শেষ লড়াইতে আজ কাপ উঠবে কার হাতে?
শেষ আপডেট: 26th May 2024 16:37
অদ্যই শেষ রজনী।
ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগে, চিপকের মাঠে নামতে যাওয়া দুই দলের জন্য এককথায় লাগাসই কোনও বিশেষণ দেওয়া যায়?
আজ চেন্নাইতে আইপিএল ফাইনালের আগে মঞ্চ কাঁপাবে বিশ্ববিখ্যাত মার্কিন রক ব্যান্ড 'ইম্যাজিন ড্রাগনস'। অন্তত তেমনটাই জানিয়েছেন ব্যান্ডের প্রধান গায়ক ড্যান রেনল্ডস। বোধ হয় আজ ফাইনালের দুই দলের জন্য তাঁদের জনপ্রিয় গান থেকে ধার করে একটাই শব্দ লেখা যায়। 'বিলিভার'। তারা নিজেরা বিশ্বাস করেছে। বাকিদের করাতে পেরেছে।
দু'টো দল ফাইনালে উঠেছে বটে। কিন্তু খাতায়-কলমে দুই দল দুই মেরুতে। কলকাতা নাইট রাইডার্সকে দেখলে মনে হবে ক্লাসের প্রথম বেঞ্চিতে বসা ভাল ছাত্র। সারা বছর মন দিয়ে পড়াশোনা করে। ৬৫ দিনের লম্বা মরসুমে মাত্র তিনটি ম্যাচ হেরেছে। কোথাও কোনও গলদ নেই। ফিল সল্ট-সুনীল নারাইনের ওপেনিং জুটি সুপারহিট। তিনে ভেঙ্কটেশ আইয়ার যেদিন খেলার খেলে দিচ্ছেন। অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার চোট থেকে ফিরে খানিক নড়বড় করলেও পুষিয়ে দেওয়ার জন্য রমণদীপ সিংহ, আন্দ্রে রাসেল, রিঙ্কু সিংহ রয়েছেন। ধারে-ভারে সুন্দর ভারসাম্য। বোলিং-এ মিচেল স্টার্ককে নিয়ে যার যা প্রশ্ন ছিল, সব প্লে-অফের পর ধুয়েমুছে গিয়েছে।
উল্টোদিকে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ হচ্ছে ক্লাসের সেই দামাল ছাত্র, যারা পড়াশোনার চাইতে মাঠে ফুটবল পেটাতে বেশি ভালবাসে। কিন্তু অল্প সময় মন দিয়ে পড়েও ঠিক এক থেকে দশের মধ্যে থেকে যায়। একদিকে এবারের আইপিএলে রানের সংজ্ঞাটাই পাল্টে দিয়েছেন দুই ওপেনার ট্র্যাভিস হেড ও অভিষেক শর্মা। বিশ্বকাপ ফাইনালে একাই অপ্রতিরোধ্য ভারতের অশ্বমেধের ঘোড়া আটকে দেওয়া হেড-অভিষেক জুটির বিধ্বংসী দাপটে এবার ঠিক কতগুলো রেকর্ড হায়দরাবাদ ভেঙেছে, গুগল না করে বলা মুশকিল। আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এক মরসুমে কয়েক দিনের ব্যবধানে করে দিয়েছে তারা। নিজেরাই নিজেদের রেকর্ড ভেঙেছে। আড়াইশোর ওপর রান তুলেছে তিনবার, দু'শো পার করেছে ছয়বার। এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ছয় মারার রেকর্ড তাদের। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে স্রেফ পাওয়ারপ্লেতেই ১২৫ রান তুলেছিল তারা। মাত্র ৫ ওভারে ১০০ পার করা সেই ইনিংস টি২০ ক্রিকেটেই একটা ইতিহাস। লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে যেভাবে দশ ওভারের আগেই ১৬৭ তুলে দিল 'ট্র্যাভিষেক' জুটি, অধিনায়ক কেএল রাহুল অবধি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন।
