪০ লাখ টাকা করে নিত। অন্যদিকে, পুলিশ অন্তত ৩০ জন পরীক্ষার্থীর খোঁজ পেয়েছে, যারা সমাধান করা উত্তরপত্র হাতে পেয়েছিল। অর্থাৎ, এ কথা স্পষ্ট, গোটা বিহার এবং ঝাড়খণ্ড জুড়ে পরিকল্পিতভাবে একটি বিশাল নেটওয়ার্ক চলছে।
শুধু বিহার এবং ঝাড়খণ্ড নয়। নিটের তদন্তে লাতুরের এক স্কুল শিক্ষকও গ্রেফতার হয়েছেন। তাঁর গ্রেফতারির সঙ্গে সঙ্গে নিট-দুর্নীতির সঙ্গে দিল্লি ও মহারাষ্ট্রেরও যোগসূত্র পাওয়া গেছে। উঠে এসেছে আরও দুই শিক্ষকের নাম। লাতুরের একটি সরকারি স্কুলের শিক্ষক জলিল উমারখান পাঠান এবং সঞ্জয় তুকারাম যাদব স্কুলে পড়ানোর পাশাপাশি প্রাইভেট কোচিং সেন্টারও চালাতেন। সেখানেই তাঁরা নিট-পরীক্ষার্থীদের থেকে গোপনে টাকা নিতেন এবং অসৎপথে তাদের সাহায্য করতেন। জানা গেছে, দিল্লির কোনও এক গঙ্গাধরের সঙ্গে সংযোগ ছিল তাঁদের।