শেষ আপডেট: 27th January 2024 21:01
জীবন হয়তো এমনই। একটা সময় রোহন বোপান্না ভারতীয় টেনিসে ছিলেন সেজ সন্তানের মতো, যাঁর আদর কম ছিল, ভালবাসা তেমন নেই, কদরও কেউ দিত না।
সেই সন্তান যখন পরিবারের হাল ধরলেন, সেইসময় সবাই তাঁকে শ্রদ্ধা তো বটেই, সমীহ করাও শুরু করলেন। ভারতীয় টেনিসের দুই অগ্রজ সন্তান ছিলেন লিয়েন্ডার পেজ ও মহেশ ভূপতি। সেজ সন্তানের মর্যাদা পেয়ে এসেছেন রোহন বোপান্না, যিনি শনিবার ভারতীয় টেনিসকে পৌঁছে দিলেন সাফল্যের আলোকবৃত্তে।
মহেশ তো কবেই খেলা থেকে অবসর নিয়ে বেঙ্গালুরুতে নিজের ব্যবসা সামলাচ্ছেন। বড় সন্তান লিয়েন্ডার অবসর পাকাপাকিভাবে না নিলেও কোর্টে যে আর ফিরবেন না, সে সাউথ ক্লাবের ছোট শিক্ষার্থিও জানে! মহেশ অবসর নিয়েছেন ৩৬-য়ে, পেজ শেষ প্রতিযোগিতামূলক টেনিস খেলেছেন সাড়ে চল্লিশে। আর রোহন খেলছেন ৪৪ বছর বয়সেও।
একটা সময় ভারতের ডেভিস কাপ দলে প্রথম দুটি সিঙ্গলসের জন্য বরাদ্দ থাকত মহেশ ও লিয়েন্ডারের জন্য। কেউ দু’জন না খেললে ডাক পড়ত বোপান্নার। এর মধ্যে ভারতীয় টেনিসে কতজন এসেছেন, আর চলে গিয়েছেন। সোমদেব দেববর্মণ, সুমিত নাগাল, রামকুমার রমানাথন, প্রজ্ঞেস গুনেশনদের নিয়ে গিনিপিগের মতো পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু সেইভাবে দাগ কাটতে পারেননি।
বোপান্না বাকিদের টেক্কা দিলেন দুটি বিষয়ে। এক, তিনি সবসময় প্রচারের অন্তরালে থেকে গিয়েছেন। পেজ, মহেশদের ছায়ায় ঢাকা পড়েও নিজের ক্যারিশমা বজায় রেখেছেন পরিশ্রম দিয়ে। আর দ্বিতীয়ত, তিনি সিঙ্গলস থেকে চোখ সরিয়ে ডাবলসে বেশি মনোনিবেশ করেছেন। আর জুটি বাছাই করেছেন অভিজ্ঞের মতো। তিনি বিয়ন বর্গের কাছে টেনিস শিখেছেন একটা সময়। তিনি বছরের বেশিরভাগ সময়ে থাকেন আমেরিকায়। তিনি নিক বলিটিয়ারি টেনিস অ্যাকাডেমিতে দীর্ঘদিন পড়ে থেকে নিজের কাজ করে গিয়েছেন নিঃশব্দে।
সানিয়া মির্জা যেবার প্রথম মিক্সড ডাবলস খেলার সিদ্ধান্ত নিলেন, সেইসময় প্রথম জুটি বেঁধেছিলেন বোপান্নার সঙ্গেই। তিনি ভারতীয় টেনিসে নির্ভরতারও প্রতীক। তাই তিনি এদিন খেতাব জিতে উঠে বলেছেন, চেষ্টা করা ছেড় না। পরিশ্রম করে যেতে হবে, ফল কখন কীভাবে আসবে, তুমি নিজেও জান না। তরুণ প্রজন্মদের উদ্দেশে বলেছেন, কখনও লড়াই থেকে সরে এসো না। কমফোর্ট জোনে থাকা মানেই বুঝতে হবে তুমি লড়াই থেকে পালাতে চাইছ। হতাশ না হয়ে নিজের কাজ করে যাও, সাফল্য আসতে বাধ্য।
বোপান্নার কাছে কঠিন সময় ছিল ২০১৯ সাল। সেবার চোটের কারণে তিনি কোর্টে নামতেন পেইনকিলার ইঞ্জেকশন নিয়ে। ভেবেছিলেন অবসরই নিয়ে নেবেন। সেই কথা জানিয়ে শনিবার বলেছেন, ভাগ্যিস সেদিন আমি অবসর নিয়ে ফেলেনি, তা হলে এদিনটা আসত না। তবে টানা পাঁচ মাস কোর্টে ফিরেও একটা ম্যাচও জিততে পারিনি সেবছর। তবুও হতাশ হয়ে পালিয়ে যাইনি। ফিরে এসেছি আরও শক্তিশালী হয়ে।
বোপান্নার লড়াই সমাজের যে কোনও মানুষের কাছে শিক্ষণীয় হতে পারে। হারার আগে হারব না, এই যাঁর জীবনের মন্ত্র, তাঁকে হারায় কার সাধ্যি। তিনি তো এবার বয়সকেই হারিয়ে দিলেন অনায়াসে, অবলীলায়।