শেষ আপডেট: 7th February 2024 13:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে শুরু হল টানাটানি। ‘শাড়ি তুমি কার’ এমন প্রশ্নের বঙ্কিমী উত্তর হল ‘যে পরে তাঁর’। কিন্তু কোনও বাঁকা উত্তর দিয়ে এই টানাটানির হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না, কারণ সমস্যাটা শাড়ির মালিকানা নিয়ে নয়, শাড়ির ‘মেধাস্বত্ব’ নিয়ে। শাড়ির মেধা না থাকলেও তার নির্মাতাদের সেটা রয়েছে বিলক্ষণ। এবার সেই ‘মেধা’ কোন দেশের তা নিয়েই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়ল দুই দেশ।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই ট্যাগের জন্য আবেদন করে পশ্চিমবঙ্গের হস্তশিল্প বিভাগ। এই বিশেষ বুননের তাঁতের শাড়িটি নদিয়া ও পূর্ব বর্ধমানের পণ্য হিসেবে দাবি করে আবেদনটি করা হয়েছিল। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি জেনিভার ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন (উইপো) সেই দাবিকে মান্যতা দিয়ে টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গের জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশন বা ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করে। সমস্যার শুরু সেখান থেকে।
টাঙ্গাইল শাড়ির উদ্ভব পূর্ববঙ্গ অধুনা বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে। যাঁদের হাতে এই শাড়ি দিনের আলো দেখেছিল তাঁরা প্রায় সকলেই বসাক সম্প্রদায়ের। দেশভাগের কারণে তাঁদের অধিকাংশই চলে আসেন পশ্চিমবঙ্গে। বসত বাঁধেন নদীয়ার ফুলিয়ায়, পূর্ব বর্ধমানের ধাত্রীগ্রাম, সমুদ্রগড়ে। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই জায়গাগুলিই হয়ে ওঠে টাঙ্গাইল শাড়ির কেন্দ্র। কিন্তু টাঙ্গাইল নামটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে তার উৎপত্তিস্থলের স্মৃতি।
এই শাড়িটির জিআই ট্যাগ পাওয়া নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের তৎপরতা প্রাথমিক ভাবে নজর এড়িয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। কিন্তু টাঙ্গাইলের জিআই ট্যাগ প্রাপ্তির পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের তাঁতিদের প্রতি শুভেচ্ছাবার্তা ও অভিনন্দন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশ প্রশাসন। টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে প্রতিবাদ জানান নাগরিকদের একটি অংশ। টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই ট্যাগ পশ্চিমবঙ্গ পাওয়ায় এক্স হ্যান্ডেলে প্রতিবাদ জানান সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন।
বিষয়টির সঙ্গে জাতীয়তাবাদের প্রশ্নটি জড়িত হয়ে পড়ায় স্বাভাবিক কারণেই প্রশাসনিক সক্রিয়তা বাড়ে। বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাটির একটি সমাধান সূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হবে। ফল অনুকূল না হলে বিষয়টি নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-র দ্বারস্থ হবে বাংলাদেশ।
একই পণ্যের জন্য একাধিক দেশ জিআই ট্যাগের জন্য উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে আবেদন করতে পারে। এমনকী কোনও বিতর্ক তৈরি হলে সিদ্ধান্ত বদলও হতে পারে। সেক্ষেত্রে উইপো-র নির্দিষ্ট কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেয়। সুতরাং বাংলাদেশের প্রতিবাদ ও দাবি সম্পূর্ণ বিফলে নাও যেতে পারে। একই সময়ে সুন্দরবনের মধুরও জিআই ট্যাগ প্রাপ্তি ঘটেছে এবং প্রাপক এক্ষেত্রেও পশ্চিমবঙ্গ। সুন্দরবনের বেশিরভাগই বাংলাদেশের অধীনে। টাঙ্গাইলের পর মধু নিয়ে দু’দেশের সম্পর্ক অম্ল-মধুর হয়ে উঠবে কিনা সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।