ইজরায়েলি আক্রমণে ধোঁয়ায় ঢেকেছে রাফাহ। (ছবিঃ এএফপি/গেটি ইমেজেস)
শেষ আপডেট: 31st May 2024 20:55
দ্য ওয়াল ব্যুরো: অবশেষে আশঙ্কাই সত্যি হল। ইজরায়েলের সেনাবাহিনী (আইডিএফ) সরকারিভাবে জানিয়ে দিল, তারা রাফার একেবারে মধ্যিখানের দখল নিতে চলেছে।
গত কয়েকদিন ধরেই সারা বিশ্বজোড়া তীব্র জল্পনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল মিশর সীমান্ত লাগোয়া এই শহর। কার্যত তিন দিক দিয়ে ঘেরা জেলখানার মত গাজা ভূখণ্ডের একমাত্র অ-ইজরায়েলি সীমান্ত রাফার 'ক্রসিং' বা মিশর সীমান্তের চেকপোস্ট। ফলে হামাসের ৭ অক্টোবর হামলার পাল্টা ইজরায়েলের আক্রমণের শুরু থেকেই দলে দলে গাজাবাসীদের ভিড় জমতে শুরু করেছিল দক্ষিণ সীমান্তের রাফায়। ওদিকে মিশরও সাফ জানিয়েছিল, তারা রাফায় আশ্রয় নেওয়া প্যালেস্তাইনিদের নিজেদের দেশে জায়গা দিতে অপারগ। অতএব সারা বিশ্বের নানা দেশের রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে মানবাধিকার সংগঠন সকলে একযোগে আর্জি জানিয়েছিল, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যেন রাফাকে রেহাই দেন।
পাল্টা নেতানিয়াহু ও ইজরায়েল সরকারের মন্ত্রীরা জানিয়েছিলেন, রাফায় শরণার্থীদের সঙ্গেই লুকিয়ে রয়েছেন হামাসের শীর্ষ নেতারা। তাঁদের লক্ষ্য, হামাসকে একেবারে নির্মূল করা। ফলে রাফাতেও যুদ্ধের রেশ একদিন পৌঁছবেই। এদিকে রাফায় গাজা ভূখণ্ডের প্রায় সমস্ত ঘরছাড়া মানুষ আশ্রয় নেওয়ায় পরিস্থিতি চরমে। প্রায় কোনও পরিষেবা নেই, হাসপাতাল অপর্যাপ্ত, ওষুধপত্রের যোগান নেই। খোদ রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছিল, একাংশে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় মে মাসের শুরু থেকেই রাফায় বোমাবর্ষণ শুরু করেছিল ইজরায়েলি বায়ুসেনা। গত সপ্তাহে রাফায় একটি শরণার্থী শিবিরেও বোমাবর্ষণ করেছে ইজরায়েল। পরে যদিও নেতানিয়াহু বলেছেন, ওটা ভুলক্রমে হয়ে গিয়েছে।
সংবাদসংস্থা সিএনএন সূত্রে খবর, নাগাড়ে বোমাবর্ষণের ফলে রাফা শহরের একাংশ ধ্বংসস্তুপে পরিণত। অগণিত মানুষ আকাশপথে আক্রমণ থেকে বাঁচতে আশ্রয়ের খোঁজে ছুটোছুটি করছেন। পোড়া মৃতদেহ বের করে আনা হচ্ছে ধ্বংসস্তুপ থেকে। যা নিয়ে মুখ খুলেছেন খোদ মার্কিন উপরাষ্ট্রপতি কমলা হ্যারিস। জানিয়েছেন, 'ট্র্যাজিক বললেও একে প্রায় কিছুই বলা হয় না!'
যদিও এই নিয়ে এখনও অবধি ওয়াশিংটনের শীর্ষ কর্তাদের বিশেষ উচ্চবাচ্য শোনা যায়নি। আমেরিকা যদিও ঘুরপথে ইজরায়েলকে একাধিকবার রাফায় সরাসরি হামলা চালাতে নিষেধ করেছিল। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজে বলেছিলেন, ইজরায়েল রাফায় যুদ্ধ চালালে তিনি কিছু সমরাস্ত্রের রফতানি বন্ধ করে দেবেন। বলা বাহুল্য, এর কোনও কিছু দিয়েই তেল আভিভকে দমানো যায়নি।
এর আগে গাজার উত্তর সীমান্তে জাবালেয়াতে যুদ্ধ চালাচ্ছিল ইজরায়েল। আইডিএফ কর্তাদের দাবি, জাবালেয়ায় প্রায় দশ কিলোমিটার লম্বা হামাসের সুড়ঙ্গপথকে ধ্বংস করতে সফল হয়েছেন তাঁরা। হামাসের যোদ্ধাদের সঙ্গে প্রায় সম্মুখসমরে লড়তে হয়েছে ইজরায়েলি সেনাকে। যুদ্ধের পরে ৭ অক্টোবর ইজরায়েল থেকে পণবন্দি করা অন্তত সাতজনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু গাজার অসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের এক কর্তা মাহমুদ বাসাল সিএনএনকে জানিয়েছেন, 'জাবালেয়া এই মুহূর্তে একটা বিপর্যয় এলাকা। যত বাড়িঘর ছিল, একেবারে একশো ভাগ ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। কোনও জলের কল, স্কুল, হাসপাতাল, বাড়ি কিচ্ছু আর নেই। বাড়ির পর বাড়ি বাসিন্দাদের সমেৎ ইজরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। ওখানে আর লোকের বসবাস সম্ভব নয়।' জাবালেয়ার শরণার্থী শিবিরের দায়িত্বে ছিল খোদ রাষ্ট্রপুঞ্জের প্যালেস্তাইনি রিফিউজিদের জন্য গঠিত দফতর ইউনাইটেড নেশনস এজেন্সি ফর প্যালেস্তাইনিয়ান রিফিউজিস বা সংক্ষেপে ইউএনআরডব্লিউএ। এক্স হ্যান্ডলে তারাও এই আক্রমণের ব্যাপারে জানিয়েছে।
এই মুহূর্তে রাফার স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, শহরের মধ্যিখানে ইজরায়েলি সেনা ও ট্যাঙ্ক টহলদারিতে রয়েছে। গাজার উপকূল ধরে দফায় দফায় ইজরায়েলি সেনাবাহিনী প্রবেশ করছে রাফায়। হাসপাতালে প্রায় কোনও চিকিৎসা পরিকাঠামোই নেই। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬,২৮৪ জন। গত চব্বিশ ঘন্টায় মারা গিয়েছেন ৬০ জন।