শেষ আপডেট: 25th October 2023 20:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: শুধুমাত্র একদিনের রাজা-রাণী। তাও আবার হয় নাকি! শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও এই বাংলাতেই দেখা দেন একদিনের রাজা-রাণী। বহুদিন আগে রাজতন্ত্রের অবসান হলেও দশমীর ঘট বিসর্জনের পর যে ফিরে আসেন রাজা-রাণী। তাঁদের দর্শন করেন প্রজারা। পুরুলিয়ার ঝালদার হেঁসলা রাজ পরিবারে দশমীতে দেখা যায় একদিনের রাজা-রানীকে। রানী মা ও রাজাকে প্রণাম সেরে তাঁদের হাত থেকে মিষ্টিমুখ করেই এই এলাকায় শুরু হয় বিজয়া।
আজ থেকে হাজার বছর আগে রাজস্থানের যোধপুর থেকে দিগ্বিজয়প্রতাপ সিংহ দেও ঝালদার ইলুতে পা রাখেন। তখন ইলুতেই ছিল এই রাজবাড়ি। সেখানে শত্রুদের আক্রমণে এই রাজপরিবার ছন্নছাড়া হয়ে গেলে পরবর্তীকালে হেঁসলাতে শরু হয় নতুন করে রাজত্ব। রীতি মেনে আজও ওই রাজপরিবারের পুজোয় দশমীর ঘট বিসর্জনের পর ‘রাজা-রানী’র দর্শন করার রেওয়াজ চলছে।
দশমীতে ঘট জলাশয়ে ভাসান দেওয়ার পরেই দুর্গা দালানে আসেন এই রাজ পরিবারের সদস্যরা। সেখানে এই রাজ পরিবারের উত্তরপুরুষ কন্দর্পনারায়ণ সিংহ দেওয়ের মাথায় কলা বউয়ের শাড়ি নিয়ে পাগড়ির মতো করে বেঁধে দেন রাজপুরোহিত। কলা বউ রাজপরিবারে ‘মানঠাকুরণ’ নামে পরিচিত। এমনকী মা দুর্গার গলায় থাকা বেলপত্র-সহ নানান মালা ওই উত্তরপুরুষের গলায় দিয়ে তামাম হেঁসলা তাকে ‘একদিনের রাজা’ হিসাবে স্বীকৃতি দেন। রাজপুরোহিত শান্তি জল ছেটানোর পর সিদ্ধিযাত্রা করেন একদিনের রাজা। রামচন্দ্র যেভাবে বিজয় যাত্রা করেন সেভাবেই পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ দিকে রাজপুরোহিতের মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে আড়াই পা করে যান তিনি। ‘একদিনের রাজা’কে ঢাক, ঢোল বাজিয়ে, কীর্তনের মাধ্যমে দুর্গা মন্দির থেকে ঠাকুরবাড়িতে নিয়ে আসেন প্রজারা।
সারা বছর পর্দার আড়ালে থাকলেও দশমীতে রাণী মা-কে দেখতে পান প্রজারা। এদিন রাজা নিজের মাথায় থাকা পাগড়ি তাঁর স্ত্রী তথা রাণী মা অনিতা সিংহ দেও’র মাথায় পরিয়ে দেন। এরপরই শুরু হয় ‘একদিনের রাজা-রানী’-কে প্রণাম পর্ব। এরপর রাতে দুর্গা প্রতিমাকে কাঁধে করে জলাশয় বিসর্জন দেন গ্রামবাসীরা। ‘একদিনের রাজা’ কন্দর্পনারায়ণ সিংহ দেও জানিয়েছেন, এই রেওয়াজ বহুদিন ধরে চলে আসছে। যদিও প্রবীণদের পা ছুঁয়ে প্রণাম করার রীতি পছন্দ নয় তাঁরl ‘একদিনের রাজা-রানী’র আশীর্বাদ নিয়ে এলাকায় শুরু হয়ে যায় বিজয়ার উৎসব।