জো বাইডেনের বদলি হিসেবে কি দাঁড়াবেন কমলা হ্যারিস?
শেষ আপডেট: 8th July 2024 20:04
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আর অপেক্ষা করতে চাইছেন না ডেমোক্র্যাটরা। সামনেই আমেরিকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। রিপাবলিকান দল আবারও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দাঁড় করিয়েছে। বিপরীতে ডেমোক্র্যাটদের হয়ে দ্বিতীয় দফার জন্য লড়বেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু আটলান্টায় দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি বিতর্কে দেখা গেল, কার্যত কাহিল অবস্থা বাইডেনের। তাঁর বয়স ৮১। ইতিমধ্যেই তিনি আমেরিকার ইতিহাসের প্রবীণতম রাষ্ট্রপতি হিসেবে কাজ করছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে রীতিমত নড়বড়ে দেখিয়েছে বাইডেনকে। কী বলেছেন অনেকের কাছে বোধগম্যই হয়নি। বয়সের ভারেই তিনি আর পেরে উঠছেন না, এমন একটা দাবি উঠেছে। এই অবস্থায় দ্বিতীয় দফার জন্য লড়াইতে নামাটা কতদূর যুক্তিযুক্তি হবে, প্রশ্ন উঠছে তাঁর নিজের ডেমোক্র্যাটিক দলের অন্দরেই।
২৭ জুনের এই বিতর্ককে এখন বাইডেনের জন্য একটা বিপর্যয় বলে দেগে দিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম। দেখা গিয়েছে, বাইডেনের এই অবস্থা দেখে সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন ডেমোক্র্যাট দলের ভোটাররা। এদিকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা। এই অবস্থায় দ্বিতীয়বারের জন্য ট্রাম্পের আসা ঠেকাতে দলের অন্দরে জোর বিতর্ক চলছে, অবিলম্বে বাইডেনের বদলে অন্য কাউকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হোক। শুরু থেকেই অনেকে অশীতিপর বাইডেনকে দ্বিতীয়বারের জন্য প্রার্থী করার বিরোধী ছিলেন। এবারে সেই আগুনেই ঘি পড়েছে।
হোয়াইট হাউসের জনসংযোগ আধিকারিক অবশ্য জল্পনা উড়িয়ে বলেছেন, ওটা নিতান্তই একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ছিল। কেউ কেউ বলছেন, বাইডেনের ঠাণ্ডা লাগায় গলা বসে গিয়েছিল। কিন্তু তাতে ক্ষোভ চাপা পড়ছে না। ডেমোক্র্যাটদের একাংশের বক্তব্য, এই অবস্থায় কালবিলম্ব না করে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হোক উপরাষ্ট্রপতি কমলা হ্যারিসকে।
আজ অবধি আমেরিকার ইতিহাসে একজন মহিলাকেও রাষ্ট্রপতির আসনে দেখা যায়নি। নির্বাচনী বিশ্লেষকরা বলছেন, কমলাকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিলে নতুন ইতিহাস তৈরি হবে।
এখানে অবশ্য খানিক কথা আছে। ক্যালিফোর্নিয়ার প্রাক্তন সেনেটর ও অ্যাটর্নি জেনারেল হ্যারিসের বয়স ৫৯। শুরুতে কমলা হ্যারিস তেমন জনপ্রিয় ছিলেন না। বাইডেনের ছায়ায় কিছুটা অন্তরালেই চলে গিয়েছিলেন উপরাষ্ট্রপতি কমলা। তাঁর আমলে বড় রকমের কোনও নীতিতেও বদল আসেনি। উলটে মধ্য আমেরিকা থেকে আশা শরণার্থী নিয়ে কথা শুনতে হয়েছে উপরাষ্ট্রপতিকে। কিন্তু সম্প্রতি গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে বিখ্যাত 'রো বনাম ওয়েড' রায় মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করে দিতেই রাতারাতি মহিলাদের অধিকার নিয়ে সরব হয়েছেন হ্যারিস। এতেই অল্পবয়সীদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
এবার আটলান্টা বিতর্কে বাইডেনের ভয়াবহ 'পারফরম্যান্সের' পরে নতুন করে পাল্লা ভারি হয়েছে কমলার। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বাইডেনের ওপর থেকে ভোটারদের আস্থা সরছে। কিন্তু জনপ্রিয় হচ্ছেন কমলা। সিএনএনের একটি সমীক্ষা বলছে, ভোটারদের পছন্দের তালিকায় শতাংশের হিসেবে ট্রাম্প এগিয়ে ৪৯ শতাংশে, সেখানে বাইডেন অনেকটাই পিছনে, ৪৩ শতাংশে। সেখানে ট্রাম্প আর কমলার তুল্যমূল্য শতকরার ব্যবধান অনেকটা কম। ট্রাম্প ৪৭ শতাংশে, হ্যারিস ৪৫ শতাংশে।
একইরকম ফলাফল দেখিয়েছে রয়টার্সের একটি সমীক্ষা। দেখা যাচ্ছে, বাইডেনের বক্তৃতা-বিপর্যয়ের পরে ট্রাম্প ও কমলার সমর্থন প্রায় সমান হয়ে গিয়েছে। ট্রাম্পের ৪৩ শতাংশ সমর্থনের সঙ্গে ৪২ শতাংশ সমর্থন নিয়ে রীতিমত পাল্লা দিচ্ছেন হ্যারিস। আমেরিকার বণিকমহলের কর্তারা অনেকেই বলছেন, এখনও সময় আছে, ডেমোক্র্যাটরা যদি যেচে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে না চায়, তাদের উচিত অবিলম্বে কমলাকে প্রার্থী করা।
যাকে নিয়ে এত কথা, সেই কমলা হ্যারিস অবশ্য এসব আলোচনাকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। বিতর্কের পরেও আগাগোড়া জো বাইডেনের পাশে থেকেছেন। একবারের জন্যও হোয়াইট হাউসের প্রতি তাঁর কোনও উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেননি। বরং স্পষ্ট বলেছেন, 'দেখুন, আমাদের প্রার্থী জো বাইডেন। আমরা ট্রাম্পকে একবার হারিয়েছি। আরও একবার হারাতে চলেছি। ব্যাস।' সঙ্গে যোগ করেছেন, 'আমি জো বাইডেনের সহযোগী হিসেবেই গর্বিত।'
ডেমোক্র্যাট দলের মাথারাও সবদিক খতিয়ে দেখছেন। তাঁরাও জানেন, কমলা হ্যারিসের ভাবমূর্তি সবসময় এতটা জনপ্রিয় ছিল না। সাড়ে তিন বছর ধরে তাঁর রেটিং বেশ কম ছিল। বিভিন্ন সংস্থার সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, অর্ধেকের বেশি আমেরিকান কমলা হ্যারিসকে পছন্দ করেন না। সেক্ষেত্রে রাতারাতি প্রার্থী বদল হলে জনমানসে ভুল বার্তা যেতে পারে।
অবশ্য রাজনীতিতে তো কিছুই অসম্ভব নয়!