শেষ আপডেট: 18th June 2024 09:24
দ্য ওয়াল ব্যুরো: 'আগামী পাঁচ বছর যাদব ও মুসলিমদের জন্য কাজ করব না। কারণ ওরা আমাকে ভোট দেয়নি। আমারও ওদের ভালমন্দ দেখার দায় নেই।'-- প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে এমনই বলেছেন বিহারের এক সদ্য জয়ী এক সাংসদ। তিনি রাজ্যের উত্তর প্রান্তের লোকসভা কেন্দ্র সীতামারির সাংসদ দেবেশচন্দ্র ঠাকুর। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দল জনতা দল ইউনাইটেডের এই সাংসদের কথা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে বিহারে। কিন্তু প্রৌঢ় সাংসদ তাঁর অবস্থানে অবিচল। ‘নো ভোট-নো ওয়ার্ক।’
সীতামারি একটি মিশ্র এলাকা। সেখানে সব ধর্ম-সম্প্রদায়ের মানুষ কম-বেশি আছেন। প্রাক্তন সাংসদ ঠাকুরের বক্তব্য, ভোটের বুথ ভিত্তিক ফল বিশ্লেষণ করে তিনি বুঝতে পেরেছেন যাদব ও মুসলিমরা তাঁকে সমর্থন করেনি। তিনি নিজেই জানিয়েছেন, এক মুসলিম ব্যক্তি দিন কয়েক আগে একটি বিষয়ে সাহায্য চাইতে তাঁর বাড়িতে এসেছিলেন। তিনি তাঁকে সাফ বলে দিয়েছেন, এসেছেন ভাল কথা। চা-জল খান। কিন্তু আমার কাছ থেকে কোনও সহায়তা আশা করবেন না। কারণ, আপনারা আমাকে ভোট দেননি।
রাজনীতিতে এমন দৃষ্টান্ত অবশ্য নতুন নয়। ২০১৯-এর নির্বাচনী প্রচারে উত্তর প্রদেশের সীতামারীতে বিজেপি নেত্রী মানেকা গান্ধী প্রকাশ্য সভায় মুসলিমদের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, আমাকে ভোট না দিলে আমি আপনাদের জন্য কোনও কাজ করব না। মানেকার সেই মন্তব্যের জন্য নির্বাচন কমিশন সতর্ক করেছিল তাঁকে। আবার অনেক এমপি, এমএলএ প্রকাশ্যে কিছু না বললেও যে সব এলাকা থেকে ভোট পাননি সেখানকার উন্নয়ন নিয়ে উদাসীন থাকে। যে কারণে বারে বারেই নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি করা হয়েছে, বুথ ভিত্তিক ফল প্রকাশ বন্ধ করে এক সঙ্গে গণনা করতে।
বিহারে এমনিতেই যাদব ও মুসলিমরা লালুপ্রসাদের আরজেডি বাদে অন্য দলকে তেমন একটা ভোট দেন না। কংগ্রেস ও বাম দলগুলির বাইরে জেডিইউ-র প্রার্থীরা কিছু এলাকায় এই দুই সম্প্রদায়ের সমর্থন পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু এবার জেডিইউ-র প্রার্থীদেরও বিমুখ করে ওই দুই সম্প্রদায়। আসলে এবার প্রচারে বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের তেজ এতটাই বেশি ছিল যে মুসলিম ও যাদবেরা সদলবলে ইন্ডি জোটের প্রার্থীদের সমর্থন করে। অন্য কোনও দল তাদের কাছে গুরুত্ব পায়নি। ফলে জেডিইউ-র বিজয়ী অন্য প্রার্থীরাও এবার মুসলিম ও যাদবদের সমর্থন হারিয়েছেন। সীতামারির সাংসদ তাঁদেরই একজন।
তাঁর মন্তব্য নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছে বিরোধী দলগুলি। তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি তুলেছে বিরোধী দলের নেতারা। সাংসদ পদ বাতিলেরও দাবি জানিয়েছেন কেউ কেউ। আরজেডি বলেছে, সীতামারিতে তো বটেই, ওই সাংসদকে লোকসভাতেও জবাব দেবে তারা। বিতর্কের মুখে নীতীশের দল বলেছে, ক্ষোভ-অভিমান থেকে ঠাকুর ওই কথা বলেছেন। আসলে তিনি সকলের জন্য কাজ করেন। মুসলিম ও যাদবদের সঙ্গে তাঁর ভাল সম্পর্ক। কিন্তু এবার ওই দুই সম্প্রদায় পুরোপুরি বিমুখ করায় তিনি আবেদ-অভিমানে ওই কথা বলে ফেলেছেন। এসব কথা না বললেই ভাল হত।