শেষ আপডেট: 12th October 2023 17:43
দ্য ওয়াল ঝাড়গ্রাম: মা কেঁদুয়াবুড়িই এখানে দেবী দুর্গা। ঝাড়গ্রাম শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে গোপীবল্লভপুর ২ নম্বর ব্লকের বালিপাল গ্রামে রয়েছে এই কেঁদুয়াবুড়ির থান। চারিদিকে ঘন সবুজে ঢাকা মনোরম পরিবেশ। মন্দিরে রয়েছে গর্ভকুণ্ড। তার চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে হাতি-ঘোড়া।
গোপীবল্লভপুর ২ ব্লকের বালিপাল, বাঘাগ্যাড়া, রামচন্দ্রপুর, আসনবনি-সহ আশেপাশের প্রায় ৩৫ টি গ্রামের মানুষ মা কেঁদুয়াবুড়িকেই এখনও দুর্গারূপে পুজো করেন। কেঁদুয়াবুড়িকে পুজো দিয়ে শুরু হয় এলাকার সমস্ত সর্বজনীন ও পারিবারিক দুর্গাপুজো। প্রথা মেনে এখনও হাত চিরে রক্ত দিয়ে মায়ের পুজো সম্পূর্ণ হয়। এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা ইতিহাস ও জনশ্রুতি। ষোড়শ শতকে গোপীবল্লভপুরের এই এলাকাটি চিয়ারা পরগনার অধীনে ছিল। আনুমানিক পাঁচশো বছর আগে পুরীর ক্ষত্রিয় রাজকুমার বলীপালদেব রাজ্যচ্যুত হয়ে এই এলাকায় এসে পৌঁছন। এই গোটা অঞ্চল তখন কেন্দু গাছে ভরা।
ক্ষুধার্ত রাজকুমার একটি নিমগাছের তলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তখন এক উপজাতি কিশোরীর রূপ ধরে এসে দেবী রাজকুমার বলীপালদেবকে কেঁদ ফল খেতে দেন। পরে স্বপ্নাদেশে জানান, ওই নিমগাছের নীচে কুণ্ডে দেবী অধিষ্ঠিতা। পুজো চান তিনি। তবে দেবী শর্তও দেন, কোনও মন্দিরে নয় উন্মুক্ত আকাশের নীচেই পুজো করতে হবে তাঁকে। পুজো করতে পারবে শুধু বাগদিরাই।
কালক্রমে দেবীর কৃপায় পরাক্রমী রাজা হন বলীপালদেব। তাঁর নাম থেকেই এই গ্রামের নাম হয় বালিপাল। আর কেঁদ গাছের জঙ্গল থেকেই দেবীর নাম হয় মা কেঁদুয়াবুড়ি। সেই সময় থেকেই একইভাবে পূজিতা হয়ে আসছেন দেবী। এখানে দুর্গার মূর্তি পুজো হয় না। মন্দিরে মা কেঁদুয়াবুড়িকেই দুর্গা রূপে পুজো করা হয়। এখনও বাগদি সম্প্রদায়ের মানুষই পৌরাণিক আচার বিধি মেনে পুজো করে চলেছেন। প্রায় ৩৫ টা গ্রামের মানুষ এই মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। তাঁরা নিজেদের মনের কথা মায়ের কাছে নিবেদন করেন। প্রায় ৭৯ বছর ধরে বিধি মেনে মা দুর্গার আরাধনা হচ্ছে এই মন্দিরে।
যে কোনও শুভকাজের আগে মায়ের থানে পুজো দেন গ্রামের মানুষ। নিয়ম মেনে প্রতি মঙ্গলবার ও শনিবারও পুজো হয়। পুজোর ছুটিতে ঘুরে আসতেই পারেন বালিপালের এই মন্দিরে।