Advertisement
বর্ষার খোঁজেই নাকি ভারত আক্রমণ বহিরাগত শাসকদের, বলছে সমীক্ষা - দ্য ওয়াল ফাইল ।
Advertisement
শেষ আপডেট: 18 April 2024 20:02
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রবল গ্রীষ্মের দেশ! এপ্রিল থেকেই তেতে উঠতে শুরু করে গোটা উত্তর ও মধ্য ভারত। শুকিয়ে যায় নদী-নালা, মাইলের পর মাইল পালটে যায় রুক্ষ-শুকনো প্রান্তরে। শুকনো বায়ু উত্তপ্ত হয়ে উঠতে থাকে ওপরে। এদিকে তার প্রত্যুত্তরে ভারত মহাসাগরের ওপরে তৈরি হতে থাকে প্রবল আলোড়ন। ওই শূন্যস্থান ভরাট করতে বিস্তীর্ণ মহাসমুদ্রের ওপর দিয়ে ধেয়ে যায় এক প্রবল শক্তিশালী হাওয়া। আবহবিদরা যার নাম দিয়েছেন দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু। আসার পথে মহাসাগর থেকে প্রবল জলীয় বাষ্প পেটে পুরে উড়ে এসে হিমালয় ও উত্তর-পূর্ব ভারতের উচ্চভূমিতে ধাক্কা প্রবল বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। যাকে বলে, বর্ষা।
গোটা গাঙ্গেয় অববাহিকার প্রাণভোমরা এই বর্ষা। স্রেফ এই হাওয়ার জোরেই পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ কৃষিজ সভ্যতার ধাত্রীভূমি হিসেবে পৃথিবীকে পথ দেখিয়েছিল ভারতবর্ষ। ইতিহাসের যুগে যুগে এই জাদুবলের মত বৃষ্টি নিয়ে আসা হাওয়াকে দেখে অবাক হয়েছে মানুষ। আরব বণিকরা নাম রেখেছিলেন মওসিম। সেখান থেকেই নাম এসেছে 'মৌসুমী বায়ু'। এবার পুণের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটিওরোলজির গবেষক নবীন গান্ধী সমীক্ষা চালিয়ে দাবি করলেন, এই বর্ষার কারণেই যুগে যুগে মধ্য এশিয়া থেকে বহিরাগত শত্রুর হামলা চলেছে ভারতে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন ভারতের পশ্চিম সীমান্তের কথা। পশ্চিমের সেই দ্বার, হিন্দুকুশ, সুলেমান টপকেই ভারতে অভিযান চালিয়েছেন পারসিক সম্রাট সাইরাস, দরায়ুস, এসেছিল কুষাণরা, হুন নায়ক তোরমান, মিহিরগুল। কখনও সাক্ষাৎ মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে সীমান্তে হানা দিয়েছেন চাঘতাই তুর্কি নায়ক চেঙ্গিজ খান। পরে গজনীর সুলতান মামুদ, মুহম্মদ ঘুরি বা ফরগানার তরুণ শাসক জহিরউদ্দিন মুহম্মদ বাবর! কেউ লুঠপাট চালিয়ে ফিরে গিয়েছেন, কেউ পাকাপাকি থেকে গিয়েছেন। ভারতীয় সভ্যতার অনন্য অংশ হয়ে উঠেছেন কণিষ্ক, শক নায়ক রুদ্রদমন, দিল্লিশ্বর কুতুবউদ্দিন আইবক বা চোখধাঁধানো রাজকীয় ঐশ্বর্যের অধিপতি মুঘলরা। কবিগুরুর কথায়, 'শক-হুন দল পাঠান মোগল, এক দেহে হল লীন'। কিন্তু নবীনের গবেষণা বলছে, এই সব'টার জন্যই দায়ী মধ্য এশিয়ার খামখেয়ালি বর্ষা।
ভূগোলের দিক থেকে দেখলে, গাঙ্গেয় অববাহিকার প্রবল শক্তিশালী বর্ষার ছিটেফোঁটাও জোটে না মধ্য এশিয়ার উষর প্রান্তে। কোথাও স্তেপ সমভূমিতে বয়ে যায় তুন্দ্রা থেকে বয়ে আসা হাড়কাঁপানো হাওয়া, কোথাও তৈগার বরফঢাকা প্রান্তর গিয়ে মিশে যায় গোবি মরুভূমিতে। প্যালিওক্লাইমেটিক বা প্রত্ন-জলবায়ুবিজ্ঞানের নানা সূত্র ধরে নবীন গান্ধীরা দেখেছেন, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ থেকে খ্রিস্টীয় দশম শতকের মধ্যে মধ্য এশিয়ার জলবায়ুতে প্রবল তোলপাড় চলেছে। যেটুকু যা বৃষ্টিপাত হয়, তাতেও বদল এসেছে। চিত্রটি মেলানোর জন্য কেরলের একাধিক গাছের বলয়জাত সাক্ষ্যও সংগ্রহ করেছেন তাঁরা। নেওয়া হয়েছে ছত্তিশগড়ের দণ্ডকারণ্য ও অন্ধ্রপ্রদেশের একাধিক প্রাকৃতিক গুহার খনিজ অবশেষ। সেখান থেকে সমীক্ষা করা হয়েছে অক্সিজেন আইসোটোপ। পাশাপাশি অক্সিজেন আইসোটোপের নমুনা নেওয়া হয়েছে ইরান, ইরাক, কিরগিজস্তান ও উজবেগিস্তান থেকে।
দেখা গিয়েছে, অনিয়মিত বৃষ্টি ও মরসুমি বর্ষার অভাবের কারণেই মধ্য এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মরু-সদৃশ পরিস্থিতি তৈরি হয়। যার ফলে সেখানকার লোকজন সরে আসতে শুরু করে বর্ষা-সমৃদ্ধ ভারতীয় অববাহিকার দিকে। কৃষিজাত ও নদীমাতৃক সভ্যতার উন্মেষে সামিল হ'ন তাঁরাও। তাঁদের গবেষণাপত্রটি 'জার্নাল অফ আর্থ সিস্টেম সায়েন্স'-এ প্রকাশিত হয়েছে।
Advertisement
Advertisement