শেষ আপডেট: 11th December 2020 17:03
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিরোধী নেত্রী থেকে উঠে এসে বাংলায় পালাবদল ঘটানোয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা ঘরোয়া আলোচনায় কখনও অস্বীকার করেন না অধীর চৌধুরী। কিন্তু কংগ্রেসের এই বহু পোড় খাওয়া নেতা যে নির্ভেজাল মমতা-বিরোধী তা সুপরিচিত। অথচ শুক্রবার সেই তিনি অধীর চৌধুরী যখন নাড্ডার কনভয়ে হামলার প্রসঙ্গে বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখাতে চাইলেন আমরাই মারতে পারি’—অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। দিদির পক্ষে কি বলছেন অধীর? কারণ, ধর্মনিরপেক্ষ দর্শন নিয়েই রাজনীতি করেন অধীরবাবু। কে বলতে পারে, গেরুয়া পার্টির কনভয়ে হামলার ঘটনা তাই তিনি সমর্থন করছেন! কিন্তু না! ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে যায় পরক্ষণেই। ব্যাখ্যা করে অধীরবাবু বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, কনভয়ে হামলার ঘটনা সাজানো। আমিও তাই মনে করি। সাজানোই বটে। তৃণমূল সাজিয়েছে। অনেক প্ল্যান করে সাজিয়েছে। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘুদের দেখাতে চেয়েছেন, দেখো আমরাই মারতে পারি।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির কথায়, “এই সোজা ব্যাপারটা অনেকে হয়তো ধরতে পারেননি। তা হলে শুনুন। আমি বারবার বলেছি, বাংলায় সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্ম দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা ষোলো আনা সঠিক। বিধানসভা ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুসলমানদের দেখাতে চাইলেন, বিজেপি সভাপতির কনভয়ে আঘাত হানার ক্ষমতা তৃণমূলেরই রয়েছে। আর কারও নেই। এটাই তো মেরুকরণের রাজনীতি। তাই না!” তিনি আরও বলেন, “লোকসভা ভোটের আগেও তিনি এটা করেছেন। কেউ জয় শ্রীরাম বললেই উনি তেড়ে যেতেন। ওটাও আসলে লোক দেখানো। টার্গেটেড অডিয়েন্সের জন্য।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির মতে, এসব করে বিজেপির সুবিধা করে দিতে চাইলেন নেত্রী। বাংলাকে হিন্দু-মুসলমানে বেটে দিতে চাইলেন। বাংলায় বিভাজনের রাজনীতির সিক্কার এপিঠ ওপিঠ হল তৃণমূল-বিজেপি। বৃহস্পতিবার ধর্মতলার এক সভামঞ্চ থেকে তৃণমূলনেত্রী ইঙ্গিত করেছিলেন, বিজেপি নিজেরাই নিজেদের মিছিলে গোলমাল পাকায়। শুক্রবার সে কথার পুনরাবৃত্তি করে তৃণমূলের দুই সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌগত রায় বলেছেন, বিজেপির তরফ থেকে প্রথমে প্ররোচনা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির বক্তব্য, “গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় একটি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলের সভাপতির কনভয়ে কোনও রাজ্যে যদি সংগঠিত হামলা হয়, তা লজ্জার। বাংলার জন্যও এটা অশুভ। কারণ, এটা রাজনৈতিক অস্থিরতার বার্তা দেয়। আর অস্থির পরিস্থিতিতে উন্নয়ন ও অগ্রগতি কখনওই সম্ভব নয়”। এখানেই থামেননি অধীরবাবু। শুক্রবার তিনি বলেন, “বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘নৌটঙ্কি!’। আর ভাইপো বলেছেন, মানুষের রাগের বহিঃপ্রকাশ। আমার প্রশ্ন কোনটা সঠিক। রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে গেলে কি কারও উপর এরকম আধলা ইট মারা যায়। তা কি আইনসিদ্ধ? তা হলেও সেটাও ঘোষণা করে দিক নবান্ন—যে কারও উপর রাগ থাকলেই আধলা ইট মারা যাবে”। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে বাংলায় বাম-কংগ্রেস জোট হয়েছিল। একুশের ভোটেও ফের তা হতে চলেছে। অধীরবাবু-সূর্যকান্ত মিশ্রদের দাবি বাংলায় ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির পরিসরকে মজবুত ও প্রসারিত করতে তাঁরাই কাজ করছেন। বাংলার মানুষকে তা বুঝতে হবে। মানুষ তা বুঝলে রাজ্যেরই মঙ্গল হবে।