শেষ আপডেট: 17th June 2024 12:20
দ্য ওয়াল ব্যুরো: নরেন্দ্র মোদীর তৃতীয় মন্ত্রিসভার ৭২ জন মন্ত্রীর একজনও মুসলিম নন। স্বাধীন ভারতে এমন নজির নেই। মোদীর আগের দুটি মন্ত্রিসভাতেও মাত্র একজন করে মুসলিম মন্ত্রী ছিলেন। এবার একজনও মুসলিমের মন্ত্রিসভায় জায়গা না হলেও দু’জন খ্রিস্টানকে স্থান দেওয়া হয়েছে।
বিজেপির সাফ কথা, তারা ধর্মের ভিত্তিতে বিধায়ক, সাংসদ, মন্ত্রী বাছাই করে না। যদিও কেন মুসলিমদেরই বাদ দেওয়া হয়, পার্টির কাছে তার কোনও সদুত্তর নেই। এখন পদ্ম শিবিরে চর্চা শুরু হয়েছে, সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে মুসলিম সমাজ কি এই উপেক্ষার জবাব দিয়েছে ইভিএমে?
এবার লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশে পদ্ম শিবিরের ভরাডুবি নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। এমনকী অযোধ্যা তথা রাম মন্দির যেখানে অবস্থিত সেই ফৈজাবাদ লোকসভা আসনেও বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে। সেই উত্তরপ্রদেশে পার্টির কাছে জমা হওয়া প্রাথমিক পর্যালোচনা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বিজেপির বহু আসন হাতছাড়া হয়েছে মুসলিম ভোটারদের গণরোষের কারণে। ফলে দু-বছর আগে বিধানসভা ভোটে গরিব মুসলিমদের যে ভোট বিজেপির বাক্সে এসেছিল এবার তা শূন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকেছে। তারফলে বহু আসনে সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেসের প্রার্থীরা জিতে গিয়েছেন। গতবার বিজেপি রাজ্যে ৮০টি আসনের ৬৫টি জিতেছিল। এবার সেই সংখ্যা অর্ধেকের নীচে নেমে গিয়েছে।
বিজেপির অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে, নিখরচায় বাড়ি, পানীয় জল ও বিদ্যুতের লাইন দেওয়া সত্ত্বেও ‘পসমন্দা’ মুসলিমদের সমর্থন কেন হারাল পদ্ম শিবির। উত্তর প্রদেশের পসমন্দা মুসলিমরা হল সমাজের অতি দরিদ্র অংশ। তারা দলিত মুসলিম হিসাবেও পরিচিত।
যোগী আদিত্যনাথ সরকারের দাবি, প্রধানমন্ত্রী মোদীর 'সবকা সাথ...’ নীতি মেনে তারা রাজ্যের গরিব মুসলিমদের ২০ লাখ বাড়ি বানিয়ে দিয়েছে। তারপরও লোকসভা ভোটে পসমন্দা মুসলিমরা বিজেপিকে ভোট দেয়নি বলে বুথভিত্তিক ফল পর্যালোচনা করে বোঝা যাচ্ছে।
গরিব মুসলিমদের বিষয়ে প্রথম মুখ খুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দু-বছর আগে হায়দরাবাদে দলের জাতীয় কর্ম সমিতির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু হিন্দু নয়, অন্য ধর্মের গরিব মানুষের মধ্যেও দলের প্রভাব বাড়াতে হবে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে এ জন্য বিশেষ প্রকল্প হাতে নিতে পরামর্শ দেন তিনি।
মোদীর কথার পরই উত্তর প্রদেশে পসমন্দা মুসলিমদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে দল। দলের জাতীয় সংখ্যালঘু মোর্চাকে পথে নামানো হয়। উত্তর প্রদেশে জনসংখ্যার কুড়ি শতাংশ বা পাঁচ কোটি মুসলিম। মুসলিমদের আবার ৮০ শতাংশ পসমন্দা বা অতি গরিব অংশ। বিধানসভা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী যোগী ধর্মীয় মেরুকরণের লক্ষ্যে প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, ৮০ শতাংশ হিন্দুর ভোট পেলেই চলবে, চাই না কুড়ি শতাংশ মুসলিমের সমর্থন।
তারপরও দু বছর আগের সেই বিধানসভা ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছিল, পিছিয়ে থাকা মুসলিমদের প্রায় আট শতাংশ মত বদলে বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। বলা হয়, কোভিডের সময় ফ্রি রেশন এবং টিকা পাওয়ায় কৃতজ্ঞতা বসত বহু গরিব মুসলিম বিজেপিকে ভোট দেয়। তাৎপর্যপূর্ণ হল, ওই ভোটে যোগী ক্ষমতায় টিকে যান। উত্তর প্রদেশে আগের ৩৫ বছরে যা ঘটেনি।
মুসলিম সমাজের বিজেপিকে সমর্থনের আঁচ পেয়ে যোগী বিধান পরিষদে জয়ী এক মুসলিম এমএলসি-কে মন্ত্রিসভাকেও স্থান দেন। কিন্তু লোকসভা ভোটের ফল বলছে, পসমন্দা মুসলিমরা লোকসভা ভোটে সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থান নিয়েছিল। বিজেপির অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে, তাহলে কি মুসলিমরা যোগীর প্রতি সদয় এবং মোদীর উপর বিরূপ? রাজ্যের পূর্ব ও মধ্য অংশের বহু আসনেই মুসলিম ভোটাররা জয় পরাজয়ের নির্ধারক শক্তি। দেখা যাচ্ছে, ওই এলাকাতেই বিজেপি ধরাশায়ী হয়েছে বেশি। এমনকী বারাণসীতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর জয়ের মার্জিন অনেক কমে গিয়েছে। সেখানকার মুসলিমরা সমর্থন করেছে কংগ্রেস প্রার্থীকে। আগের দুটি ভোটে তারা প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিল।
দলের বড় অংশ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই রায় যোগী প্রশাসনেরই বিরোধিতা। যোগী একদিকে, নিখরচায় বাড়ি বানিয়ে দিয়েছেন বটে, কিন্তু ছোটখাটো বিবাদকে হাতিয়ার করে মুসলিমদের ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়েছেন। আক্রান্ত, ক্ষতিগ্রস্থদের সিংহভাগই পসমন্দা বা গরিব মুসলিম। তাঁর প্রশাসনের বুলডোজার শাসনের বিরুদ্ধে গণরোষ আছড়ে পড়েছে ইভিএমে। বিজেপির বড় অংশই মনে করছে মোদীকে সাজা দিয়ে পসমন্দা মুসলিমরা আসলে যোগীকেই বার্তা দিয়েছেন। তাই মাত্র দু-বছরের মধ্যে বিজেপি সম্পর্কে মতবদল করে ফেলেছেন রাজের মুসলিম সমাজ।