শেষ আপডেট: 13th December 2023 07:44
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পাথর প্রতিমার আয়লা-বিধ্বস্ত গ্রামের একটা খবর সেই সময় খুব ছড়িয়েছিল। ওই গ্রামের বছর বারোর মেয়েটাকে পড়শি গ্রামেরই এক ‘দিদি’ এসে বলেছিল ডান্স স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবে। পয়সাকড়ি লাগবে না। ! শুধু তাই নয়, ওই ‘দিদি’ শমিমার বাবা-মাকে এও বলেছিল, ওই ‘ডান্স স্কুলে’ খেতে-পরতেও দেওয়া হবে, মাস গেলে কিছু টাকাও দেওয়া হবে হাতে। বিশ্বাস করে মেয়েকে ছেড়ে দিয়েছিলেন বাবা-মা। সেই মেয়ের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। দেড় বছর পরে প্রায় ৯-১০টি মেয়ের সঙ্গে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করা হয় আগরার এক যৌনপল্লি থেকে।
শিশু পাচার, শিশুদের অপহরণ করে বেচে দেওয়ার মতো ঘটনা অহরহ ঘটছে দেশে। শিশুদের নিয়ে অপরাধের বিরাম নেই। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, গত পাঁচ বছরে দেশে নিখোঁজ ৪৭ হাজারের বেশি শিশু। এই নিখোঁজদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই নাবালিকা। আর প্রাপ্তবয়স্ক মিলিয়ে সংখ্যাটা প্রায় ৮৩ হাজার। ২০২১ সালের তুলনায় নিখোঁজ শিশুর সংখ্যায় ৭.৫ শতাংশ বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গিয়েছে।
এনসিআরবি-র রিপোর্ট বলছে, , ২০২২ সালে মোট ৮৩ হাজার ৩৫০ জন শিশু নিখোঁজ হয়ে যায় দেশে। এর মধ্যে ছেলের সংখ্যা ২০ হাজার ৩৮০, মেয়ের সংখ্যা ৬২ হাজার ৯৪৬ এবং রূপান্তরকামী শিশুর সংখ্যা ২৪। এদের মধ্যে খুব কম সংখ্যককেই উদ্ধার করা গিয়েছিল। ২০২১ সালে দেশে মোট নিখোঁজ শিশুর সংখ্যা ছিল ৭৭ হাজার ৫৩৫। নিখোঁজদের খোঁজে নেমে ২০২২ সালে ৮০ হাজার ৫৬১ শিশুকে উদ্ধার করা সম্ভব হয় বলেও জানিয়েছে এনসিআরবি, যার মধ্যে ছেলের সংখ্যা ছিল ২০ হাজার ২৫৪, মেয়ের সংখ্যা ছিল ৬০ হাজার ২৮১।
চমকে দেওয়ার মতো বিষয় হল, ২০১৪ সালে, শুধু পশ্চিমবঙ্গ থেকেই ১৪ হাজার ৬৭১টি শিশু-নিখোঁজের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। যা, ওই বছর সারা দেশে নিখোঁজ শিশুদের ২১.৬ শতাংশ। তার মানে, সারা দেশে নিখোঁজ শিশুদের প্রতি পাঁচ জনের এক জনই এই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। উদ্বেগের শেষ এখানেই নয়। এনসিআরবি-র রিপোর্ট বলছে, ২০১০ থেকে ২০১৪- এই পাঁচ বছরে পশ্চিমবঙ্গ ছিল শিশু অপহরণের ক্ষেত্রে প্রথম পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে একেবারে শীর্ষে।
শিশু অধিকার বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, শিশু-পাচার সমস্যার মোকাবিলায় সরকারি স্তরে আইনের কোনও অভাব নেই। নতুন ‘পক্সো’ (‘প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন্স ফ্রম সেক্স্যুয়াল অফেন্সেস’) আইনটি কার্যকর হওয়া সত্ত্বেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অত্যাধুনিক সাইবার প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কেন্দ্রীয় স্তরে ‘চাইল্ড ট্র্যাক’পোর্টালও চালু হয়েছে। তবে যত দিন পর্যন্ত সমাজের একেবারে সাধারণ স্তরের মানুষ এ ব্যাপারে সচেতন না হচ্ছেন, তখন এর সার্বিক রূপায়ণ সম্ভব নয়। প্রত্যন্ত গ্রামে শিশু-পাচার চক্রের আড়কাঠিরা কখন কীভাবে কিশোরীদের চাকরি বা বিয়ের টোপ দিয়ে পাচারের চেষ্টা করছে তা জানতে ও বুঝতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনও এফআইআর দায়ের হয় না, ফলে অপরাধের তদন্তও হয় না। অনেকসময়েই পাচারকারীদের টোপে হতদরিদ্র পরিবারের বাবা-মায়েদের চোখ ধাঁধিয়ে যায়। ফলে বিপদ ঘটতে দেরি হয় না। তাই গোড়া থেকেই এই সমস্যা নির্মূল করতে হবে।