হোয়াইট হাউসের দিকে নজর রেখেছেন কমলা হ্যারিস।
শেষ আপডেট: 22nd July 2024 14:52
অবশেষে দাবির মুখে মাথা নোয়ালেন জো বাইডেন। নাকি বাস্তবটা বুঝে বিচক্ষণ পদক্ষেপ করলেন? কোনটা লেখা যায়? সাংবাদিকের কাছে এই প্রশ্নের কোনও সহজ উত্তর নেই। শুধু এইটুকু বোঝা যায়, গত ক'দিন ধরে যে মার্কিন রাজনীতির অন্দরে তীব্র টানাপোড়েন চলছিল, অবশেষে তা খানিক থিতু হল। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন ডেমোক্র্যাটিক দলের সদস্যরা।
সত্যিই কি তাই? নাকি অনেকে পাল্টা চিন্তায় পড়লেন? রিপাবলিকানরাও কি তাহলে চওড়া হাসি হাসছেন? নাকি চিন্তা বাড়ল ডোনাল্ড ট্রাম্পের দলবলের?
আসন্ন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন থেকে সরকারিভাবে সরে দাঁড়িয়েছেন জো বাইডেন। আগামী ৫ নভেম্বর চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা কে হবেন তা জানতে ভোটাভুটি হবে। রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হিসেবে জায়গা পাকা করে নিয়েছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। একাধিক মামলা চলছে তাঁর নামে। স্মরণকালের মধ্যে এতগুলি মামলা ঘাড়ে নিয়ে কেউ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে দাঁড়িয়েছেন বলে জানা নেই। কিন্তু তাতে ট্রাম্পের থোড়াই কেয়ার। তাঁর জনপ্রিয়তা তরতরিয়ে বেড়েছে। এদিকে ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী, বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রার্থীপদ নিয়ে আগাগোড়াই প্রশ্ন উঠেছে। তিনি বয়সের ভারে ন্যুব্জ, অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন, ট্রাম্পের দাপটের সামনে মিনমিন করেছেন ইত্যাদি নানা সমালোচনা উড়ে গিয়েছে তাঁর দিকে। শেষে সিএনএন বিতর্কে ট্রাম্পের সামনে শোচনীয় অবস্থার পরে সরাসরি তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠেছিল ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে। অবশেষে তাতেই ক্ষান্ত হলেন বাইডেন।
তাহলে কি এবার কমলা হ্যারিসের হোয়াইট হাউসে ঢোকা একরকম পাকা?
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ইতিমধ্যেই আলোচনার ঝড় শুরু হয়েছে। কিছুদিন আগে অবধিও ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে ঋষি সুনক ছিলেন। এরপর হোয়াইট হাউসে কমলা হ্যারিস ঢুকলেই বিলেতের পর আমেরিকাতে ভারতীয় নিশান উড়বে বলে আশায় আশায় রয়েছে আসমুদ্রহিমাচল। সত্যিই যদি সেটা হয়, বস্তুত আমেরিকার ইতিহাসেই একটা নতুন অধ্যায় লেখা হবে। কারণ পৃথিবীর প্রাচীনতম গণতন্ত্র বলে গর্ব করলেও আজ অবধি আমেরিকার ইতিহাসে কোনও মহিলা প্রেসিডেন্ট বা তাঁর আগে ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদেও বসেননি। তিনিই প্রথম।
কিন্তু মার্কিন রাজনীতির ভেতরের খবর যারা রাখেন, তাঁরা প্রায় কেউই এত সহজে দুইয়ে দুইয়ে চার করতে চাইছেন না। এখনও লম্বা রাস্তা বাকি। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সিএনএন বিতর্কে ল্যাজেগোবরে অবস্থা হওয়ার পরেই বাইডেনকে সরে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন অনেকে। বাইডেন শোনেননি। বলে গিয়েছেন, তিনিই লড়ে যাবেন। ফলত প্রকাশ্যে অন্তত কমলার আনুগত্য একফোঁটা টাল খায়নি। এইবার বাইডেন সরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি কমলাকে প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড় করানোর জন্য জোরদার সওয়াল করে গিয়েছেন।
