মাধবীলতার কোনও প্রচার কৌশলই খাটল না হায়দরাবাদে।
শেষ আপডেট: 4th June 2024 21:06
দ্য ওয়াল ব্যুরো: নিজামের রাজধানীর আনাচে-কানাচে আজও ইতিহাস কথা বলে। এককালে অন্যতম সমৃদ্ধ, আড়ম্বরে ভরা, মুঘল শাসনের বিরুদ্ধে দক্ষিণ ভারতে একরকম স্বাধীন হয়ে ওঠা হায়দরাবাদের নিজাম ছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে ধনবান ব্যক্তিদের একজন। রূপকথার মত হাওয়ায় ঘুরত তাঁর ধনসম্পদের গল্প। চিন কিলিচ খাঁ, ওসমান আলি খাঁ, আসফ জাহ, সালার জং-এর ক্ষমতার পেছনে ছিল গোলকোণ্ডা খনির অদ্বিতীয় হিরে। আজ, স্বাধীনতার আট দশক পরেও, হায়দরাবাদ তার নিজস্ব গরিমাকে ভোলেনি। একদিকে আধুনিক ভারতের অন্যতম প্রযুক্তির রাজধানী, অন্যদিকে শহর জুড়ে ছড়ানো নিজামের চোখধাঁধানো নানা প্রাসাদ।
ভোটের ময়দানেও হায়দরাবাদের কোনও তুলনা নেই। সারা দেশে কংগ্রেস বা বিজেপি যাই করুক, ১৯৮৪ সাল থেকে হায়দরাবাদের দায়িত্বে রয়েছেন সুলতান সালাউদ্দিন ওয়েইসি। স্বাধীনতা-পূর্ব আমলে হায়দরাবাদের ঘরোয়া রাজনীতিতে জন্ম নেয় তাঁর দল 'অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল-মুসলিমিন' বা এআইএমআইএম। ২০০৪ থেকে আসনে প্রার্থী হ'ন তাঁর বড় ছেলে আসাদুদ্দিন ওয়েইসি। কুড়ি বছর পার। হায়দরাবাদ থেকে আসাদুদ্দিনের তখত কেউ নড়াতে পারেননি। পুরনো মহল্লা থেকে চার মিনারের বাজার, সর্বত্রই আসাদুদ্দিনের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। রীতিমত লন্ডনের লিঙ্কন'স ইন থেকে ব্যারিস্টারি পড়া, এককালে রাজ্য স্তরে ক্রিকেট খেলা আসাদুদ্দিনের আসন টলাতে এবারে বিজেপি প্রার্থী করেছিল মহিলা নেত্রী মাধবীলতাকে। হায়দরাবাদের ইতিহাসে যিনি প্রথম মহিলা প্রার্থী।
শুরু থেকেই ওয়েসির বিরুদ্ধে বাজার গরম করতে কিছু বাকি রাখেননি মাধবীলতা। এআইএমআইএমের মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে শুরু থেকে সুর চড়িয়ে হিন্দু ভোট ধরার চেষ্টা করেছেন মাধবী। তীর ধনুক ধরার মত পোজ দিয়েছেন। ভোটের দিন বোরখা পরিহিত মহিলাদের বোরখা সরিয়ে ভোটার আইডি দেখতে চেয়ে বিতর্ক বাড়িয়েছেন তিনি। মামলা দায়ের হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। শেষ খবর পাওয়া অবধি, আসাদুদ্দিন ওয়েইসি তিন লক্ষের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন হায়দরাবাদে। তাঁর মোট প্রাপ্ত ভোট ৬,৬১,৯৮১। মাধবীলতাকে সেখানে ৩,২৩,৮৯৪ ভোটেই থামতে হয়েছে।
তেলঙ্গানা রাজ্যে মোট ১৭ লোকসভা আসন রয়েছে। গত দুই লোকসভা নির্বাচনেই তেলঙ্গানায় আসন ধরে রেখেছিল চন্দ্রশেখর রাওয়ের তেলঙ্গানা রাষ্ট্র-সমিতি, এখন যার নাম ভারত রাষ্ট্র সমিতি বা বিআরএস। কিন্তু গত বছরের ডিসেম্বরে বিধানসভা ভোটে তাঁদের হারিয়ে রাজ্যে সরাসরি ক্ষমতা দখল করেছে কংগ্রেস। বিআরএস থেকে অনেকেই দল ছেড়ে কংগ্রেসে গিয়েছেন। ফলে হায়দরাবাদে এখন লড়াইটা সরাসরি হয়ে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস ও বিজেপির। এবারের ভোটে ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে বিআরএস। একটিও আসন পায়নি তারা। ওয়েসির দাপট অবশ্য শুধু হায়দরাবাদের মধ্যেই আটকে রয়েছে। সেকেন্দ্রাবাদে যেমন বিজেপি প্রার্থী করেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডিকে। ওদিকে ভারত রাষ্ট্র সমিতির কাছে এখন লড়াই নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখার।