শেষ আপডেট: 10th January 2021 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনা আতঙ্কের মধ্যে অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা তথা বার্ড ফ্লু নিয়ে শঙ্কা বেড়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের। শনিবার, এক দিনের মধ্যে দেশে হাজারের বেশি পাখির মৃত্যুতে রাজ্যগুলিতে সতর্কতা জারি করেছিল কেন্দ্র। দিল্লি ও মহারাষ্ট্রে মৃত পাখিদের নমুনায় অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের খোঁজ মিলেছে। বার্ড ফ্লুয়ের কারণেই যে পাখি মৃত্যু হয়েছে সেটা নিশ্চিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানাচ্ছে, দেশের ৯টি রাজ্যে বার্ড ফ্লু ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে যার মধ্যে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, কেরল, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, হিমাচলপ্রদেশ, হরিয়ানা ও গুজরাট। এই রাজ্যগুলিতে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বার্ড ফ্লু ঠেকাতে রাজ্যে রাজ্যে তৈরি হয়েছে কন্ট্রোল রুম। ভাইরাস ঠেকাতে অ্যানিমাল ভ্যাকসিনের কী ব্যবস্থা আছে তা খতিয়ে দেখতে আজ দুপুরে সংসদে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি পাখি মৃত্যু হয়েছে হরিয়ানায়। চার লক্ষের বেশি মৃত পাখি উদ্ধার করা হয়েছে। বেশিরভাগেরই নমুনায় বার্ড ফ্লু ভাইরাসের সন্ধান মিলেছে। উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে হিমাচল প্রদেশে পাখি মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। তাই সতর্কতা জারি করা হয়েছে প্রতিবেশি রাজ্য জম্মু-কাশ্মীরে। বার্ড ফ্লুতে ক্ষতিগ্রস্ত চারটি রাজ্যে মোট ১২ টি এপিসেন্টার চিহ্নিত করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। পরিস্থিতির ওপরে নজর রাখার জন্য দিল্লিতে তৈরি হয়েছে কন্ট্রোল রুম। রাজধানীর সবচেয়ে বড় পোলট্রি মার্কেট রয়েছে গাজিপুরে। সেখানে আপাতত পাখি কেনাবেচা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দিল্লি ময়ূর বিহার এলাকায় গত কয়েকদিনে রাস্তায় শয়ে শয়ে কাক মরে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। দিল্লির ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জানানো হয়েছে, মৃত পাখিদের নমুনা ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের স্ট্রেন রয়েছে কিনা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ রেজরিওয়াল জানিয়েছে, পোলট্রি ফার্মগুলি থেকে ভাইরাস ছড়িয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই পোলট্রিগুলিতে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। মহারাষ্ট্রের পারভানি এলাকা এখন বার্ড ফ্লুয়ের এপিসেন্টার হয়ে উঠেছে। মুম্বই থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরত্বে ওই এলাকায় গত দুদিনে ৮০০-র বেশি মুরগির মৃত্যু হয়েছে। মৃত পাখিদের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। জেলাশাসক মধুকর মুঙ্গলিকর বলেছেন, মুরুম্বে গ্রামে আটটি পোলট্রি ফার্ম রয়েছে। হাঁস, মুরগি মিলিয়ে আট হাজারের বেশি পাখি রয়েছে সেখানে। বার্ড ফ্লু ভাইরাস যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ডাক্তারদের একটি দলকে সেখানে পাঠানো হচ্ছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে কেরলের আলাপ্পুঝা ও কোট্টায়াম জেলায় অনেক পাখি মরতে দেখা যায়। আটটি মৃত পাখির নমুনা পাঠানো হয় ভোপালের গবেষণাগারে। সেখানে পাঁচটি পাখির শরীরে এইচ৫এন৮ অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের স্ট্রেন পাওয়া যায়। কেরল সরকার জানিয়েছে, নেনদুর অঞ্চলে মারা গিয়েছে ১৫০০-র বেশি হাঁস। আল্লাপুঝা জেলার কুট্টানাড অঞ্চলেও অনেক পাখি মারা গিয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার পাখি মারা গিয়েছে রাজ্যে। রাজস্থানের অ্যানিমাল হাসব্যান্ড্রির মুখ্যসচিব কুঞ্জি লাল মিনা বলেছেন, কোটা, যোধপুর, জয়পুর সহ একাধিক জেলায় কাকের মৃত্যু হচ্ছে ভাইরাসের সংক্রমণে। জালাওয়ালের ১০০টি, বারানে ৭২টি, কোটায় ৪৭টি, পালিতে ১৯টি, জোধপুরে ৭টি, জয়পুরে ৭টি মৃত কাক উদ্ধার হয়েছে এখনও অবধি। মধ্যপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান বুধবার জরুরি বৈঠক করেছেন। ওই রাজ্যে মান্দসৌর, ইন্দোর এবং মালব অঞ্চলে বহু কাক মরে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। মধ্যপ্রদেশ সীমান্তে মহারাষ্ট্রে এখনও বার্ড ফ্লু দেখা দেয়নি। বার্ড-ফ্লু ভাইরাস হল বিশেষ ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস যা শুধু পাখি নয়, মানুষ ও অন্যান্য পশুর শরীরেও সংক্রামিত হতে পারে। এই ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জাকে বলে অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা। থুতু-লালা ড্রপলেটের মাধ্যমে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে পারে। ভারতে এখনও অবধি দুই ধরনের বার্ড-ফ্লু তথা অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের স্ট্রেন পাওয়া গিয়েছে—এইচ৫এন১ এবং এইচ৭এন৯। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানুষের শরীরে ঢুকলে করোনাভাইরাসের মতোই দ্রুত বিভাজিত হতে পারে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের স্ট্রেন। সংক্রমণও ছড়াতে পারে দ্রুত। উপসর্গও করোনা সংক্রমণের মতোই। তবে মানুষের শরীরে এখনও অবধি এই ভাইরাসের খোঁজ মেলেনি বলেই নিশ্চিত করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক।