মায়ের হাতে অভিষেককে তুলে দিচ্ছেন ক্লাব সদস্যরা
শেষ আপডেট: 30th July 2024 17:02
দ্য ওয়াল ব্যুরো, উত্তর ২৪ পরগনা: অচেনা কেউ এখন পাড়ায় ঢুকলেই মুশকিল। কোন প্রয়োজনে এসেছে, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজারও যেন আর অবকাশ নেই। কখনও ছেলেধরা সন্দেহে তো কখনও চোর সন্দেহে শুরু হয়ে যায় গণপিটুনি। প্রাণ নিয়ে ফেরেন কেউ, কারও আর ঘরে ফেরা হয় না। সাম্প্রতিককালে এটাই ধারা। সেই আবহেই অন্য ছবি আঁকলেন হাসনাবাদের ইয়ং স্টার ক্লাবের সদস্যরা।
কয়েকদিন ধরে হাসনাবাদের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছিল বছর ২৪ এর এক যুবককে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ওই যুবক কথা বলতে পারেন না। লেখার তো প্রশ্নই নেই। নজরে আসতেই এগিয়ে আসেন স্থানীয় বাসিন্দা শাকিল নামের এক যুবক। না গাছে বা ল্যাম্পপোস্টে বেঁধে ফেলেননি অচেনা ওই যুবককে। বরং পরম মমতায় নিয়ে আসেন হাসনাবাদের ইয়ং স্টার ক্লাবে। এই ক্লাবেরই সদস্য তিনি। ক্লাবের অন্য সদস্যরা সবাই মিলে ক্লাবঘরেই আশ্রয় দেন তাঁকে। চারবেলার খাবারের বন্দোবস্ত করেন। সঙ্গে চলতে থাকে তাঁর পরিচয় জানার চেষ্টা।
হিঙ্গলগঞ্জের আহ্লাদি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষের কাছে যান তাঁরা। সব কিছু জানার পরে সুশান্তবাবু নিজের যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে পাটনায় ওই যুবকের পরিবারকে খুঁজে পান। জানতে পারেন পাটনার কঙ্করবাদ থানার অশোকনগরের বাসিন্দা ওই যুবকের নাম অভিষেক পাশোয়ান। মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে গিয়ে বিহার থেকে নিখোঁজ হয়ে গেছিলেন। বাংলায় যখন অভিষেকের ঘরের খোঁজ চলছে, তখন ২২ দিন ধরে হন্যে হয়ে ছেলেকে খুঁজেছেন তাঁর অসুস্থ মা আর ভাই। অবশেষে ২৪ বছরের নিখোঁজ ছেলের খোঁজ পেলেন সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জ থেকে।
মঙ্গলবার ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হিঙ্গলগঞ্জে এসেছিলেন বিনীতাদেবী। সঙ্গে ছিলেন অভিষেকের ভাই বরুণ। ২২ দিন বাদে ছেলেকে অক্ষত অবস্থায় ফিরে পেয়ে বারবার কপালে হাত ঠেকাচ্ছেন তিনি। বললেন, " আমার ছেলেকে খুবই ভালভাবে রেখেছিলেন ক্লাবের ছেলেরা। ওঁদের জন্যই ছেলেকে ফিরে পেলাম।"
বরুণ জানান, তাঁদের মা অসুস্থ। দাদাকে নিয়ে ওষুধ আনতে গেছিলেন। ওইদিনই রাস্তা থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় তাঁর দাদা। তারপর থেকে অনেক খুঁজেছেন কিন্তু হদিশ পাননি। অবশেষে স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে অভিষেকের খবর পান তাঁরা। সেই সূত্র ধরেই এদিন সুন্দরবনে পৌঁছেছেন দাদাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে।