শেষ আপডেট: 6th June 2024 18:09
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পুরো নামটা একটু খটোমটো। 'থার্মাল ইনফ্রা রেড ইমাগিং স্যাটেলাইট ফর হাই রেজোলিউশন ন্যাচরাল রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট'। তবে সংক্ষেপে নামটা বুঝতে অসুবিধে হবে না। 'তৃষ্ণা'। আসলে, আস্ত একটা কৃত্রিম উপগ্রহ। কাজ, সারা পৃথিবী জুড়ে ভূত্বক কতটা তেতে উঠল ও জলের জোগান কতটা বাড়ল-কমল, সেসবে নজরদারি চালানো।
যেভাবে ক্রমাগত বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে, তাতে পৃথিবীর গড় উষ্ণতা যাতে মাত্রাছাড়া না হয়, সেদিকেই এখন নজর তামাম দুনিয়ার। ইউরোপ থেকে এশিয়া, কার্যত একের পর এক শহর তাপপ্রবাহে পুড়ছে। দিল্লির তাপমাত্রা এমন ওপরে উঠেছিল যে, যন্ত্র ঠিক আছে কিনা দেখতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে হাওয়া অফিস। কলকাতার কাছে কলাইকুন্ডায় রেকর্ড ভাঙা উষ্ণতা ধরা পড়েছিল। কিন্তু এর কী প্রভাব পড়ছে ভূত্বকে? কতটা বাষ্পীভবন ঘটছে ভূতলের বিভিন্ন জলাভূমি থেকে?
এই প্রশ্নের উত্তর পেতেই কোমর বেঁধে নেমেছে ভারত ও ফ্রান্স। দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হতে চলেছে এই কৃত্রিম উপগ্রহ 'তৃষ্ণা'। হিমবাহ গলন, জলের ভূতল-প্রবাহ, তাপমাত্রার হেরফের, ভূপৃষ্ঠের তাপীয় নিঃসরণ, শহরাঞ্চলের 'হিট আইল্যান্ড' ও অন্যান্য নানা গুরুত্ব বিষয়ের ওপর নজরদারি চালিয়ে তথ্য দেবে তৃষ্ণা। বায়ুমণ্ডলে থাকা জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা, মেঘ ইত্যাদিও খতিয়ে দেখবে এই উপগ্রহ। ভারতের ইসরো ও ফরাসি মহাকাশ সংস্থা সিএনইএস জানিয়েছে, ২০২৫ সালে এই উপগ্রহকে উৎক্ষেপণের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। কার্যকাল ধরা হয়েছে ৫ বছর।
ইসরো সূত্রের খবর, উপগ্রহটির কার্যকরী অংশ বা 'পে-লোড'-এ দু'টো যন্ত্র থাকবে। প্রথম ভাগে থাকবে তাপীয় ইনফ্রা রেড যন্ত্র। যাতে লাগানো সেন্সর ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রার হাই রেজোলিউশন সমীক্ষা চালাবে। সূর্য থেকে আসা তাপ ভূপৃষ্ঠে প্রতিফলিত হয়ে যতটা বিভিন্ন অঞ্চলে বিকিরণ ঘটে, তারও সমীক্ষা চালাবে এই যন্ত্র। এটি বানাবে ফ্রান্স।
দ্বিতীয় ধাপে থাকবে ভারতের বানানো 'ভিজিবল নিয়ার ইনফ্রা রেড শর্ট ওয়েভ ইনফ্রা রেড' অংশ। ইসরোর বানানো এই যন্ত্রে ভূপৃষ্ঠের তাপীয় বিকিরণ বা আলবেডোর সাতটি বর্ণালি ধরা পড়বে। যে পরিমাণ তাপ প্রতিফলিত হচ্ছে, সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান উষ্ণতার সমস্যাকে চিহ্নিত করবে সেটি। এর ফলে পৃথিবীর কোনও কোনও অংশে কেন উষ্ণতার লাগামছাড়া বৃদ্ধি ঘটছে, তা কীভাবে জলাশয়কে প্রভাবিত করছে, তার ফলে জলসংকট কতটা গভীর হবে এবং কীভাবে তার মোকাবিলা করা যাবে, তার সবটাই ধরা পড়বে। এতে করে যেমন খরা বা অনাবৃষ্টি সংক্রান্ত সমস্যা বোঝা যাবে, তেমন হিমালয়ের মত বিভিন্ন 'পার্মাফ্রস্ট' বা চিরায়ত তুষারাচ্ছন্ন অংশে কী কী বদল হচ্ছে, সেটাও সমীক্ষা করা যাবে।