ওম্বাডসমানের হাত থেকে স্বীকৃতি গ্রহণ কিশোর ইসলামের
শেষ আপডেট: 25th March 2024 17:33
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কিশোরের নাম ইসলাম খালিলভ। বয়স মাত্র ১৫। অথচ রাশিয়ার বিধ্বংসী জঙ্গি হামলায় অন্তত একশোরও বেশি সাধারণ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়ে খবরের শিরোনামে চলে এসেছে সে। জানাজানি হতেই প্রশংসার ঢল নেমেছে বিশ্বের নানা প্রান্ত থাকে।
রুশ সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, মস্কোর উপকণ্ঠে ক্রাসনোগরস্কের ক্রোকাস সিটি শপিং মল ও সংলগ্ন প্রেক্ষাগৃহের একটি ক্লোকরুমের (মালপত্র রাখার ঘর) তত্ত্বাবধায়কের কাজ করত ইসলাম। সেই সুবাদে প্রেক্ষাগৃহের অন্দরের অলিগলি-প্যাসেজ-সিঁড়ি সবই চেনে সে। কাজের প্রশিক্ষণ হিসেবে আপৎকালীন পরিস্থিতি হলে কী করতে হবে—সেটাও শেখানো হয়েছিল তাকে। স্রেফ উপস্থিত বুদ্ধি ও সাহসের জেরে সেই প্রশিক্ষণ ও নিজের জ্ঞানগম্যি দিয়েই শতাধিক মানুষকে ওই অভিশপ্ত সন্ধ্যায় প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরোতে সাহায্য করে সে।
গত ২২ মার্চ রাত আটটা নাগাদ জনপ্রিয় রুশ ব্যান্ড ‘পিকনিক’-এর কনসার্ট শুরু হবার ঠিক আগে ভিড়ে ঠাসা ক্রোকাস সিটি প্রেক্ষাগৃহে হামলা চালায় সশস্ত্র বন্দুকবাজের দল। এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে একাধিক জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়েও অনেকে প্রাণ হারান। মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ১৩০ ছাড়িয়েছে। ইসলাম সেদিন ওই প্রেক্ষাগৃহের মালখানার দায়িত্বে ছিল। নিজেই জানিয়েছে, ‘হঠাৎ এলোপাথাড়ি গুলির শব্দ হতেই বুঝতে পারি, কিছু একটা বিপদ হয়েছে। হঠাৎ দেখি, হুড়মুড়িয়ে লোকজন বেরিয়ে আসছেন। আমি চটপট তাঁদের ইশারা করতে থাকি, বলি কোনদিকে গেলে বেরনো নিরাপদ। আমাদের কাজের শুরুতেই এই নিয়ে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল। সেটা এভাবে কাজে আসবে, ভাবিনি।’
একাধিক ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, ইসলাম তারস্বরে ভীত, সন্ত্রস্ত দর্শকদের এক্সপোর দিক দিয়ে বাইরে যাওয়ার রাস্তা দেখাচ্ছে। চিৎকার করে করে সে সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ‘আমি ঠিক করেছিলাম, আমি সবার শেষে থাকব। যাতে কেউ বাদ না পড়ে যান, বা আটকে না থাকেন।’ ততক্ষণে আগুন জ্বলে উঠেছে একাধিক জায়গায়। কিন্তু কিশোর ইসলামের তৎপরতায় প্রাণে বেঁচেছেন অন্তত একশোর বেশি মানুষ।
ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনার দায় নিয়েছে আইএস জঙ্গিগোষ্ঠী। রুশ তদন্তকারীরা চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছেন অপরাধীদের খোঁজে। একাধিক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে আদালতে পেশ করা হয়েছে। ইসলাম অবশ্য বলছে, সে কোনও নায়কোচিত কাজ করেনি। সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, ‘সত্যি বলছি, আমি কোনও নায়কের কাজ করিনি। স্রেফ নিজের কর্তব্যটুকুই করেছি। বিপদে মানুষের প্রাণ বাঁচানোটাই তো উচিত।’ সঙ্গে এও জানিয়েছে, তার মা সব শুনে খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছেন। সে নিজেও একজন বন্দুকবাজকে গুলি চালাতে দেখেছে। আতঙ্ক এখনও কাটছে না তার।
ইতিমধ্যেই রুশ শিশু ও কিশোর অধিকার সুরক্ষা বিষয়ক ‘ওম্বাডসমান’ মারিয়া লভোভা বিলোভা ওই কিশোরকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদার সঙ্গে পুরস্কৃত করেছেন।