অথচ এরকম বিধ্বংসী রেকর্ড গড়লেও হায়দরাবাদের নানা দুর্বলতা নানা সময়ে বেরিয়ে এসেছে। বিশেষ করে টপ অর্ডারে 'ট্র্যাভিষেক' জুটি দাঁড়াতে না পারলে দলের সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। আইডেন মার্করাম ছন্দে নেই। নীতিশ কুমার রেড্ডি, আব্দুল সামাদ এক একদিন জ্বলে ওঠেন, আবার নিভেও যান। এই পরিস্থিতিতে হায়দরাবাদ সমর্থকদের বড় ভরসার জায়গা অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। কঠিন সময়ে ঠাণ্ডা মাথায় মোক্ষম নেতৃত্ব দিতে পারেন। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির আগের যুগে স্টিভ ওয় বা রিকি পন্টিংদের দেখে যাকে 'হিমশীতল অজি মানসিকতা' ভাবা যেত। এখানে বলে রাখা ভাল, এখনও অবধি আইপিএলে তিনজন বিদেশী অধিনায়ক চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ২০০৮ সালে প্রথম আইপিএলে শেন ওয়ার্ন। বাকি দুই চ্যাম্পিয়ন, ২০০৯-এ অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ২০১৬-তে ডেভিড ওয়ার্নার। তিনজনই অস্ট্রেলিয়ার। বাকি দুইজন, ঘটনাচক্রে, হায়দরাবাদকেই চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। গিলক্রিস্টের সময় যদিও নাম ছিল ডেকান চার্জার্স। পরে ডেকান ক্রনিকল গ্রুপ থেকে মালিকানা যায় কলানিথি মারানের সান গ্রুপের হাতে।
চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের সঙ্গে অবশ্য কলকাতার পুরনো সম্পর্ক। ২০১২ সালে এই মাঠে যখন প্রথম আইপিএল জেতেন গৌতম গম্ভীরের কলকাতা, তখনও কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার। তারপর কাবেরী দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে। গম্ভীরের চুলে পাক ধরেছে, অধিনায়ক থেকে সাংসদ হয়ে আবার কলকাতার মেন্টর পদে এসেছেন। বাকিদের মধ্যে লক্ষ্মীরতন শুক্ল এখন বাংলার কোচ, জাক কালিস আইসিসির হল অফ ফেমে ঢুকে গিয়েছেন, ইউসুফ পাঠান এখন বহরমপুরে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। শুধু একজন একই রয়ে গিয়েছেন। সুনীল নারাইন। এক এবং অদ্বিতীয়। চেন্নাইয়ের মাঠে এমনিতেই রান বেশি ওঠে না। আজ লাল মাটির পিচ দেওয়া হলে তাও খানিক আশা থাকতে পারে। কিন্তু রেমালের ঝাপটানিতে শেষ অবধি বৃষ্টি নামলে সে আশাতেও জল পড়ে যাবে। তাহলে কি আজ আবার সেই স্পিন ভেলকির দ্বৈরথ দেখা যাবে আজ? একদিকে কেকেআরের নারাইনের সঙ্গে আছেন তামিলনাড়ুর বরুণ চক্রবর্তী। হাতের তালুর মত চেনেন চিপকের মাঠ। ওদিকে সানরাইজার্সের শাহবাজ আহমেদের সঙ্গে আজ আবারও পার্ট টাইমার অভিষেক শর্মাকে ব্যবহার করতে পারেন কামিন্স।
হয়ত সব দিক বিচার করলে আজ চিপকে বড় স্কোর দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা কম। যদি কেউ আশা করে বসেন, আজ 'ট্র্যাভিষেক' সাইক্লোনে আড়াইশো স্কোর পেরিয়ে যাবে, তাঁকে হয়ত হতাশই হতে হবে। তবে যদি শেষ অবধি শিশিরের প্রভাব না থাকে এবং পিচ আগের কোয়ালিফায়ারের মতোই হয়, তাহলে দু'শো রান আশা করাই যায়। কলকাতার ফিল সল্ট না থাকলেও রহমানুল্লাহ গুরবাজ দিব্যি মানিয়ে নিয়েছেন। এদিকে সারা মরসুমে সেভাবে দেখা যায়নি আন্দ্রে রাসেল-রিঙ্কু সিংহ জুটিকে। সব আলো টেনে নিয়েছেন হেড অভিষেক। কথাতেই বলে, ওস্তাদের মার শেষ রাতে। শুরুতে নারাইন গুরবাজ টাল খেয়ে গেলে রাসেলও কি আজ 'দ্রে রাস' ঝলক দেখাবেন?
অবশ্য মনে রাখতে হবে, উল্টোদিকে আছেন প্যাট কামিন্স। সারা টুর্নামেন্ট জুড়ে অপ্রতিরোধ্য একটা দলকে আমদাবাদে এক লক্ষ তিরিশ হাজার লোকের সামনে চুপসে দিয়েছিলেন। যদি এই কলকাতাকে কেউ থামাতে পারে, তবে হায়দরাবাদের নামটাই সবচেয়ে আগে থাকবে।