অথচ বাইডেন সওয়াল করলেই হল না। আমেরিকায় ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান দুই দলেরই মনোনয়ন পাওয়ার নির্দিষ্ট নিয়মকানুন আছে। দলের অভ্যন্তরে ভোট হয় প্রথমে। সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোট পেলে তবেই মনোনয়ন পাওয়া যাবে। মোট ৩০০ জনের স্বাক্ষর পাওয়া গেলে ব্যালটে নাম তোলা যায়। মনোনয়নের জন্য লাগে ১,৯৭৬ ভোট। বাইডেন-হ্যারিস জুটিতে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে যৌথ টিকিটে ৩,৮৯৬-টি ভোট পেয়েছিলেন। এই বিপুল পরিমাণ ভোট হ্যারিস আবার পাবেন তো? তার কিন্তু কোনও নিশ্চয়তা নেই। পাল্টা অন্তত চারজন দাবিদারের নাম জল্পনায় ভাসছে। যদিও, হ্যারিসই তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল জায়গায় আছেন। অন্তত এখনও অবধি।
শুধু তাই নয়। একা কমলা হ্যারিস দাঁড়ালেই হল না। তাঁর সঙ্গে একজন উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকেও লাগবে। যারা হ্যারিসের পাল্টা হিসেবে জল্পনায় আছেন, তাঁদের কাউকেই এই পদে মনোনয়ন দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে সবার আগে এগিয়ে রয়েছেন মিশিগানের গভর্নর গ্রেচেন হুইটমার। ৫২ বছরের গ্রেচেন মার্কিন রাজনীতিতে অন্যতম প্রগতিশীল মুখ। তিনি শেষ পর্যন্ত দাঁড়ালে হ্যারিস-হুইটমার টিকিটে আর এক ইতিহাস তৈরি হবে। প্রথমবারের জন্য দুই মহিলা মুখ। পাশাপাশি আছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম। ইনিও বলিয়ে কইয়ে মুখ। রিপাবলিকানদের অপর এক প্রার্থী, ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডেস্যান্টিসের মহড়া নিয়েছিলেন। পরিবহণ সচিব পিট বুটিগিএগও নিজের উচ্চাশা গোপন করছেন না। পেনসিলভ্যানিয়ার গভর্নর জস শ্যাপিরোকে নিয়েও জল্পনা আছে। শেষ অবধি কে হবেন, সেটা জানা যেতে এখনও অন্তত এক মাস অপেক্ষা করতে হবে।
ইতিমধ্যেই বাইডেন-হ্যারিস টিকিটে বদল আনতে আমেরিকার ফেডারেল নির্বাচন কমিশনে সরকারিভাবে আবেদন করেছে ডেমোক্র্যাটিক দল। এখনও অবধি তাতে হ্যারিসের নামই রয়েছে। কমিটি গঠন করে নাম দেওয়া হয়েছে 'হ্যারিস ফর প্রেসিডেন্ট'। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা বিবৃতি দিয়েছেন, তিনি আশাবাদী, তাঁর দল 'দুর্দান্ত কাউকে' নির্বাচিত করবে।
এতদিন ধরে নিজেকে একেবারে গুটিয়ে রেখেছিলেন কমলা। প্রকাশ্যে সবসময় বাইডেনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু সূত্রের খবর, ভেতরে ভেতরে তিনি বহুদিন ধরেই এই দিনটার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। জানতেন, বাইডেন অত সহজে সরবেন না। জানতেন, তাঁকে বাইডেনের পাশেই থাকতে হবে। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই এই পদের দাবিদার বলে দেখানো চলবে না। অতএব গত তিন সপ্তাহ ধরেই কমলা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন। একেবারে চরম ঘনিষ্ঠ ছাড়া প্রায় কারোর ফোন ধরেননি। ইমেলের জবাব দেননি। যদিও বাইডেনকে সরে দাঁড়ানোর দাবি জোরালো হতেই রথীমহারথীরা অনেকেই দেওয়ালের লেখা পড়ে কমলার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। তাঁদের প্রায় কাউকেই কাছে ঘেঁষতে দেননি তিনি। পাছে কোনও গোপন কথা ফাঁস হয়ে যায়! আমেরিকায় সংবাদমাধ্যম এসবের জন্য মুখিয়ে থাকে। এমনকি পাছে তাঁর মুখের অভিব্যক্তি দেখেও কিছু বোঝা যায়, সেই ভয়ে হ্যারিস সাংবাদিক সম্মেলনও করেননি। এয়ার ফোর্স টু বিমানে চড়ে এদিকে-ওদিকে গিয়েছেন। সঙ্গে সাংবাদিকরাও গিয়েছেন। সাধারণত এয়ার ফোর্স টু মাটি ছাড়লে কমলা সাংবাদিকদের সঙ্গে অনেক কথাই বলেন। সেসব 'অফ রেকর্ড' রাখা হয়। গত কয়েকদিনে সেসবও একেবারে বন্ধ ছিল।
কমলা হ্যারিস জানেন, তিনি ইতিহাসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। তাই সামান্য কোনও ভুলত্রুটিও করতে চাননা তিনি।