শেষ আপডেট: 9 July 2023 18:00
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তখন প্রায় সন্ধে সাড়ে সাতটা বাজে। ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) তাঁবু একেবারেই শুনশান। শুধু ঝাঁ চকচকে তাঁবুর ভেতর থেকে টিভির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
ভেতরে গিয়ে আবিষ্কার করা গেল লাল হলুদের কিছু কর্তা বসে সেইসময় ভারত ও লেবাননের মধ্যে সাফের সেমিফাইনাল ম্যাচ দেখছেন। সুনীল ছেত্রী, উদান্ত সিং-রা বল নিয়ে বিপক্ষ বক্সে উঠলে ম্রিয়মান কর্তাও চিৎকার করে উঠছেন, ‘ওঠ সুনীল ওঠ, মার গোল..।’
ক্লাবের সামনে বাদামওয়ালাও বাড়ির পথ ধরবেন ঠিক করছেন। তাঁবুর মালিরা মোবাইল গেম খেলতে ব্যস্ত। দূরে গ্যালারির নিচে ক্লাবের গ্রন্থাগারে (Library) বসে দুই ব্যক্তি, একজন পারিজাত মৈত্র। অন্যজন প্রাক্তন সাংবাদিক লাল হলুদ ক্লাবের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত অরূপ পাল। দু’জনেই উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা। অরূপের বাড়ি খড়দহ, আর পারিজাতের শ্যামনগর। দু’জনেই কল্যাণী লোকালের রোজকারের যাত্রী।
পারিজাত লাল হলুদের সংগ্রহশালার ইনচার্জ, আর অরূপ ক্লাবের গ্রন্থাগারের। দুই নিষ্ঠাবান কর্মীরই সারাক্ষণের কাজ, ক্লাবের এই লাইব্রেরির সুরক্ষিত রক্ষণাবেক্ষণ। কী হলে আরও ভাল করা যায়, সারাক্ষণ মাথায় ঘুরছে তাঁদের।
লাল হলুদের সংগ্রহশালা ঘুরে দেখলে মন ভরে যাবে। বিদেশে যেরকমভাবে ক্লাবের ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার কাজ হয়, সবটাই রয়েছে। কী আছের চেয়ে বলা ভাল কী নেই। সংগ্রহশালায় পরতে পরতে ইতিহাসের হাতছানি। আমেদ খান, শালে, আপ্পারাও, ভেঙ্কটেশ ও ধনরাজের মূর্তি রয়েছে, এবং ছবিও। সংগ্রহশালায় সেটাই বড় আকর্ষণ।
পাশাপাশি নজরে আসবে কৃশানু দে-র বুট জুতো। সেই সোনার বাঁপা, ভারতের মারাদোনার বিভিন্ন জিনিস রয়েছে। হালফিলের ফুটবলারদের নানা সরঞ্জাম ছাড়াও আসিয়ান কাপের ট্রফি, পাস ক্লাবের সেই বল, পরিমল দে, বলাই মুখোপাধ্যায়ের জার্সি, সব যেন ধরা দিতে চাইবে ফুটবল প্রেমীদের।
১৯২৫ সালের ক্লাবের জার্সি, সেটি কিংবদন্তি খেলোয়াড় সূর্য চক্রবর্তীর। প্রথম লিগ জয় ১৯৪২ সালের কাপও রয়েছে। ১৯২০ সালের চন্দননগর কাপ চ্যাম্পিয়নের পদক ও প্রথম ব্লেজার ফুটবলারদের। এগুলিই চোখ টেনে নেবে অনায়াসে। ১৯৭৫ এর ৫ গোলে জেতা ম্যাচের অধিনায়ক অশোক লাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই বুট, যেটি তিনি সেই ম্যাচে পড়ে খেলেছিলেন।
গ্রন্থাগারেও ঠাসা মণিমানিক্য। পিকে-চুনী-বলরামকে নিয়ে বই, অমল দত্তের আত্মজীবনী খেলতে হলে, এমনকী বিশ্বকাপ ফুটবলের সম্ভার, রূপক সাহার ইস্টবেঙ্গলের ইতিহাস, গৌতম ভট্টচার্যের ফুটবল নিয়ে নানা বই ও ক্লাব নিয়ে তাঁর লেখার নস্টালজিয়া তৃপ্তি দেবে। বিখ্যাত সাংবাদিক মুণাল চট্টোপাধ্যায়, কাশীনাথ ভট্টাচার্যের বইগুলোও সেরা প্রাপ্তি বলা যেতে পারে। দিল্লির নামী সাংবাদিক জয়দীপ বসুর বই-ও চমকের মধ্যে পড়বে। সবমিলিয়ে ময়দানের সেরা ঠিকানা ইস্টবেঙ্গলের চমকপ্রদ গ্রন্থাগার ও সংগ্রহশালা।
মোহনবাগানে এলেন ‘বিশ্বকাপার’ আনোয়ার, মায়া কাটিয়ে প্রীতম হয়তো কেরলেই