শেষ আপডেট: 27th March 2024 10:16
দ্য ওয়াল ব্যুরো: উনিশের লোকসভা ভোটে বাংলায় বিজেপির প্রার্থী তালিকা তৈরিতে বড় ভূমিকা ছিল মুকুল রায়ের। নিশীথ প্রামাণিক, খগেন মুর্মু, সৌমিত্র খাঁ, শান্তনু ঠাকুরের মতো মুখগুলিকে প্রার্থী তালিকায় তুলে আনার নেপথ্যে অনুঘটক ছিলেন মুকুল। পাঁচ বছর পর এবারের তালিকা তৈরিতে মুকুলের চেয়েও বড় ভূমিকা রইল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। প্রার্থী তালিকার ছত্রে ছত্রে যেন তাঁরই সাক্ষর।
কলকাতা উত্তর আসনে তাপস রায়, দমদমে শীলভদ্র দত্ত, আলিপুরদুয়ারে মনোজ টিগ্গা, তমলুকে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, কৃষ্ণনগরে রাজমাতা অমৃতা রায়, ঘাটালে হিরণ চট্টোপাধ্যায়, মেদিনীপুরে অগ্নিমিত্রা পল, বর্ধমান পূর্বে অসীম সরকার—এ সবই শুভেন্দুর প্রস্তাবিত নাম বলে সূত্রের দাবি।
শুধু কি তাই! জানা গিয়েছে, সন্দেশখালির নির্যাতিতা রেখা পাত্রকে বসিরহাটে প্রার্থী করার ব্যাপারটাও তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। তা ছাড়া তাপস রায়কে কলকাতা উত্তর আসনে প্রার্থী করার পর বরানগর উপ নির্বাচনে সজল ঘোষকে টিকিট দেওয়ার সুপারিশ ছিল শুভেন্দুর।
এই পর্ব এখনও শেষ হয়নি। চারটি আসনে বিজেপি এখনও প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেনি। ওই চার আসন হল—বীরভূম, ঝাড়গ্রাম, ডায়মন্ড হারবার ও আসানসোল। বীরভূমে সদ্য ইস্তফা দেওয়া পুলিশ অফিসার দেবাশিস ধর এবং ঝাড়গ্রামে চিকিৎসক পুণেত টুডুকে প্রার্থী করার প্রস্তাব দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। তা ছাড়া আসানসোল আসনে জীতেন্দ্র তিওয়ারিকে প্রার্থী করার পক্ষে শুভেন্দু দলের মধ্যে সওয়াল করেছেন বলেই খবর। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ নেতার কথায়, ‘দাদা হলেন ভোকাল ফর লোকাল’। বাইরে থেকে কাউকে আনার তুলনায় স্থানীয়দের উপর ভরসা করার পক্ষে শুভেন্দু। সব আসনে তা সম্ভব হয়নি ঠিকই, তবু যতটা সম্ভব চেষ্টা করা হয়েছে।
বস্তুত কংগ্রেস ও বিজেপি ঘরানায় প্রার্থী বাছাইয়ের মৌলিক কাঠামো মোটামুটি ভাবে এক। বিজেপি ইদানীং তাতে পেশাদারিত্বের ছোঁয়া এনেছে। দলের নেতাদের সুপারিশ ছাড়াও বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে এলাকা ধরে ধরে সমীক্ষাও চালায়। সম্ভবত সেই সমীক্ষার কারণে আলিপুরদুয়ারে জন বার্লাকে আর টিকিট দেওয়া হয়নি। একই ভাবে ঝাড়গ্রামে কুনার হেমব্রমকে টিকিট দেয়নি দল। রায়গঞ্জ থেকে পুনরায় টিকিট পাননি প্রাক্তন মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীও।
রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, এমন নয় যে এবারের লোকসভা ভোটে প্রার্থী তালিকা তৈরিতে শুধু শুভেন্দুরই ভূমিকা ছিল। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বা বাংলার দায়িত্বে থাকা দিল্লির পর্যবেক্ষকরা কিছু কিছু নাম প্রস্তাব করেছেন। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে ফারাকটা হল, শুভেন্দু তাঁর প্রস্তাবিত নামগুলির পক্ষে সওয়াল করে তাঁদের জন্য টিকিট নিয়ে আসতে পেরেছেন।
রাজ্য রাজনীতিতে অনেকের ধারণা হল, মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে দিলীপ ঘোষকে সরিয়ে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে পাঠানোর নেপথ্যেও শুভেন্দুরই ভূমিকা রয়েছে। তবে সূত্রের খবর, এটা মোটেই একা শুভেন্দুর প্রস্তাবে বা কারণে হয়নি। বরং দিলীপকে বর্ধমান-দুর্গাপুরে সরানোর পিছনে দিল্লির কৌশলও রয়েছে। মেদিনীপুর শহরে স্বাধীনতার পর থেকেই জনসঙ্ঘের প্রভাব ছিল। বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীক্ষার মতে, ওই আসনে দিলীপের পরিবর্তে অন্য কাউকে প্রার্থী করলেও তাঁর জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু বর্ধমান-দুর্গাপুর আসন গত ভোটে খুব কম ব্যবধানে জিতেছে বিজেপি। এবার সেখানে আর সুরেন্দ্র সিংহ আলুওয়ালিয়াকে প্রার্থী করার পক্ষে ছিলেন না অমিত শাহরা। সেই কারণেই দিলীপ ঘোষকে সেখানে তুলে আনা হয়েছে। কারণ, দিলীপ ঘোষের মুখটি গোটা বাংলায় পরিচিত। কোনও আসনেই তিনি নতুন মুখ নন। অর্থাৎ এই বিন্যাসের মাধ্যমে দুটি আসনে জয় নিশ্চিত করতে চেয়েছেন অমিত শাহরা।
সন্দেহ নেই, শুভেন্দুর প্রস্তাবিত প্রার্থীরা ভোটে সফল হলে বিজেপিতে তাঁর কদর ও ওজন আরও বাড়বে। তবে সেই বাড়ানোর চ্যালেঞ্জটাই এখন তাঁর সামনে। দিলীপ ঘোষ এখনও গর্বের সঙ্গে বলে বেড়ান, বিজেপি সভাপতি পদে তাঁর মেয়াদেই বাংলায় লোকসভা ও বিধানসভায় সবচেয়ে বেশি আসনে জিতেছে দল। অমিত শাহ অবশ্য সেই ক্রেডিট একা দিলীপকে নিতে দেননি। শহীদ মিনারের সভায় দাঁড়িয়ে লোকসভা ভোটে সাফল্যের জন্য মুকুল রায়ের প্রশংসাও করেছিলেন। এবার দিলীপকে ছাপিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ রয়েছে শুভেন্দুদের সামনে। চব্বিশে আঠারো টপকাতে না পারলে দিলীপের খোঁটা শোনার প্রস্তুতি রাখতে হবে শুভেন্দুকে।