শেষ আপডেট: 27th June 2024 14:42
দ্য ওয়াল ব্যুরো: হকার সমস্যার সঙ্গেই কলকাতাসহ রাজ্যের বেআইনি পার্কিং নিয়েও বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘরে কড়া ভাষায় পুলিশ ও স্থানীয় একাংশের মদতে তোলা আদায়ের ব্যাপারে ধমক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সাফ বলেন, শহরে সবথেকে বেশি বেআইনি পার্কিং আজকে বিজেপির আছে।
কলকাতাসহ রাজ্যে হকারদের জবরদখলের সঙ্গেই রাস্তাঘাটে যানজট ও পথচারীদের হাঁটার একটা বিরাট সমস্যা হল যেখানে সেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা। মহানগরীর উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম যেদিকেই তাকানো যাক না কেন, দেখা যাবে রাস্তার ধারে সার করে দাঁড় করানো রয়েছে গাড়ি, মোটরবাইক। শুধু তাই নয়, বেশ কিছু বাসের স্থায়ী টার্মিনালও কলকাতার রাজপথ।
সাধারণ মানুষের বক্তব্য, এদের সঙ্গে স্থানীয় থানা এবং শাসকদলের একাংশের মাসোহারার ব্যবস্থা আছে। বড় রাস্তার থেকেও ভয়ঙ্কর অবস্থা গলিপথ ও ছোট রাস্তাগুলির, যেখানে সরাসরি পুলিশের নজর পড়ে না কিংবা স্থানীয় শাসকদলের মদতে একশ্রেণির যুবক ঘণ্টাপিছু টাকা তোলে। যার বিনিময়ে পুরসভার কোনও রসিদ দেওয়া হয় না। দিনপ্রতি এই রোজগারটি লাখ টাকার বেশি কোথাও কোথাও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা এদিন নবান্ন সভাঘর থেকে এই প্রশ্নটিও তোলেন।
মমতা এদিন বলেন, বেআইনি পার্কিং জোন নিয়েও আমার বলার আছে। এরা পুলিশ-নেতাদের টাকা খেয়ে অনেক জায়গায় ইললিগ্যাল পার্কিং জোন তৈরি করেছে। আমি যেমন আলিপুরে সম্পন্ন একটা করে দিয়েছি। সেই রকম হাতিবাগান এরিয়ার দিকে ওরকম একটা করে দিলে, মানে দক্ষিণ-উত্তর বেহালার দিকে বহুতল বা ভূগর্ভস্থ পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, হাওড়া বাজারের অবস্থাও খারাপ আমি নিজের চোখে দেখে এসেছি। ওই বাজারের প্ল্যান চেয়েছেন মমতা। এ ব্যাপারে হাওড়ার জেলাশাসক ও কমিশনারেটকে সতর্ক করেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ব্যাপারে বেকার ছেলেদের ২ বছরের জন্য ইন্টার্নশিপ দেওয়ারও প্রস্তাব দেন তিনি। তাঁর কথায়, ওরা সিরিয়াসলি খোঁজ নিয়ে খবর দেবে, কোথায় জল জমে আছে, কোথায় আবর্জনা পড়ে আছে।
মমতার স্পষ্ট নির্দেশ বেআইনি পার্কিংগুলি ভেঙে দিতে হবে। কেউ কেউ টাকা খেয়ে বেআইনি পার্কিং দিয়ে দিচ্ছে। সমস্ত বেআইনি পার্কিং ভেঙে দেওয়া হবে। কলকাতায় কতগুলো বেআইনি পার্কিং আছে তার হিসাব চান মুখ্যমন্ত্রী। শুধু কলকাতা নয়, বিধাননগর, রাজারহাট-নিউটাউন, আসানসোল-দুর্গাপুর, হাওড়ারও বেআইনি পার্কিংয়ের হিসাব তলব করেন তিনি। সেই জায়গাগুলিতে বৈধ পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় কিনা তা জানাতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে।
মমতা নির্দেশ দেন, তা সম্ভব হলে সেগুলির কেন্দ্রীয়ভাবে টেন্ডার হবে। এটা মেয়র নিজে দেখবে। এর জন্য পাঁচজনের কমিটিও গড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এই কমিটি দেখে রিপোর্ট দেবে, নিজেরাই করে দেবে না। এই কাজে পুলিশ কর্তাদেরও সঙ্গে রাখতে হবে বলে নির্দেশ দেন মমতা। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা রাগত স্বরে বলেন, যে সে টাকা খেয়ে ইললিগ্যাল পার্কিং করে দিচ্ছে। এটা জমিদারি নাকি!
ফুটপাতের উপরে কার পার্কিং হচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় নবান্নের বৈঠকে। পুলিশকে তিনি নির্দেশ দেন, স্ট্রেট বলে দাও এটা কারও জমিদারি নয়। সম্পন্নের মতো শহরে আর চার-পাঁচটা পার্কিং জোন তৈরি হলে সমস্যা মিটবে বলে দাবি করেন মমতা। বেআইনি পার্কিং কারা, কারা করেছে, কাদের টাকা দিয়ে করেছে খোঁজ নিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও তাঁর দাবি এর ডিটেলসটা তিনি জানেন। সেই জায়গা যদি উপযুক্ত হয়, তাহলে সেখানে বৈধভাবে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা গড়ে তোলার উপর জোর দেন। কিন্তু, বেআইনিভাবে টাকা তোলার বিষয়ে স্পষ্ট আপত্তি রয়েছে মমতার।