শেষ আপডেট: 25th October 2023 16:36
দ্য ওয়াল ব্যুরো, বাঁকুড়া: বিজয়া দশমীর দিন শুভেচ্ছা জানানোর অদ্ভূত রীতি রয়েছে বাঁকুড়ার ঝগড়াই গ্রামে। মিষ্টিমুখ করিয়ে নয়, বরং একে অপরকে কাদা ছুড়ে বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা জানান স্থানীয়রা। গত দুশো বছরের বেশি সময় ধরে এটাই গ্রামের প্রথা।
গ্রামের মধ্যে রয়েছে ঝগড়াই ভঞ্জনি দেবীর মন্দির। প্রতিবছর সেই মন্দিরের সামনেই কাদা খেলায় মেতে ওঠেন ঝগড়াই গ্রামের মানুষ। গ্রামের ৭ টি পুকুরের জল এনে মন্দিরের সামনে ঢালা হয়। সেখানে কাদা তৈরি করে দাপাদাপি শুরু করেন গ্রামবাসীরা। সকাল থেকে শুরু করে বিকেল পর্যন্ত চলে এই খেলা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই জমে উঠেছিল ঝগড়াই গ্রামের কাদা খেলা। কচিকাঁচা থেকে শুরু করে বয়স্করাও মেতে উঠেছিলেন এই খেলায়।
এক মহিলা জানান, তাঁর বিয়ে হয়েছে গোঘাটে। এই গ্রামে তাঁর বাপেরবাড়ি। শুধু কাদা খেলার জন্য তিনি দশমী পর্যন্ত বাপের বাড়িতে থাকেন। এক প্রৌঢ়া জানান, ৪০ বছর ধরে তিনি এই খেলায় অংশগ্রহণ করে আসছেন। এই কাদায় মায়ের অপার আর্শীবাদ রয়েছে বলেই তাঁর বিশ্বাস। এই জল নিয়ে গিয়ে তাঁরা বাড়িতে ছিটিয়ে দেন। তাতে সুখ, সমৃদ্ধি, আসে পরিবারে।
এই রীতি নিয়ে একাধিক ইতিহাস রয়েছে গ্রামে। অনেকেই বলেন, এই গ্রামে দশমীর দিন বক্সিরা আসেন। সেই সময় মা ঝগড়াই ভঞ্জনি তাঁর বোনেদের সঙ্গে এই এলাকায় কাদা খেলায় মেতেছিলেন। বক্সিরা সেখানে এসে উপস্থিত হলে খেলা ভঙ্গ হয়ে যায়। আবার অনেকেই বলেন, এই কাদা খেলা শুরু হয়েছিল মল্লরাজের আমল থেকে। শোনা যায়, বর্ধমানের রাজার সঙ্গে বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজার মামলা-মোকদ্দমা লড়তে যাচ্ছিলেন রাজা রঘুনাথ সিং। জঙ্গল পেরনোর সময় একটি বাচ্চা মেয়ের মধ্যে মায়ের দর্শন পান তিনি। এরপরেই মামলা জিতে যান রাজা। পুরুলিয়ায় ফিরে এসে ওই জায়গায় শুরু করেন মা ঝগড়াই ভঞ্জনি উৎসব, তখন থেকেই এই কাদা খেলা হয়ে আসছে।