শেষ আপডেট: 18th July 2024 15:49
দ্য ওয়াল ব্যুরো: শ্রাবণ মাসে শিবলিঙ্গের মাথায় জল ঢালতে যান লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী। দেশের সর্বত্র এই পুণ্যকামী মানুষ জলযাত্রা করলেও উত্তর ভারতে একে কাঁওয়াড় যাত্রা বলা হয়। কিন্তু, উত্তরপ্রদেশ পুলিশের নয়া ফরমানে কাঁওয়াড় যাত্রা শুরুর মুখেই বিজেপি সরকার বিরোধী দলগুলি এবং সুশীল সমাজের তাণ্ডবনৃত্যের সামনে পড়েছে। কেউ একে দক্ষিণ আফ্রিকার জাতিবিদ্বেষের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তো কেউবা হিটলারের জার্মানির সঙ্গে।
আগামী ২২ জুলাই শুরু হচ্ছে কাঁওয়াড় যাত্রা। এই শ্রাবণ মাসে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী নিরামিষ খান, প্রতিবার সোমবার উপবাস পালন করেন। কেউবা বাঁক কাঁধে মাটির অথবা ধাতুর কলসিতে গঙ্গাজল নিয়ে গিয়ে স্থানীয় মন্দিরে শিবের মাথায় জল ঢালতে যান।
গতকাল, বুধবার উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগর পুলিশ এক নির্দেশিকায় বলেছে, কাঁওয়াড় যাত্রাপথে সমস্ত খাবার ও অন্যান্য দোকানের বাইরে দোকান মালিকের নাম বড় বড় অক্ষরে লিখে রাখতে হবে। যাতে কাঁওয়াড়িরা (জলযাত্রী) বুঝতে পারেন দোকান মালিকের ধর্ম কী?
জেলার পুলিশ সুপার অভিষেক সিং বলেন, কাঁওয়াড় যাত্রার প্রস্তুতি চলছে। আমাদের এলাকার সমস্ত খাবারের দোকান, হোটেল, ধাবা এবং ঠেলাগাড়ির দোকানদারদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে যাতে তাঁরা তাঁদের নাম সামনে লিখে রাখেন। এটা করা হচ্ছে এই কারণে যে, জলযাত্রীদের মনে যাতে কোনও সন্দেহ না জাগে তাঁরা কোন দোকানের খাবার খাচ্ছেন বা কিনছেন। ভবিষ্যতে যাতে এনিয়ে কোনও অভিযোগ না আসে। কারণ এর সঙ্গে জেলার আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন জড়িত।
কংগ্রেস মুজফফরনগর পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছে। এই নির্দেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে বলে পুলিশ আধিকারিককে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতা পবন খেরার অভিযোগ, তাহলে কি বুঝতে হবে হিন্দুদের বিক্রি করা মাংস ডাল-ভাত হয়ে যাবে? পুলিশি ফরমানকে মুসলিমদের উপর আর্থিক অবরোধ নাকি দলিতদের উপর আর্থিক অবরোধ বলে ব্যাখ্যা করে খেরা প্রশ্ন তুলেছেন নাকি দুই সম্প্রদায়কেই ভাতে মারতে চাওয়া হয়েছে? তিনি রাগের সুরে জানতে চেয়েছেন, মুসলিমরা যখন ফল বিক্রি করে তখন তো সেগুলো গোস্ত হয়ে যায় না?
সমাজবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদব আদালতের কাছে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করার আর্জি জানিয়েছেন। সপা সুপ্রিমো বলেন, এই ধরনের নির্দেশ সামাজিক অপরাধ। সরকার রাজ্যের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করতে চাইছে। পাশাপাশি লোকসভা সদস্য মিম প্রধান আসাউদ্দিন ওয়েইসির দাবি, এই পদক্ষেপের অর্থ হল কাঁওয়াড়িরা যাতে কোনও মুসলিম দোকান থেকে জিনিসপত্র না কেনেন, খাবার না খান।
একে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবিদ্বেষবাদ এবং হিটলারের জার্মানির নাৎসিতন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করেন ওয়েইসি। প্রখ্যাত গীতিকার ও চিত্রনাট্য লেখক জাভেদ আখতারও উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এই ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁর প্রশ্ন পুলিশ এটা ঠিক করার কে? নাৎসি জার্মানিতে ইহুদি বয়কটের সময় দোকানের সামনে লিখে রাখতে হতো মালিকের নাম। এখানেও তাই চালু হচ্ছে নাকি, এক্সবার্তায় লিখেছেন জাভেদ আখতার।
যদিও সর্বস্তর থেকে সমালোচনার ঝড়ের মুখে বৃহস্পতিবার জেলা পুলিশ নির্দেশিকা সংশোধন করে নিয়েছে। সামান্য অদলবদল করে দোকানিদের ইচ্ছার উপর বিষয়টি ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। এক বিবৃতিতে পুলিশ বলেছে, কোনও বৈষম্য ছড়ানো তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। জলযাত্রীদের যাতে সুবিধা হয়, সেই ব্যবস্থাই করা হয়েছিল। ফলে আগের নির্দেশিকা বদল করে দোকানিদের ইচ্ছার উপর বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা ইচ্ছা করলে নাম লিখতে পারেন অথবা নাও পারেন।