র্যাচেল রিভস, ব্রিটেনের নতুন অর্থমন্ত্রী।
শেষ আপডেট: 6th July 2024 23:04
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ঔপনিবেশিক আমলে ভারতে নাকি 'সভ্যতার আলো ছড়িয়ে দিতে' ক্ষমতা দখল করেছিল ব্রিটেন! অন্তত এমনটাই দাবি করতেন সাহেবরা। বিপুল মুনাফার লোভে স্রেফ ব্যবসায়িক স্বার্থে দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের বৃহত্তম উপনিবেশ স্থাপন করলেও, বরাবরই ভারতীয়দের নিচু নজরে দেখতেন ব্রিটিশ শাসকরা। বহু সংগ্রামের পরে স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিল ভারত। অথচ স্বাধীন হওয়ার মাত্র কুড়ি বছরের মধ্যেই দেশের শীর্ষে এসেছিলেন একজন মহিলা প্রধানমন্ত্রী। আজও তিনিই ভারতের অন্যতম 'আইকনিক' প্রধানমন্ত্রী বলে বিখ্যাত। অথচ সতেরো শতক থেকে ব্রিটেনে সংসদীয় ব্যবস্থার প্রচলন থাকলেও প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ওয়েস্টমিনস্টারে মার্গারেট থ্যাচারের যখন পা পড়ল, ইন্দিরা ততদিনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দুই দফা শেষ করে ফেলেছেন!
ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রথম মহিলা অর্থমন্ত্রীও বটে। ১৭ জুলাই ১৯৬৯ থেকে ২৭ জুন ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব সামলেছেন। তারপর গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-টেমস দিয়ে বহু জল বয়েছে। পরে মহিলা হিসেবে ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে এসেছেন প্রতিভা পাটিল। বর্তমানে রয়েছেন দ্রৌপদী মুর্মু। ব্রিটেনেও তারপর টেরেসা মে, লিজ ট্রসরা বসেছেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর ভারিক্কি চেয়ারটায় পুরুষদের একচেটিয়া দাপটই থেকে গিয়েছে। টাকা-পয়সার ব্যাপার মেয়েদের হাতে কি ছাড়া যায়? ভাবখানা অনেকটা যেন এমনই! অবশেষে, নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মারের হাতে তাতেও বদল আসতে চলেছে। ঘোষণা করা হয়েছে, 'গ্রেট' ব্রিটেনের চারশো বছরের সংসদীয় রাজনীতির গৌরবময় ইতিহাসে প্রথমবার অর্থমন্ত্রীর পদে বসতে চলেছেন কোনও মহিলা। পশ্চিম লিডস আসন থেকে জয়ী লেবার দলের সদস্য র্যাচেল রিভস।
অর্থনীতির দুনিয়ায় র্যাচেল অবশ্য পরিচিত নাম। বছর পঁয়তাল্লিশের এই সাংসদ আগে বিরোধী অবস্থায় 'শ্যাডো' ট্রেজারি সচিব-সহ একাধিক দায়িত্ব পালন করেছেন। অক্সফোর্ডের নিউ কলেজ ও লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স থেকে অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করা র্যাচেল রাজনীতিতে আসার আগে কাজ করতেন ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডে।
এবারের ব্রিটিশ নির্বাচনে লেবার দলের ইস্তেহারের বড় অংশ জুড়ে ছিল আর্থিক উন্নয়ন। সমালোচকদের বক্তব্য ছিল, টোরিদের আমলে অর্থনীতি বেহাল থেকে বেহালতর হয়েছে। ধনকুবের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক সরকারি উন্নয়নমূলক ক্ষেত্রগুলোর কথা প্রায় উপেক্ষাই করে গিয়েছেন। সেখানে লেবার নিজেদের প্রথাগত সরকারি ক্ষেত্রের পাশাপাশি বেসরকারি ক্ষেত্রে সম্পদের পুনর্গঠনের কথা জোরকদমে প্রচার করেছে। র্যাচেল নিজেও বলেছেন, তিনি আর্থিক বৃদ্ধির পাশাপাশি জনকল্যাণমূলক ক্ষেত্রের দিকে নজর রাখতে চান। বিশেষ করে শক্তিক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির লক্ষে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত শক্তি সংস্থা গড়ে তুলতে চায় লেবার।
ছোটবেলায় তুখোড় দাবা খেলতেন র্যাচেল। বাবা মা স্কুলশিক্ষক। তাঁর বোন এলি রিভসও লেবার সাংসদ। ব্রিটেনে অর্থমন্ত্রী পদের অবশ্য একটা গালভরা নাম আছে। বলা হয়, 'চ্যান্সেলর অফ দ্য এক্সচেকার'। পদাধিকারবলে যিনি ব্রিটিশ রাজার ট্রেজারির প্রধান। নিজের এক্স হ্যান্ডলে র্যাচেল লিখেছেন, 'এটাই জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্মান। আমি জানি এই পদের সঙ্গে কতখানি দায়িত্ব জড়িয়ে রয়েছে। প্রথম মহিলা হিসেবে এ' এক ঐতিহাসিক দায়িত্বও বটে। প্রত্যেকটি অল্পবয়সী মেয়ে, যারা এটা পড়ছো, তোমরা জেনে রেখো, তোমাদের আকাঙ্ক্ষায় যেন কোনও বাঁধন না থাকে!'
তবে এখানেও অবশ্য ব্রিটেনকে টেক্কা দিয়েছে ভারত। ২০১৯ সাল থেকেই ভারতের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন নির্মলা সীতারামণ। তিনিই দেশের প্রথম মহিলা অর্থমন্ত্রী। এ' ব্যাপারে কিঞ্চিৎ এগিয়ে ফ্রান্স। ২০০৭ থেকে ক্রিস্টিন ল্যাগার্দেঁ ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। প্রসঙ্গত, এই ব্যাপারে ভারতের চেয়ে পিছিয়ে আছে আমেরিকাও। ২০২১ সালে প্রথম আমেরিকার অর্থমন্ত্রীর সমতুল পদ 'ট্রেজারি সেক্রেটারি'-র দায়িত্বে আসেন জ্যানেট ইয়েলেন। তিনিই ওই পদে প্রথম মহিলা।