শেষ আপডেট: 16th March 2024 18:18
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রকেট পৃথিবীর মাটি ছাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই শরীরের উপর মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব টালমাটাল হবে। পৃথিবী ছাড়িয়ে শূন্যে যাওয়ার পরেই শুরু হতে পারে নানারকম শারীরিক সমস্যা। শূন্য মাধ্যাকর্ষণ বা জিরো গ্র্যাভিটিতে মাথাযন্ত্রণা বা মাইগ্রেনের সমস্যা হওয়া খুব স্বাভাবিক। মহাকাশবিজ্ঞানীরা বলছেন, ৯২ শতাংশ মহাকাশচারী পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের বাইরে যাওয়ার পরেই প্রবল মাইগ্রেনে আক্রান্ত হয়েছে। গগনযানে চাপিয়ে চার মহাকাশচারীকে পৃথিবী থেকে ৪০০ কিলোমিটার উর্ধ্বে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরো। তার জন্য প্রশিক্ষণও চলেছে। তবে মহাকাশচারীরা কী কী রোগে আক্রান্ত হতে পারেন সে বিষয়ে এখন থেকেই ভাবনাচিন্তা করছে ইসরো। সে জন্য খাবারের মেনুও বিশেষরকম রাখা হচ্ছে।
মহাকাশে ভোগাতে পারে নানা রোগ
নেদারল্যান্ডের লেইডেন ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের বিজ্ঞানী ডা. জে ভ্যান বলছেন, এতদিন অবধি যত মহাকাশ-অভিযান হয়েছে তাতে দেখা গেছে ৯২ শতাংশ মহাকাশচারী শূন্য মাধ্যাকর্ষণে গিয়ে তীব্র মাইগ্রেনে আক্রান্ত হয়েছেন। মাথাযন্ত্রণা-বমিভাব হয়েছে প্রায় ৩৮ শতাংশের।
বিজ্ঞানীর মতে, স্পেসফ্লাইট কিন্তু খুবই কঠিন। প্রশিক্ষণ যতই থাক না কেন, শরীর সেই শূন্য মাধ্যাকর্ষণের সঙ্গে সঠিকভাবে খাপ খাওয়াতে পারে না। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে শরীরের রক্তচাপের উপর প্রভাব ফেলে। আচমকা শরীরের ওজন হাল্কা হয়ে যাওয়ার কারণে রক্তচাপের ভারসাম্য বিগড়ে যায়।
ইসরোর বিজ্ঞানীরাও বলছেন, দীর্ঘ মহাকাশযাত্রা মানুষের শরীরকে দুর্বল করে দেয়। শরীরের প্রায় প্রতিটি তন্ত্র, কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম এবং মেটাবলিক সিস্টেম থেকে শুরু করে ইমিউন সিস্টেমের উপরেও প্রভাব ফেলতে পারে। স্নায়ুর কাজ দুর্বল হয়ে যায়। এমনও দেখা গেছে, দীর্ঘসময় মহাকাশে স্পেস-ওয়াক করেছেন বা স্পেস স্টেশনে মাসের পর মাস থেকেছেন এমন মহাকাশচারীরা কঠিন নার্ভের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে মহাকাশচারীরা মহাকাশে অনেক ক্ষেত্রেই ভাইরাল সংক্রমণে কাবু হন। পৃথিবী থেকেই এমন কিছু ভাইরাস শরীরের মধ্যে থেকে যায় যা মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে গেলে নানা রোগে ভোগাতে শুরু করে। শরীরে ভিতর কিন্তু সেই সব ভাইরাসগুলি দীর্ঘ দিন লুকিয়ে থাকে। মহাকাশে গেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে সেই ভাইরাসগুলির আবার সক্রিয় হতে খুব বেশি সময় লাগে না।
ইসরো জানাচ্ছে, মহাকাশচারীদের শরীর-স্বাস্থ্যের কথা ভেবে স্পেশাল ডায়েট ফুডও সঙ্গে দেওয়া হবে। খেতে হবে ডায়েট মেনেই। সেদ্ধ খাবারের সঙ্গে থাকবে নানারকম ফল। সবই প্যাকেটে সিল করে দেওয়া হবে। ইচ্ছা মতো খাবার নিয়ে যাওয়া যাবে না কোনওভাবেই। পৃথিবীর মাটি ছাড়াবার আগেই গগনযানে প্যাকেটভর্তি খাবার ভরে দেবেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। পাউচে যাবে জল ও ফ্রুট জুস।
আগে ঠিক ছিল মোগলাই বা দক্ষিণী খাবার খাওয়া যাবে গগনযানে। ভরপুর মাংসও খেতে পারবেন নভশ্চররা। তবে ইসরোর বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাকাশে শূন্য মাধ্যাকর্ষণে গিয়ে এইসব চর্বচোষ্য খাওয়া একেবারেই ঠিক হবে না। চিকেন খাওয়া যাবে তবে তা সিদ্ধ, স্যালাডের সঙ্গে মিশিয়ে। ফল ছোট ছোট টুকরো করে কেটে প্যাকেটে সিল করে দেওয়া হবে। কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট সম পরিমাণে থাকবে। পুষ্টিকর খাবার খেলে তবেই মহাকাশে দীর্ঘ সময় টিকে থাকা যাবে। শুধু প্যাকেটবন্দি খাবার নয়, খাবার গরম করার মতো যন্ত্রপাতিও পাঠানো হবে সাজিয়ে গুছিয়ে। স্টেনলেস স্টিলের বাসন আর নোংরা ফেলার বিশেষ ডাস্টবিনও যাবে গগনযানে।