শেষ আপডেট: 11th December 2018 09:01
দ্য ওয়াল ব্যুরো, জলপাইগুড়ি: ভিনরাজ্যের শিল্পপতি হলেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। ইচ্ছে বিস্কুট ফ্যাক্টরি তৈরি করবেন এ রাজ্যে। সেই মতো জমি কেনেন জলপাইগুড়ির আমবাড়িতে। কিন্তু জমি হাতে পাওয়ার পর ক্যাম্প হাউস করতে এসেই বাধার মুখে পড়তে হয়। তৃণমূল ও বিজেপির একাংশের আশ্রিত ‘সিন্ডিকেট’ ক্রমাগত টাকা চাওয়ায় পিছিয়ে আসতে হচ্ছে বলে প্রশাসনকে অভিযোগ জানিয়ে গেছিলেন উত্তরপ্রদেশের গোরখপুরের বাসিন্দা অজয় আগরওয়াল। সেই অভিযোগ পাওয়ার পরে কাজ শুরুর জন্য পুলিশ বসানো হয়েছে তাঁর জমিতে। তবুও পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না ওই শিল্পপতি। অভিযোগ, ডব্লিউবিএসআইডিএল (পশ্চিমবঙ্গ ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন পর্ষদ) এর কাছ থেকে জলপাইগুড়ির আমবাড়িতে ৩ একর জায়গা কেনেন উত্তরপ্রদেশের ওই শিল্পপতি অজয় আগরওয়াল। এখানে ২৫ কোটি টাকা খরচ করে একটি বিস্কুট ফ্যাক্টরি করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, ওই জমিতে ক্যাম্প হাউস করতে গেলেই স্থানীয় তৃণমূল ও বিজেপি আশ্রিত নেতারা ক্রমাগত টাকার জন্য তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। ওই শিল্পপতির অভিযোগ করেন, প্রথমেই ক্যাম্প হাউস তৈরির জন্য নগদ ২০ হাজার টাকা তাদের দিতে হবে বলে দাবি করে। এখানেই শেষ নয়। এই ক্যাম্প হাউস সহ অন্যান্য নির্মাণও করাতে হবে তাঁদের দিয়েই। তিনি বলেন, “বালি, পাথর, ইট, সিমেন্ট সব ওদের কাছ থেকে ওদের দেওয়া রেট অনুযায়ী নিতে হবে বলে দাবি করে। শ্রমিকও ওরাই সরবরাহ করবে। আবার শ্রমিক প্রতি ২০ টাকা ওদের ফান্ডে দিতে হবে বলেও দাবি। এত আব্দার মেনে নেওয়া তো সম্ভব নয়।” ভিনরাজ্যে এমন বেগতিক পরিস্থিতিতে পড়ে অজয়বাবু নর্থ বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুরজিৎ পালের দ্বারস্থ হন। তিনি ওই শিল্পপতিকে সঙ্গে নিয়ে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের দফতরে গিয়ে অভিযোগপত্র জমা দেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসন পুলিশ বসিয়ে কাজ শুরুর উদ্যোগ নেওয়ায় খুশি সুরজিৎবাবু। তিনি বলেন, “সরকার এ ভাবে তৎপর হলে শিল্পপতিদের কাছে তা সদর্থক বার্তা দেবে।” তবে একইসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা রিভিউ মিটিংগুলোতে সাধারণত স্থানীয় সমস্যার কথা জানাই না। কিন্তু আগামী রিভিউ মিটিং এ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এমন সমস্যা তুলে ধরবো।” অজয়বাবু বলেন, “আমার প্রথমে ইচ্ছে ছিল এই কারখানা অসমে করার। পরে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনে সরকারি ভাবে শিলিগুড়ি লাগোয়া আমবাড়ি এলাকায় জমি কিনলাম। যাতে কোনও সমস্যা না আসে। সরকার ব্যবস্থা নিলেও এ সব দেখে আমার সাহস কমে যাচ্ছে।” তিনি যে অভিযোগ করেছেন, সেখানে তোলাবাজি ও হুমকিতে নাম উঠে আসে বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য দীপক মণ্ডল ও তৃণমূলের আব্বাস আলি, বাচ্চা মিঁয়া ও অলোক রায়ের। তবে বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলার সাধারণ সম্পাদক বাপী গোস্বামী জানান, এই ঘটনা তাঁর জানা নেই। তবে তোলাবাজিতে কেউ যুক্ত থাকলে কাউকে রেয়াত করা হবে না। প্রায় একই সুরে তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ আছে শিল্পপতিদের সবরকম সাহায্য করার। রাজগঞ্জ বিধানসভা এলাকায় যাদের নাম উঠে আসছে, তারা আদৌ আমাদের দলের লোক কিনা তা খতিয়ে দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ভারপ্রাপ্ত জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল জানান, স্থানীয় কিছু সমস্যা নিয়ে ব্যবসায়ীরা তাঁদের কাছে এসেছিলেন। অভিযোগ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিয়েছেন তাঁরা। সরকার তৎপর হওয়ায় সাময়িক স্বস্তিতে এলাকার ব্যবসায়ী মহল।