শেষ আপডেট: 16th October 2019 18:30
শুনে নিন, কী বলছেন তাঁরা:
https://www.youtube.com/watch?v=A7GNk5bcn0c&feature=youtu.be পর্যটকদের উল্টো দিকে যাঁরা আছেন, অর্থাৎ ঘোড়াওয়ালারা, তাঁদের মধ্যে যেন হইহই পড়ে গিয়েছে! বহুদিন পরে একসঙ্গে এতজন এসেছেন গুলমার্গে। দীর্ঘদিন পরে খুলবে রোজগারের খাতা। কথা বলে জানা গেল, এই কয়েক মাসের রোজগারই বলতে গেলে সারাবছরের সঞ্চয় তাঁদের। অন্য কোনও ব্যবসা নেই। ঘোড়াটুকুই সব। উমর, জাভেদ, বিলালরা বলছিলেন, নিজেদের রোজগার নেই, ঘোড়াগুলিকেও ভাল করে খাওয়াতে পারছেন না। এ যেন আরও বেশি কষ্ট। পর্যটকদের আনাগোনা স্বাভাবিক হলে ঘোড়াগুলো আর একটু ভাল থাকবে। শুধু তাই নয়। কথা বলে জানা গেল, এখন যেটুকু রোজগার হচ্ছে, দিনে যদি একজন মাত্র পর্যটকও আসেন, তা হলেও সেই টাকাটুকু গুলমার্গের সমস্ত ঘোড়াওয়ালার মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। "বড় বড় নেতাদের রাজনৈতিক দরবারে কী হয়, কেন হয়, আমরা জানি না। আমরা শুধু এটা জানি, খেটে খাওয়া মানুষদের জীবন কোনও দিন ভাল ছিল না, কোনও দিন ভাল হবেও না। দুনিয়ায় অনেক লড়াই হয়েছে, অনেক ভাগাভাগি হয়েছে। অনেক সমানাধিকার এসেছে। কিন্তু গরিব আর ধনীর তফাত ঘোচেনি।"-- বলছিলেন বৃদ্ধ ঘোড়া-মালিক বিলাল হোসেন। কাশ্মীরে এই মুহূর্তে কী অবস্থা, তা নিয়ে আলাদা করে কিছু ভাবতে চান না তিনি। তাঁর কথায়, "পৃথিবীর কোনও প্রান্তই ভাল নেই।" প্রতিটা মানুষ যেখানে নিজের রোজগারের জন্য চিন্তিত, যোগাযোগহীন জীবনে বিরক্ত, এই বৃদ্ধ যেন তখন তৃতীয় নয়ন দিয়ে দেখতে পাচ্ছেন, পৃথিবীর কোনও প্রান্তই ভাল নেই! গায়ে কাঁটা দেয় যেন। মনে হয়, ঘোড়াওয়ালার ছদ্মবেশে উপত্যকায় বাস করছেন কোনও এক দার্শনিক! বিকেলের গুলমার্গ আরও বেশি বিষণ্ণ। ঘোড়াদের নিয়ে ফিরে গেছেন ঘোড়াওয়ালারা। গাড়ি নিয়ে সারা দিন অপেক্ষা করে সেগুলি ঢেকে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। দিনভর খুলে রাখার পরে ঝাঁপ ফেলছেন সোয়েটার ব্যবসায়ী। বন্ধ হল খাবারের দোকানও। কথা বলেছিলাম সকলের সঙ্গেই। না, নতুন কথা কেউ বলতে পারেননি। কিন্তু যে কথাটা সকলেই বারবার করে বললেন, "আপনি তো রিপোর্টার। বাংলার রিপোর্টার। বাংলা থেকেই তো কত মানুষ আসেন। সকলকে বলুন না আসতে। এই তো আপনি এসেছেন। কোনও অসুবিধা হয়েছে কি? আমরা আছি তো। কারও কোনও ক্ষতি হতে দেব না। কিন্তু এভাবে আমরা কী করে বাঁচব বলুন তো! খাব কী এই শীতে!" উত্তর নেই। সবুজ চাদরে মোড়া গুলমার্গে শীত নেমে আসে আচমকা। মেঘ না কি অন্ধকার, কে বেশি দায়ী এই শীতের জন্য! ঠাহর করা যায় না। কেবল বোঝা যায়, ভাল নেই কাশ্মীর। ভাল থাকার আর্তিতে সারা দেশের পর্যটকদের মুখের দিকে তাকিয়ে সে। ফেরার সময়ে রাস্তাঘাট অসম্ভব ফাঁকা। সকালে যে চনমনে ছবি ধরা পড়েছিল আমারই চোখে, তা যেন কয়েক ঘণ্টায় বদলে গেছে। মনে হচ্ছে, অনেক রাত হয়ে গেছে। অথচ ঘড়ি বলছে সন্ধে সবে সাড়ে ছ'টা। ফেরার সময়ে ফের ঢুকলাম মিডিয়া সেন্টারে। সেখান থেকে ডাল লেকে আমার থাকার হাউসবোট মিনিট কুড়ির রাস্তা। "আপনি চলে যান,অনেক সকালে বেরিয়েছেন। আমি কাজ শেষ করে অটো ধরে চলে যাব।" আমার গাড়ির চালক অর্থাৎ কাদির ভাইকে বললাম এ কথা। কারণ আমি জানি, ইন্টারনেটের যা অবস্থা, তাতে সময় লাগবে অনেকটা। অতটা সময় ওঁর থাকার কথা নয় আমার সঙ্গে। তেমন চুক্তি হয়নি। কিন্তু কাদির ভাই হেসে বললেন, "অ্যায়সে ক্যায়সে আপকো ছোড় সাকতা হ্যায় আকেলে! ইয়ে হামারা 'কাশ্মীরিয়ৎ' নেহি হ্যায় ম্যাডাম।" কাশ্মীরিয়ৎ। কাশ্মীর কেমন আছে খবর নিতে গিয়ে বারবার মনে হচ্ছে, আসল লড়াই এই কাশ্মীরিয়তের স্বার্থেই। কাশ্মীরের ছোট ছোট সংস্কার, ঐতিহ্য, সম্ভ্রম, নিয়ম, আতিথেয়তা-- সব কিছু নিয়ে গড়ে উঠেছে এই কাশ্মীরিয়ৎ। রাজনীতি, দ্বন্দ্ব, সংবিধান, যোগাযোগহীনতা, বেরোজগার জীবন-- এই সব কিছুর ঊর্ধ্বে বোধহয় এই শব্দটুকু আঁকড়েই শেষ লড়াই লড়ছেন কাশ্মীরের মানুষ। এই কাশ্মীরিয়তের কথা হবে অন্য দিন। আরও পড়ুন: https://www.four.suk.1wp.in/national-news-kashmir-valley-srinagar-dal-lake-present-situation/ পড়ুন, দ্য ওয়ালের পুজোসংখ্যার বিশেষ লেখা... https://www.four.suk.1wp.in/pujomagazine2019/%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%a4%e0%a6%ae%e0%a6%b9%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a6%86%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%9a%e0%a7%87/