শেষ আপডেট: 11th October 2019 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বয়স তখন সাত। বাড়িতেই খেলতে খেলতে একটা দুর্ঘটনা। চতুর্থ শ্রেণির মেধাবী ছেলেটার দু’চোখে অন্ধকার নেমে আসে। ডাক্তাররাও জবাব দিয়ে দেন দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে ছোট্ট ছেলেটা। জীবনের রঙ এ ভাবে হারিয়ে যাবে ভাবতেও পারেনি সে। তবে হার মানেনি জীবন-যুদ্ধে। নিজেকে গড়েপিটে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছে। চোখের আঁধার লক্ষ্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং অন্ধকারকে সঙ্গী করেই আলোর পথ খুঁজে পেয়েছে পশ্চিম বর্ধমানের কুলটি বিড়লা পাড়ার বাসিন্দা অমিত কুমার যাদব। জুড়ো-জুজুৎসুতে শুধু রাজ্য-জাতীয় স্তরে নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেছে অমিত। কুলটি বিড়লা কারখানা লাগোয়া টালির চালের ঘর। একটেরে জীর্ণ দেওয়ালের মাঝেই পাঁচ জনের সংসার। অমিতের বাবা ভোলা যাদব কারখানার গেটে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। টেনেটুনে দিন চলে। অমিতের উপরেও রয়েছে তার দুই দিদি। তবে অভাব-অনটন আজ আর বিষাদের কারণ নয় ভোলা যাদবের কাছে। সোনার ছেলে দেশ-বিদেশ জয় করেছে। অন্ধ বলে সমবেদনা জানাত যারা, তারাও আজ শ্রদ্ধার চোখে দেখে ছেলেকে। গর্বে মাথা উঁচু হয়ে যায় বাবার। ঝালমুড়ি ঠোঙায় ভরতে ভরতেই ছেলের কৃতিত্বের কথা শোনান সকলকে। অমিত এখন কুলটির ১০৩ ওয়ার্ড বিড়লা পাড়ার হিরো। আসানসোলের ব্রেইল অ্যাকাডেমিতে পড়াশোনা শেষ করে সে এখন কলকাতার নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমির দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। জুডোতে হাতেখড়ি ক্লাস এইট থেকে। অমিতের বাবা জানিয়েছেন, পড়াশোনার পাশাপাশি জুডোতে প্রশিক্ষণ নিয়েছে মন দিয়ে। নাম ছড়াতে শুরু করে ২০১৬ সাল থেকে। চতুর্থ জাতীয় জুডো চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয় অমিত। আত্মবিশ্বাস বাড়ে, এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য আরও সুদৃঢ় হয়। পরের বছরই ২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য জুডো প্রতিযোগিতায় ফের স্বর্ণপদক পায় অমিত। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। জেলা-রাজ্য স্তরে একের পর এক প্রতিযোগিতায় পুরস্কার আসতে শুরু করে কুলটির টালির চালের ঘরে। গত বছর জাতীয় স্তরে জুডোতে রূপো এবং দক্ষিণ এশিয়া ওপেন ব্লাইন্ড চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা পায় অমিত। কুলটির ছেলের অভাবনীয় সাফল্য দেখে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মদত ফাউন্ডেশন।’ এই সংস্থার কর্ণধার জানিয়েছেন, অমিতের বাবার রোজগার মাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা। নরেন্দ্রপুরে পড়াশোনার খরচও রয়েছে। পাশাপাশি জুডোর প্রশিক্ষণের জন্যও যতটা সাহায্য দরকার এই সংগঠন সবই করছে। আগামী দিনেও করবে। চলতি বছর আন্তর্জাতিক জুজুৎসু প্রতিযোগিতায় সোনা পেয়েছে অমিত।
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক জুডো প্রতিযোগিতায় ব্রোঞ্জ জিতল বাংলার দৃষ্টিহীন ছাত্র বুদ্ধদেব জানা
প্রতিবন্ধী শব্দটা কোনও দিনই পছন্দ নয় অমিতের। সাহস, দক্ষতা ও মেধাকে সম্বল করেই সাফল্যের সবকটা সিঁড়ি পেরোতে চায় অমিত। তার চলার পথে শারীরিক বাধা তুচ্ছ। মনের জোর জয় করেছে সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকেই। আন্তর্জাতিক স্তরে বারে বারেই বাংলার প্রতিনিধিত্ব করতে চায় অমিত। ভবিষ্যতে জুডোর প্রশিক্ষণ দেওয়ার ইচ্ছাও রয়েছে তার। চলার পথে কোনও বাধাই যে লক্ষ্যকে থমকে দিতে পারে না সেটাই প্রমাণ করতে চায় কুলটির 'হিরো।' আরও পড়ুন: https://www.four.suk.1wp.in/news-west-bengal-chandra-shekhar-kundus-feed-helped-therr-people-suffering-from-starvation-in-asansol/ পড়ুন, দ্য ওয়ালের পুজোসংখ্যার বিশেষ লেখা... https://www.four.suk.1wp.in/pujomagazine2019/%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a7%81-%e0%a6%ab%e0%a6%b2-%e0%a6%90%e0%a6%b6-%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%b7-%e0%a6%93-%e0%a6%aa%e0%a6%bf%e0%a6%97%e0%a6%ae%e0%a6%bf-%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9c-2/