ইউরো জিতলে 'ব্যাঙ্ক হলিডে' ঘোষণার দাবি ব্রিটেনে।
শেষ আপডেট: 12th July 2024 15:21
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আগেরবারের ফাইনালটার কথা ভেবে খানিক চোরাস্রোত বইছে বটে। কিন্তু তাহলেও, লন্ডন থেকে বার্মিংহ্যাম, ম্যাঞ্চেস্টার থেকে লিভারপুল সর্বত্র উৎসবের মেজাজ। জার্মানি জুড়ে ইংল্যান্ড দলের সঙ্গে এ'প্রান্ত থেকে ও'প্রান্ত ঘোরা সমর্থকরা দলে দলে পাড়ি জমিয়েছেন বার্লিনের দিকে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মারের নিরাপত্তাবাহিনীও বার্লিনের বিশ্ববিখ্যাত অলিম্পিয়াস্টেডিওনের ভিআইপি বক্সের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে রওনা হয়ে গিয়েছে।
পর পর দুইবার ইউরো ফাইনালে ইংল্যান্ড। ফুটবল ইতিহাসে কার্যত নজিরবিহীন। তার ওপর দেশের বাইরে এই প্রথম কোনও বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠল ইংল্যান্ড। স্বাভাবিকভাবেই উন্মাদনা শুরু হয়েছে বিলেতে। প্রধানমন্ত্রী স্টার্মার এখনও ওয়াশিংটনে। চলছে হাইভোল্টেজ নেটো বৈঠক। ইউক্রেন-রাশিয়া, গাজা-ইজরায়েল-সহ একাধিক ইস্যুতে এবারের নেটো কার্যত সরগরম। এদিকে স্টার্মার তার মাঝেই নিয়মিত ফুটবলে খোঁজখবর রাখছেন। সেমিফাইনালে হ্যারি কেনের গোল 'লাইভ' বসে দেখার ভিডিও এক্স হ্যান্ডলেও পোস্ট করেছেন।
ফাইনালে হ্যারি কেন, ফিল ফোডেনদের খেলা দেখতে স্টার্মার হাজির থাকবেন বার্লিনে। ইতিমধ্যেই ১০ ডাউনিং স্ট্রিট আনুষ্ঠানিকভাবে সেসব জানিয়ে দিয়েছে। স্টার্মারের সঙ্গে ফাইনাল দেখতে যাবেন ইংল্যান্ডের বাঙালি সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সচিব লিজা নন্দী। ইতিমধ্যেই ব্রিটেনের লিবারাল ডেমোক্র্যাটরা দাবি তুলেছেন, রবিবার ইংল্যান্ড ইউরো জিতলে সোমবার ছুটি ঘোষণা করতে হবে। লিব-ডেম দলের নেতা স্যার এড ডেভি বলেছেন, 'থ্রি লায়ন-রা (ইংল্যান্ড দলের পোশাকি নাম) প্রথমবার বিদেশের মাটিতে কোনও ফাইনাল খেলবে। আমরা চাই, জিততে পারলে সরকার যেন ছুটি (ব্যাঙ্ক হলিডে) ঘোষণা করে। একটা যুগান্তকারী সেলিব্রেশন করতে হবে তাহলে।' সঙ্গে যোগ করেছেন, 'বলা যায় না, ওইদিন হয়ত আবহাওয়াও বেশ ভালই থাকবে!'
বিলেতের আবহাওয়ার মুখ এই সময়টা মোটের ওপর ভারই থাকে। কিন্তু তাতে ইংরেজরা পাত্তা দিচ্ছেন না। ছুটির দিনের দাবি ক্রমশই চড়ছে। তাতে গলা মিলিয়েছেন প্রাক্তনীরাও। ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জেতানো দলের সদস্য, ফাইনালে হ্যাটট্রিক করা প্রবাদপ্রতিম তারকা স্যার জিওফ হার্স্ট ছুটির দাবিতে সুর চড়িয়েছেন।
যথারীতি এসব কথা গিয়ে পৌঁছেছে অতলান্তিকের ওপারে। প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মারের কাছে ছুটি নিয়ে দরবার শুরু করেছেন কর্তারা। কিন্তু স্টার্মার এখনই সেসব বলতে রাজি নন। ফুটবল নিয়মিত দেখেন স্টার্মার। গত ইউরো ফাইনালে ওয়েম্বলিতে হাজির ছিলেন। ওয়াশিংটনে সাংবাদিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী স্টার্মার বলেছেন, 'অবশ্যই আমরা দারুণভাবে সেলিব্রেট করব। কিন্তু আমি এখনই এসব বলে ঘেঁটে দিতে চাই না (আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু জিনক্স ইট)। আগে দল জিতুক। আমি গতবারে ওয়েম্বলিতে গিয়েছিলাম। ওটা আরও একবার দেখতে চাই না।'
স্টার্মার 'জিনক্স' না করার কথা বললেও, সমাজমাধ্যমে মোটামুটি গ্যারেথ সাউথগেটকে স্তুতিতে ভরিয়ে দিয়েছেন ভক্তরা। কোথাও বলা হচ্ছে, সাউথগেটই সর্বকালের সেরা। কোথাও সমর্থকরা সাউথগেটের ছবির নিচে 'জি-ও-এ-টি' লিখে দিচ্ছেন। কিছুদিন আগে অবধিও ইংল্যান্ডের খেলা দেখে সমাজমাধ্যমে সাউথগেটের মুণ্ডুপাত চলছিল। কিন্তু সেমিফাইনালের একটা জয়েই রাতারাতি পাল্টে গিয়েছে ছবিটা। অনেকে রীতিমত ক্ষমা-টমা চেয়েও পোস্ট করেছেন সমাজমাধ্যমে। জনৈক ব্যবহারকারী যেমন বলেছেন, 'সাউথগেট, তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম, তুমি অতুলনীয়!'
বস্তুত, ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন 'এফএ'-তেও কান পাতলে সাউথগেটের জন্য সুখবর শোনা যাচ্ছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরেই সাউথগেটের সঙ্গে ইংল্যান্ড দলের চুক্তি শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এফএ কর্তাদের মধ্যে কানাঘুষো চলছে, ইউরো ফাইনাল জিতুক বা হারুক, ম্যানেজারকে যেন সরানো না হয়। যদিও এই নিয়ে এখন কিছু বলতে নারাজ তাঁরা। মুখে কুলুপ এঁটেছে এফএ। সূত্রের খবর, সাউথগেট নিজে ম্যানেজার থাকতে রাজি না হলে গ্রাহাম পটার বা মোরিচিও পচেত্তিনোকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। কিন্তু এফএ চিফ এগজিকিউটিভ মার্ক বুলিংহ্যাম নিজে সাউথগেটের ঘোর সমর্থক। ফলে ম্যানেজার না বদলানোর দিকে হাঁটার সম্ভাবনাই বেশি।